"বায় এ মুআজ্জাল (বাকী বিক্রয়ে অধিক লাভ)" বইটির সম্পর্কে কিছু কথা: পুঁজিবাদী অর্থনীতির অন্যতম প্রধান অনুসঙ্গ হ’ল, বায় এ মুআজ্জাল। অর্থাৎ বাকী বিক্রিতে অধিক লাভ। এটি বেনামীতে সূদের ব্যবসা। যদিও সূদ কখনাে ব্যবসা নয় বরং শােষণের নাম। জোঁকের রক্ত শােষণ যেভাবে ব্যক্তি বুঝতে পারে না, এই ব্যবসার শােষণ তেমনি হয় নগদে অথবা কিস্তিতে অতি নিপুণভাবে ক্রেতাদের খুশী রেখে। পরিণামে ক্রেতাকে স্থায়ীভাবে রক্তশূন্য করা হয়। অথচ বিক্রেতার কোন ঝুঁকি থাকে না। সূদী কারবারীরা প্রতি বকেয়া কিস্তিতে নগদের সাথে যােগ করে সেটাকে পুনরায় নগদ বানায় ও তার উপরে সূদ যােগ করে। যাকে বলে চক্রবৃদ্ধি হারে সূদ। যেমন ১০০ টাকায় ১০ টাকা সূদ দিতে না পারলে ১১০ টাকাই নগদে পরিণত হবে এবং তার সাথে পুনরায় ১০ টাকা হারে সূদ যােগ হবে। কিন্তু বায়'এ মুআজ্জালে কেবল লাভই যােগ হয়। এটি চক্রবৃদ্ধি হারে সূদের চেয়ে কিছুটা সহজ। সেজন্যই অনেকে একে সূদ বলতে চান না। অথচ প্রত্যেক ঋণ, যা লাভ বয়ে আনে সেটাই হ’ল সূদ। সেটা চক্রবৃদ্ধি হারে হৌক বা না হৌক। বিভিন্ন ব্যাংক-এনজিও, সমিতি এই ব্যবসায়ে। লিপ্ত রয়েছে। মুমিন নর-নারীকে এসব থেকে সতর্ক করার জন্যই আমাদের এ ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। উক্ত বিষয়ে মাসিক আত-তাহরীক-এর মার্চ ২০১৭ (২০তম বর্ষ ৬ষ্ঠ সংখ্যাএর দরসে হাদীছ’ কলামে উক্ত শিরােনামে মাননীয় লেখকের একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। নিবন্ধটির গুরুত্ব ও প্রয়ােজনীয়তা বিবেচনা করে আমরা সম্মানিত লেখকের মাধ্যমে তা পরিমার্জিত করে বই আকারে প্রকাশ করলাম।
বাংলাদেশের অন্যতম প্রসিদ্ধ ইসলামী চিন্তাবিদ মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব। ১৯৪৮ সালের ১৫ জানুয়ারী সাতক্ষীরার বুলারাটি গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মাওলানা আহমাদ আলী বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের একজন বিখ্যাত আহলে-হাদিস আলেম ছিলেন। তাঁর শিক্ষাজীবনের শুরু সাতক্ষীরার কাকডাঙ্গা সিনিয়র মাদরাসা থেকে। এই প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি দাখিল, আলিম ও ফাযিল এবং জামালপুর থেকে ১৯৬৯ সালে কামিল পরীক্ষা কৃতিত্বের সাথে পাশ করেন। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে মাদরাসা বোর্ডে আলিম ও কামিল পরীক্ষায় অসাধারণ কৃতিত্ব দেখান যথাক্রমে ১৬তম ও ৫ম হয়ে। অতঃপর তিনি কলারোয়া সরকারি কলেজ থেকে আইএ এবং খুলনার সরকারি মজিদ কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগ থেকে মাস্টার্স পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন এবং প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অর্জন করেন। পিএইচডি গবেষণার জন্য ইংল্যান্ডে কমনওয়েলথ স্কলারশিপ অর্জন করলেও পরবর্তীতে আর যাননি। অতঃপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯২ সালে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৮০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মডার্ন ল্যাঙ্গুয়েজে খন্ডকালীন লেকচারার হিসেবে যোগদান করেন। একই বছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি ও ইসলাম শিক্ষা বিভাগে লেকচারার হিসেবে যোগ দেন। এই বিভাগ থেকেই ২০১৬ সালে অবসর নেন। তিনি লেখালেখি করেন রাজনীতি, অর্থনীতি্ সাহিত্য, রাষ্ট্রনীতি, ধর্ম প্রভৃতি বিষয়ে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পত্রিকায় তাঁর প্রকাশিত প্রবন্ধ-নিবন্ধের সংখ্যা প্রায় ৫ শতাধিক ছাড়িয়েছে। তিনি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ‘আহলে-হাদীস আন্দোলন-বাংলাদেশ’ এর প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান আমীর। মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব এর বই সমূহ মূলত ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয়, আহলে-হাদীস আন্দোলন, নবী-রাসূলদের জীবনী, ইসলামি খেলাফতের প্রাচীন ও বর্তমান অবস্থার দিকে বেশি গুরুত্ব দেয়। এই ইসলামি চিন্তাবিদ ও গবেষক পেশাগত কাজে দেশে-বিদেশে ভ্রমণ করেছেন। আরবি, ফার্সি, উর্দু ও ইংরেজি ভাষায় তাঁর দক্ষতা রয়েছে। পাঠক সমাদৃত মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব এর বই সমগ্র হলো ‘আহলে হাদীস আন্দোলন কী ও কেন’, ‘জীবন দর্শন’, ‘ইনসানে কামেল’, ’ছালাতুর রাসূল (ছাঃ), ‘তিনটি মতবাদ’ ইত্যাদি। ২০০০ সালে সৌদি সরকারের রাজকীয় মেহমান হিসেবে হজব্রত পালন করেন তিনি।