"মাল ও মর্যাদার লােভ"বইটির প্রথমের কিছু অংশ: الحمد لله وحده والصلاة والسلام على من لا نبي بعده، أما بعد : عن ابن كعب بن مالك الأنصاري عن أبيه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : ما ذبان جائعان أرسلا في عتم بأفسد لها من حرص المرء على المال والشرف لدينه হযরত কা'ব বিন মালেক আনছারী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেছেন যে, দু’টি ক্ষুধার্ত নেকড়ে বাঘকে ছাগপালের মধ্যে ছেড়ে দেওয়া অত বেশী ধ্বংসকর নয়, যত না বেশী মাল ও মর্যাদার লােভ মানুষের দ্বীনের জন্য ধ্বংসকর। জাবের (রাঃ)-এর বর্ণনায় এসেছে ৯৬, ৫ ০৪ যখন ছাগপালের রাখাল অনুপস্থিত থাকে। রাবী হলেন, তাবুক যুদ্ধ থেকে পিছিয়ে থাকা মদীনার সেই বিখ্যাত তিনজন ধনাঢ্য ও নেতৃস্থানীয় আনছার ছাহাবীর অন্যতম যারা যথার্থ কোন অজুহাত ছাড়াই জিহাদে গমন থেকে। বিরত ছিলেন। পরে তারা ভুল স্বীকার করে তওবা করেন, যা পঞ্চাশ দিন পরে কবুল হয় এবং তাদের ক্ষমা করে আয়াত নাযিল হয় (তওবা ৯/১১৮)। আলােচ্য হাদীছটি দুনিয়ার লােভে দ্বীন নষ্ট হওয়ার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর দেওয়া অত্যন্ত মূল্যবান একটি দৃষ্টান্ত। রাতের বেলা রাখালবিহীন ছাগপালের খােয়াড়ে ঢুকে দু’টি ক্ষুধার্ত নেকড়ে বাঘ যেভাবে ইচ্ছামত ছাগল মেরে নাস্তানাবুদ করে। যার হামলা থেকে কোন ছাগলই রেহাই পায় না। অনুরূপভাবে অর্থ-সম্পদ এবং নাম-যশ ও পদের লােভ মুমিনের ঈমানের জ্যোতিকে নিভিয়ে দেয় ও তার দ্বীনকে ছিন্নভিন্ন করে দেয়। হাদীছে মাল ও মর্যাদার লােভের কথা বলা হয়েছে। প্রত্যেকটিই দুই প্রকার : বৈধ ও অবৈধ।
বাংলাদেশের অন্যতম প্রসিদ্ধ ইসলামী চিন্তাবিদ মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব। ১৯৪৮ সালের ১৫ জানুয়ারী সাতক্ষীরার বুলারাটি গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মাওলানা আহমাদ আলী বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের একজন বিখ্যাত আহলে-হাদিস আলেম ছিলেন। তাঁর শিক্ষাজীবনের শুরু সাতক্ষীরার কাকডাঙ্গা সিনিয়র মাদরাসা থেকে। এই প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি দাখিল, আলিম ও ফাযিল এবং জামালপুর থেকে ১৯৬৯ সালে কামিল পরীক্ষা কৃতিত্বের সাথে পাশ করেন। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে মাদরাসা বোর্ডে আলিম ও কামিল পরীক্ষায় অসাধারণ কৃতিত্ব দেখান যথাক্রমে ১৬তম ও ৫ম হয়ে। অতঃপর তিনি কলারোয়া সরকারি কলেজ থেকে আইএ এবং খুলনার সরকারি মজিদ কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগ থেকে মাস্টার্স পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন এবং প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অর্জন করেন। পিএইচডি গবেষণার জন্য ইংল্যান্ডে কমনওয়েলথ স্কলারশিপ অর্জন করলেও পরবর্তীতে আর যাননি। অতঃপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯২ সালে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৮০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মডার্ন ল্যাঙ্গুয়েজে খন্ডকালীন লেকচারার হিসেবে যোগদান করেন। একই বছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি ও ইসলাম শিক্ষা বিভাগে লেকচারার হিসেবে যোগ দেন। এই বিভাগ থেকেই ২০১৬ সালে অবসর নেন। তিনি লেখালেখি করেন রাজনীতি, অর্থনীতি্ সাহিত্য, রাষ্ট্রনীতি, ধর্ম প্রভৃতি বিষয়ে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পত্রিকায় তাঁর প্রকাশিত প্রবন্ধ-নিবন্ধের সংখ্যা প্রায় ৫ শতাধিক ছাড়িয়েছে। তিনি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ‘আহলে-হাদীস আন্দোলন-বাংলাদেশ’ এর প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান আমীর। মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব এর বই সমূহ মূলত ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয়, আহলে-হাদীস আন্দোলন, নবী-রাসূলদের জীবনী, ইসলামি খেলাফতের প্রাচীন ও বর্তমান অবস্থার দিকে বেশি গুরুত্ব দেয়। এই ইসলামি চিন্তাবিদ ও গবেষক পেশাগত কাজে দেশে-বিদেশে ভ্রমণ করেছেন। আরবি, ফার্সি, উর্দু ও ইংরেজি ভাষায় তাঁর দক্ষতা রয়েছে। পাঠক সমাদৃত মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব এর বই সমগ্র হলো ‘আহলে হাদীস আন্দোলন কী ও কেন’, ‘জীবন দর্শন’, ‘ইনসানে কামেল’, ’ছালাতুর রাসূল (ছাঃ), ‘তিনটি মতবাদ’ ইত্যাদি। ২০০০ সালে সৌদি সরকারের রাজকীয় মেহমান হিসেবে হজব্রত পালন করেন তিনি।