‘আমার সমাজতন্ত্র’ বইয়ের ফ্ল্যাফের কথা ১৯১৭ সালের অক্টোবর বিপ্লব রাশিয়ায়। যে মার্ক্সীয় সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা করে, তা গত শতাব্দীর ত্রিশের দশকে। পুঁজিবাদী মহামন্দার প্রতিতুলনায় ছিল বিশ্বের বিস্ময়। চল্লিশের দশকে নাৎসি। সমরশক্তির সঙ্গে মহাযুদ্ধে বিজয়ী শক্তিসমূহের অগ্রণী। পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে মানবপ্রজাতির এক-তৃতীয়াংশের মধ্যে প্রসারিত এবং অক্ষুন্ন প্রবৃদ্ধির ধারক এই ব্যবস্থা তৃতীয় বিশ্বের বহু মানুষের দৃষ্টিতে মনে হয়েছিল মানবসমাজের ভবিষ্যৎ। অথচ সত্তরের দশক থেকে ব্যবস্থাটির প্রবৃদ্ধি শ্লথ হতে থাকে এবং অত্যল্প কালের মধ্যে, গত শতাব্দীর শেষ দশকের প্রারম্ভে, বিশ্বব্যাপী ব্যবস্থাটি বিলুপ্ত হয়। ব্যবস্থাটির পতন হলেও এর ঐতিহাসিক উদ্ভব এবং নাটকীয় পরাভব সম্বন্ধে প্রশ্নের নিরসন হয়নি। লেনিন ও তাঁর অনুসারীরা যে ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছিলেন, তার সঙ্গে মার্ক্সের তত্ত্ব ও মতাদর্শের কতটা সামঞ্জস্য ছিল? বাস্তবে বিদ্যমান সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থাটি বাইরের আক্রমণে নয়, অন্তঃস্থিত অসংগতির কারণে বিলুপ্ত হয়েছে। এই অসংগতির চরিত্র ও ব্যাখ্যা কী? মার্ক্সীয় সমাজতন্ত্র গঠনের কোনো বিকল্প নকশার অস্তিত্ব ছিল কি? যারা সমতা, প্রবৃদ্ধি ও সামাজিক পরিবর্তনের লক্ষ্যে সমাজতন্ত্রের অনুসারী হয়েছিলেন, তাঁদের সামনে বিকল্প কী? পুঁজিবাদকে অবশ্যম্ভাবী বলে গ্রহণ করা? নাকি সমতার লক্ষ্যে বিকল্প সমাজতন্ত্রের সন্ধান? গ্রন্থটিতে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর অনুসন্ধান করা হয়েছে। সূচিপত্র প্রথম অধ্যায় : উপক্রমণিকা -১৩ দ্বিতীয় অধ্যায় : কার্ল মার্ক্সের অর্থনীতিতত্ত্ব ও সমাজতন্ত্র-ভাবনা -২৩ প্রাক্-মার্ক্স সমাজতন্ত্র-ভাবনা -২৪ মার্ক্সের অর্থনৈতিক তত্ত্ব -২৮ সমাজতন্ত্রের রূপরেখা সম্পর্কে মার্ক্সের ভাবনা -৩৫ পরিশিষ্ট : মূল্য, উদ্বৃত্ত মূল্য এবং মুনাফার হার -৪৩ তৃতীয় অধ্যায় : বিদ্যমান সমাজতন্ত্র -৪৬ লেনিন ও অক্টোবর বিপ্লব -৪৯ বিদ্যমান সমাজতন্ত্রের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য -৫৪ একদলীয় শাসন -৫৪ মালিকানা পদ্ধতি -৫৫ বাজার বিনিময়ের অবসান এবং কেন্দ্রীভূত পরিকল্পনা -৫৬ কৃষির যৌথায়ন ও প্রাথমিক পুঁজি সঞ্চয় -৬১ অন্যান্য চারিত্রিক বৈশিষ্ঠ্য -৬৮ চতুর্থ অধ্যায় : বিদ্যমান সমাজতন্ত্রের পতন -৭৩ বিদ্যমান সমাজতন্ত্রের কার্যসম্পন্নতার মূল্যায়ন -৭৪ বিদ্যমান সমাজতন্ত্রের পতনের কারণ -৮২ নৈপুণ্য বিধানের বিকল্প ব্যবস্থার অন্বেষণ -৮৫ মালিকানা ও নৈপুণ্য -৮৯ বিদ্যমান সমাজতন্ত্র ও গণতন্ত্র -৯২ পতনের বিভিন্ন পথ -৯৪ পঞ্চম অধ্যায় : পুঁজিবাদ কি মানবসমাজের ভবিতব্য? -৯৭ মার্ক্সের পুঁজিবাদ -৯৮ নানা পুঁজিবাদের উদ্ভব -৯৯ পুঁজিবাদ ও বৈষম্য -৯৯ পুঁজিবাদ ও সংকট -১০৬ পুঁজিবাদী নৈপুণ্যের আত্মস্বীকৃত সীমাবদ্ধতা -১১৪ পুঁজিবাদ ও গণতন্ত্র -১১৭ বিভিন্ন পুঁজিবাদের তুলনামূলক গ্রহণযোগ্যতা -১১৯ উন্নয়নশীল দেশের পুঁজিবাদ -১২৩ ষষ্ঠ অধ্যায় : পথসন্ধান : আমার সমাজতন্ত্র -১২৫ উন্নয়নশীল দেশের অনুকরণযোগ্য উদাহরণ -১২৮ আমার সমাজতন্ত্রের রূপরেখা -১৩১ ব্যক্তি, সামষ্টিক ও রাষ্ট্রীয় মালিকানা ১৩১ বাজার বিনিময় ব্যবস্থা ১৩৬ কর্মসংস্থান ১৩৭ অন্যান্য পুনর্বণ্টন -১৪৩ সামাজিক সুরক্ষা -১৪৫ রাষ্ট্র ও গণতন্ত্র -১৪৬ প্রস্তাবিত ব্যবস্থাটি কোন অর্থে সমাজতন্ত্র? -১৪৮ গ্রন্থ ও রচনার তালিকা -১৫১ নির্ঘণ্ট -১৫৩
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এমএ (১৯৫৯) এবং কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি (১৯৬৬)। পাকিস্তান (পরে বাংলাদেশ) ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট ইকনমিকসে গবেষণা পরিচালক এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নাফিল্ড কলেজের ফেলো হিসেবে গবেষণায় কর্মজীবন শুরু। স্বাধীন বাংলাদেশের পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের প্রধান হিসেবে প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার প্রযুক্তিগত কাঠামো রচনা করেন। শিক্ষকতা প্রধানত লন্ডন স্কুল অব ইকনমিকস এবং ক্যালিফোর্নিয়া (রিভারসাইড) বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসেবে। পেনসিলভানিয়া স্টেট, কলাম্বিয়া এবং অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বল্পকালীন ও অতিথি অধ্যাপক ছিলেন। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা ও বিশ্বব্যাংকে অর্থনীতিবিদ হিসেবে কাজ করেছেন এবং এই সংগঠনসহ নানা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি হিসেবে ২০টির বেশি দেশে উপদেষ্টার ভূমিকায় কাজ করেছেন। পরিকল্পনা-পদ্ধতি, প্রকল্প মূল্যায়ন, সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি, কৃষিব্যবস্থা, কর্মসংস্থান, বৈষম্য ও দারিদ্র্য সম্বন্ধে তাঁর গবেষণাগ্রন্থ ও প্রবন্ধ আন্তর্জাতিক প্রকাশনায় ও সাময়িকী কর্তৃক প্রকাশিত হয়েছে।