"হুমায়ুন আজাদ আমার বাবা" বইটির সম্পর্কে কিছু কথা: ড. হুমায়ুন আজাদ একটি নাম— একটি ইতিহাস। তিনি বহুমাত্রিক জ্যোতির্ময়। তিনি ছিলেন একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, সমালােচক, গবেষক, ভাষাবিজ্ঞানী, কিশােরসাহিত্যিক, রাজনৈতিক ভাষ্যকার, প্রথাবিরােধী লেখক এবং একজন মেধাবী অধ্যাপক। তিনি ছিলেন এমন একজন ব্যক্তি যিনি সারাজীবন পড়েছেন, পড়িয়েছেন এবং লিখেছেন। এর বাইরে আর কিছুই তিনি করেননি। তিনি তার লেখনীর মাধ্যমে বরাবরই সমাজবিরােধী ধর্মান্ধ মৌলবাদী অপশক্তির যে ভয়াবহ রূপ তা তুলে ধরেছেন। তিনি ছিলেন ন্যায় ও প্রগতির পক্ষে একজন আপােষহীন মানুষ। মুক্তবুদ্ধি ও মুক্তচিন্তার প্রতীক। সর্বগুণসম্পন্ন এই মানুষ সকলের কাছে হয়তাে নয় কিন্তু অনেকের কাছেই ছিলেন একজন প্রিয় লেখক। অগাধ শ্রদ্ধার পাত্র এই মানুষটির সাথে আমার ছিল গভীর রক্তের সম্পর্ক বাবা ও মেয়ের। বাবার সাথে জীবনের ২৭টি স্মৃতিময় বছর পাড়ি দিয়েছি। কখনাে সুখে, কখনাে আনন্দে আবার কখনওবা মান অভিমানে ঘরের খুব কাছের মানুষ হিসেবেই। বাবাকে দেখেছি বলেই তার মতাে পণ্ডিতকে নিয়ে লিখতে সাহস পেয়েছি। তার ভক্তরা কাছের মানুষের কাছ থেকে তাঁর জীবন বয়ান শুনতে চায় বলেই মূলত আমার এই বই-এর অবয়বে লেখার স্পর্ধা জানি না কতটা সার্থক হয়েছি। পাঠকই তা মূল্যায়ন করবেন। খুব সাধারণ আটপৌঢ়ভাবেই বাবার জীবনের বিভিন্ন দিক আমি তুলে ধরেছি।
প্রথাবিরোধী বহুমাত্রিক লেখক অধ্যাপক ড. হুমায়ুন আজাদ ও বিআইআইএসএসে এর সাবেক কর্মকর্তা লতিফা খানমের জ্যেষ্ঠ কন্যা মৌলি আজাদ । শিল্প সাহিত্য সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে বেড়ে ওঠা মৌলি মৌলিক ও গবেষণামূলক রচনার প্রতি প্রতিনিয়ত আকর্ষিত হন । অবিরাম মগ্ন থাকেন মনন ও সৃজন প্রক্রিয়ায় । নিরলস ভাবে গল্প প্রবন্ধ রচনার পাশাপাশি তিনি কর্মজীবনে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের উপ-পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনে একনিষ্ঠ । জীবন ও কর্ম দুটোই তার কাছে সমান গুরুত্বপূর্ন ও তাৎপর্যমন্ডিত । মৌলির এ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য তাকে নি:সন্দেহে মহিমান্বিত করে । এনে দেয় সামাজিক স্বীকৃতি । গুণী এ লেখক ইতোমধ্যেই সাহিত্য জগতে তার আগমনকে উজ্জল করেছে । অগণিত পাঠকের ভালবাসায় সিক্ত মৌলি আজাদ এর প্রথম স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ হুমায়ুন আজাদ আমার বাবা’ প্রথম আলোর সেরা ১০টি গ্রন্থে’র অর্ন্তভুক্তিসহ ‘নাট্যসভা’ পুরস্কারে ভ’ষিত হয়েছে । এ পর্যন্ত মৌলির প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৮টি ।২০১৮ সালে মৌলি সাহিত্যে কলকাতার ‘বিশেষ বঙ্গবন্ধু পুরস্কার ’ পান ।