প্রতিটি মানুষের নিয়তি রয়েছে। তাকে ওই নিয়তির পথে চলতেই হবে। যে ওই পথে চলবে এবং চূড়ান্ত সাফল্য অর্জন করতেই হবে। এই পথচলা ফুলবিছানাে পথে হবে না। নানা সমস্যা আসবে, সেগুলাে অতিক্রম করতে হবে। তিনি দেখিয়েছেন যে ভালােবাসা, অন্তরাত্মার ডাকে এগিয়ে যাওয়ার পথে কোনাে কিছুই বাধা নয়। আর এগিয়ে গিয়ে যে প্রাপ্তি হবে তা অনেক বেশি। তা এতই বেশি যে কল্পনাকেও হার মানাবে। অ্যালকেমিস্ট ওই স্বপ্নপূরণের পথেই ছুটতে তাগিদ সৃষ্টি করে। প্রথমে জানতে হবে আমাদের মনের গভীরে থাকা স্বপ্নটি কী। তা জানা কঠিন কোনাে কাজ নয়। একেবারে শৈশবেই স্বপ্নটি মানুষকে তাড়া করতে থাকে, স্বপ্নপথে ছুটতে উদ্বুদ্ধ করতে থাকে। কেউ কেউ বুঝে চলতে শুরু করে, কেউ বােঝেই না বা বুঝলেও নানা কষ্ট আর জটিলতার কথা ভেবে ঝুঁকি নিতে চায় না। তারা ব্যর্থই হয়ে থাকে। আবার কেউ কেউ কিছু দূর গিয়ে থমকে যায়, সামান্য প্রলােভনেই পথ হারায় বা পথ থেকে সরে যায়। সাময়িক আত্মতৃপ্তি সে পেলেও চুড়ান্তভাবে বঞ্চিত হয় এবং তা তাকে বাকি জীবন তাড়া করতে থাকে। আর দুঃস্বপ্ন তার সব সুখ কেড়ে নেয়।
অ্যালকেমিস্ট আমাদের শেখায়, স্বপ্ন কোনাে প্রতিবন্ধকতাই অজেয় নয়। যেকোনাে বয়সে, যেকোনাে পরিস্থিতিতে, যেকোনাে সময়ে মানুষ তার স্বপ্নের পথে চলতে পারে, নিয়তির কাছে পৌছাতে পারে। আর এর মাধ্যমেই তার জীবনকে সে স্বার্থক করতে পারে। অ্যালকেমিস্টের স্বার্থকতাই এখানে। আর এ কারণেই বইটি বেস্ট সেলার ।
ব্রাজিলিয়ান ঔপন্যাসিক পাওলো কোয়েলহো ডি’সুজা ১৯৪৭ সালের ২৪ আগস্ট দেশটির রাজধানী রিও ডি জেনেরিওতে জন্মগ্রহণ করেন। একই শহরে তার শিক্ষাজীবনের শুরু এবং বেড়ে ওঠা। আইন বিষয়ে কিছুদিন পড়াশোনার পর ভ্রমণের নেশায় তা আর শেষ করতে পারেননি। ঐ সময়টা ভবঘুরের ন্যায় ঘুরে বেড়িয়েছেন মেক্সিকো, উত্তর আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, চিলিসহ ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে। এর পরপরই ছোটবেলার স্বপ্ন বই লেখাকে বাস্তবে রূপ দেন। ১৯৮২ সালে ‘হেল আর্কাইভস’ নামক বই দ্বারা সাহিত্য অঙ্গনে প্রবেশ করেন। তবে এই প্রবেশ আকর্ষণীয় ছিলো না। এমনকি দ্বিতীয় প্রকাশিত বই ‘প্রাক্টিক্যাল ম্যানুয়েল অব ভ্যাম্পায়ারিজম’ তার নিজেরই অপছন্দের তালিকায় ছিলো। ১৯৮৭ সালে ‘পিলগ্রিমেজ’ এর পর ১৯৮৮ সালে প্রকাশ পায় তার আরেক বই ‘দ্য আলকেমিস্ট’। পাওলো কোয়েলহো এর বই হিসেবে ‘দ্য আলকেমিস্ট’ বইটিই মূলত কোয়েলহোর লেখক-জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। তবে ‘৮৭ সালে বইটি প্রকাশিত হয়েছিলো ব্রাজিলের একটি ছোট প্রকাশনা সংস্থা থেকে, যারা ন’শোর বেশি কপি ছাপাতে নারাজ ছিলো। ১৯৯৩ সালে একই বই আমেরিকার বিখ্যাত প্রকাশনী হারপার কলিন্স থেকে প্রকাশিত হলে পাঠক মহলে হুলুস্থুল পড়ে যায়। বইটি এখন পর্যন্ত মোট ৮০টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে, যা পাওলো কোয়েলহো এর বই সমূহ এর মাঝে অনন্য। কোয়েলহোর কাহিনীগুলোর বিশেষত্ব হলো তার কল্পনাশক্তির জাদুকরী মোহ। কোনো সরল গল্প দ্বারা তিনি গভীর জীবন দর্শনবোধ পাঠকদের মাঝে সঞ্চালন করতে চান, এবং সফলতার সাথে করেও এসেছেন। পাওলো কোয়েলহো এর বই সমগ্র-তে স্থান পাওয়া উপন্যাসগুলোর মাঝে ‘দ্য আলকেমিস্ট’, ‘ব্রিদা’, ‘দ্য ডেভিল এন্ড মিস প্রাইম’, ‘দ্য জহির’, ‘দ্য ভ্যালকাইরিস’ উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও ‘দ্য মাডি রোড’, ‘দ্য রং গিফট’, ‘দ্য জায়ান্ট ট্রি’, ‘দ্য ফিশ হু সেভড মাই লাইফ’, ‘আই উড র্যাদার বি ইন হেল’, ‘রিবিল্ডিং দ্য ওয়ার্ল্ড’ এর মতো ছোটগল্পগুলোতেও দর্শনের প্রমাণ মেলে, যা পাঠকদের গভীরভাবে ভাবতে শেখায়। পাওলো কোয়েলহোর আরেক পরিচয় তিনি গীতিকার। বেশ কিছু জনপ্রিয় ব্রাজিলীয় গানের জনক তিনি।