প্রথমেই তারা অঙ্ক কষতে শুরু করে। একেকজন একেক অঙ্ক নিয়ে বসে। কে সবার আগে শেষ করতে পারে সেই প্রতিযোগিতা। তারপর শুরু হয় ইংরেজি পড়া। পরি দল সব জনপ্রিয় ইংরেজি গানের সুরে পাঠ্য বিষয়ের শব্দগুলো বসিয়ে সুরে সুরে পড়তে থাকে। গান শেষে সবার হাসিমাখা করতালি। তারপর বাংলা। বাংলাও তারা পড়তে থাকে গানের সুরে সুরে। সাফওয়ান মুগ্ধ হয়ে পরি দলের হোমওয়ার্ক খেলা দেখতে থাকে। মাঝে মাঝে নিজেও সুর মেলায়। তারপর তারা শুরু করে চিত্রাঙ্কন। তারা আশপাশের সব আসবাবের ছবি আঁকে মনোযোগ দিয়ে। একজন তো সাফওয়ানের ছবিও এঁকে ফেলে হুবহু। এরই মধ্যে আম্মু ডাক দিলেন, খেতে এসো! অগত্যা পরিদল চলে যাবার জন্য তৈরি হলো। যাবার সময় বলে গেল, আজ থেকে যদি প্রতিদিন তুমি এমন করে হোমওয়ার্ক নিয়ে নিয়মিত খেলাধুলা করো তাহলে আগামী মাসে আমরা আবার আসব। সাফওয়ান রাজি হলো।
এরপর থেকে সাফওয়ানের শিক্ষকেরা রীতিমতো অবাক। যে সাফওয়ানের কাছ থেকে কখনো তারা হোমওয়ার্ক ঠিকমতো বুঝে পেতেন না, সেই সাফওয়ান সবার আগে হোমওয়ার্ক বুঝিয়ে দেয়। যে সাফওয়ানের রেজাল্ট কখনো ভালো হতো না, সেই সাফওয়ান পরীক্ষায় রীতিমতো প্রথম হওয়া শুরু করে।
সাফওয়ানের বাবা-মাও কম অবাক হননি। সাফওয়ান এত মজা করে হোমওয়ার্ক শেষ করে যে তারা দুজন সাফওয়ানের পাশে বসে তার হোমওয়ার্ক খেলা দেখতে থাকেন। আর সাফওয়ানও খুব মজা করে হোমওয়ার্ক করতে থাকে। মাঝে মাঝে ডিনারের সময় হয়ে গেলে মা যখন খেতে ডাকেন তখন সাফওয়ান বিরক্ত হয়ে বলে ওঠে, ‘উফ! সময় কেন যে এত দ্রুত শেষ হয়ে যায়!’
আর হ্যাঁ, সেই পরিদল কিন্তু তাদের কথা আর রাখেনি। তারা আর কখনো সাফওয়ানের সাথে খেলতে আসেনি। মাঝে মাঝে সাফওয়ান ভাবতে থাকে সেদিন কী সত্যি সত্যি পরিরা এসেছিল, নাকি ওটা ছিল তার কল্পনা!
কয়েস সামী। ছেলেবেলা থেকেই বইয়ের সাথে তার নিবিড় বন্ধুত্ব। সাহিত্যকে ভালোবেসে পড়েছেন সিলেটের এমসি কলেজের ইংরেজিতে। পড়তে পড়তে লেখালেখিতে ঝুঁকে পড়েন একসময়। আনন্দ খুঁজে পান গল্প বলায়। সহজ সরল ভাষায় গল্প বলাতেই পছন্দ করেন বেশি। তার লেখা লাকি থার্টিন গল্পগ্রন্থটি দেশ পান্ডুলিপি পুরস্কার অর্জন করে নেয় ২০১৯ সালে। অন্যান্য বইগুলির মধ্যে রয়েছে- ঝরিছে নয়নবারি, পেনসিল ভূত, মোটুপাতলুর বন্ধু সাফওয়ান। পেশায় ব্যাংকার হওয়ায় লেখালেখির জন্য সময় খুঁজে বের করা কষ্টকর হয়ে পড়ে অনেক সময়। তবু তিনি সময় বের করে নেন- নেশার টানে, ভালোবাসার টানে।