"ভৌতিক রক্তপিপাসা"বইয়ের পেছনের কভারে লেখা:নাজমা বেগম ঘুমিয়ে ছিলেন। মাঝরাতে তীব্র একটা ব্যথায় তিনি চোখ খুলে তাকালেন। যা দেখলেন তা এক কথায় অবিশ্বাস্য। তাঁর সামনে বসে আছে রুপা আর জরিনা। দুজনের চেহারাই অস্বাভাবিক, ভয়ংকর। তিনি রুপা আর জরিনাকে প্রতিদিনই দেখেন। কিন্তু আজ দুজনকেই অচেনা লাগছে। ওদের উদ্দেশ্যটা তিনি ঠিক বুঝতে পারলেন না। তাই জিজ্ঞেস করতে চাইলেন, ব্যাপার কী? কিন্তু তিনি কথা বলতে পারলেন না। তাঁর মুখটা শক্ত করে বেঁধে রাখা হয়েছে। তিনি এবার উঠে বসতে চাইলেন। তাও পারলেন না। কারণ তাঁর হাতদুটোও শক্তভাবে মাথার পিছনে খাটের সাথে বাঁধা। তাকে যে রুপা আর জরিনাই বেঁধে রেখেছে বুঝতে পারলেন তিনি। আরও বুঝতে পারলেন, তিনি মহাবিপদে আছেন। তাই নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে ছটফট করে উঠলেন। তার এই ছটফটানি দেখে বাঁকা হাসি হাসল রুপা। তারপর যা ঘটল তা আরও ভয়ংকর, আরও পৈশাচিক । রুপার বাম হাতে পেঁচিয়ে-থাকা স্বচ্ছ একটা নল। যার অগ্রভাগে কি না একটা ফাপা সুচ, তার শরীরের উপর দিয়ে সাপের মতাে বেয়ে বেয়ে এগিয়ে আসতে শুরু করল। তারপর হঠাই দ্রুত প্রবেশ করল হাতের রক্তনালির মধ্যে। আর তাতে তাজা টাটকা রক্ত মুহূর্তের মধ্যে স্বচ্ছ নলের মধ্য দিয়ে ছুটে গেল রুপার মুখে । আর রুপা সেই রক্ত মহাপ্তির সাথে পান করতে শুরু করল। দুজন জলজ্যান্ত মানুষকে এভাবে নিজের শরীর থেকে রক্তপান করার মতাে বীভৎস দৃশ্যটা সহ্য করতে পারলেন না নাজমা বেগম। জ্ঞান হারালেন তিনি। এদিকে রুপা আর জরিনা রক্তপানের ফাকে ফঁাকে একটু পরপর বলতে থাকল—জয় হােক রক্তের, জয় হােক রক্তকের, জয় হােক আমাদের রক্তপানের।
লেখক মোশতাক আহমেদ এর জন্ম ১৯৭৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর, ফরিদপুর জেলায়। পেশায় একজন চাকুরিজীবী হওয়া সত্ত্বেও লেখালেখির প্রতি তাঁর আগ্রহ প্রচুর। এ পর্যন্ত সায়েন্স ফিকশন নিয়েই সবচেয়ে বেশি লিখেছেন। বাংলা সায়েন্স ফিকশন জগতে তার পোক্ত একটি অবস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও মোশতাক আহমেদ এর বই সমূহ ভৌতিক, প্যারাসাইকোলজি, মুক্তিযুদ্ধ, কিশোর ক্ল্যাসিক, ভ্রমণ ইত্যাদি জঁনরাতে বিভক্ত। যেকোনো একটি বিষয়ে সীমাবদ্ধ না থেকে তিনি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখতেই পছন্দ করেন। মোশতাক আহমেদ এর বই সমগ্র সংখ্যায় পঞ্চাশ পেরিয়েছে। তাঁর প্রথম প্রকাশিত বই ছিল ‘জকি’। এটি একটি জীবনধর্মী উপন্যাস। ২০০৫ সালে এটি প্রকাশিত হয়। মোশতাক আহমেদ পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রথমে ফার্মেসি বিভাগে, পরে আইবিএতে। পরবর্তী সময়ে ইংল্যান্ডের লেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অপরাধবিজ্ঞান থেকে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন। পড়াশোনার খাতিরেই হোক বা কর্মজীবনের তাগিদেই হোক, ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অনেক ভ্রমণ করেছেন। সেসব ভ্রমণকাহিনীর আশ্রয়ে তাই ক্রমেই সমৃদ্ধ হয়েছে তাঁর লেখা ভ্রমণকাহিনীগুলোও। তাঁর সৃজনশীল কর্মকাণ্ড শুধু লেখালেখিতেই গণ্ডিবদ্ধ নয়। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাজারবাগের পুলিশ ও পাকিস্তানী হানাদারবাহিনীর মধ্যে একটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। সে ঘটনার ওপর ভিত্তি করে মোশতাক আহমেদ ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রতিরোধ’ নামে একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন। এটি ২০১৩ সালের মার্চ মাসে মুক্তি পায়। তাঁর পুরস্কারের ঝুলিতে এ পর্যন্ত রয়েছে ২০১৩ সালের কালি ও কলম সাহিত্য পুরস্কার, ২০১৪ সালের ছোটদের মেলা সাহিত্য পুরস্কার, ২০১৪ সালের কৃষ্ণকলি সাহিত্য পুরস্কার, ২০১৫ সালের সিটি আনন্দ আলো পুরস্কার এবং সর্বশেষ সংযুক্তি হিসেবে সায়েন্স ফিকশন বিষয়ে বিশেষ অবদান রাখার জন্য বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০১৭।