“শ্রেষ্ঠ প্রবন্ধ" বইটির ফ্ল্যাপ এর লেখাঃ বিস্ময়কর এক কাব্যপ্রতিভা নিয়ে জন্মেছিলেন কবি জীবননান্দ দাশ। বােধের যে জগৎকে তিনি নতুন এক ভাষায় মূর্ত করে তুলেছিলেন সেই বােধের জগৎ ও কাব্যভাষণ আমাদের ভাবনাকে আনন্দ-বেদনায় ও চমৎকারিত্বে অভিভূত করে তােলে। কবি জীবনানন্দের এই কাব্যপ্রতিভাই মূর্ত হয়ে উঠেছে তার প্রবন্ধ-সাহিত্যে। বিশেষ করে কবিতা নিয়ে তার ভাবনার যে জগৎ রচিত হয়েছে কবিতার কথা’ নামক গ্রন্থে তার। কোনাে তুলনা চলে না। তিনিই প্রথম বললেন যে, কবিতার দেহ ও আত্মার মধ্যে লুকিয়ে থাকে অনন্ত এক সময়হীন সময়ের আবেদন। মুখরতার মধ্যে নয়, শব্দময়তার মধ্যে নয়, বরং কবিতার যে-টুকু নির্জনতা, ভাবনার মধ্যে ডুব দিয়ে যেটুকু তার আত্মগােপন সেখানেই কবিতা সবচেয়ে গভীরভাবে মুখর, সেখানেই কবিতা শব্দহীনতার মধ্যে শব্দময়। এই হলাে জীবনানন্দীয় কাব্যভাবনার সারাৎসার। আর এই দৃষ্টিকোণ ও দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে তিনি বিচার করেছেন কবিতার উৎকর্ষ-অপকর্ষ ও কবিতার চিরকালিনতা ও ক্ষণস্থায়িত্বেও স্বরূপকে। জীবনানন্দ দাশের এই কাব্যভাবনা আমাদের প্রেরণার উৎসধারা। কবিতাবিষয়ক প্রবন্ধগুলাের পাশাপাশি শিক্ষা-দীক্ষা, পাশ্চাত্যসাহিত্য সহ বহুমাত্রিক চিন্তার পরিচয় রয়েছে তাঁর প্রবন্ধগুলােতে।
জন্ম-(ফেব্রুয়ারি ১৮, ১৮৯৯ - বঙ্গাব্দ ফাল্গুন ৬, ১৩০৫ - কার্তিক ৫, ১৩৬১) ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রধান আধুনিক বাঙালি কবি, লেখক, প্রাবন্ধিক এবং অধ্যাপক। তাকে বাংলাভাষার "শুদ্ধতম কবি" বলে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। তিনি বাংলা কাব্যে আধুনিকতার পথিকৃতদের মধ্যে অগ্রগণ্য। মৃত্যুর পর থেকে শুরু করে বিংশ শতাব্দীর শেষ ধাপে তিনি জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করেন এবং ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে যখন তার জন্মশতবার্ষিকী পালিত হচ্ছিল ততদিনে তিনি বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয়তম কবিতে পরিণত হয়েছেন। তিনি প্রধানত কবি হলেও বেশ কিছু প্রবন্ধ-নিবন্ধ রচনা ও প্রকাশ করেছেন। তবে ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে অকাল মৃত্যুর আগে তিনি নিভৃতে ২১টি উপন্যাস এবং ১০৮টি ছোটগল্প রচনা গ্রন্থ করেছেন যার একটিও তিনি জীবদ্দশায় প্রকাশ করেননি। তাঁর জীবন কেটেছে চরম দারিদ্রের মধ্যে। বিংশ শতাব্দীর শেষার্ধকাল অনপনেয়ভাবে বাংলা কবিতায় তাঁর প্রভাব মুদ্রিত হয়েছে। রবীন্দ্র-পরবর্তীকালে বাংলা ভাষার প্রধান কবি হিসাবে তিনি সর্বসাধারণ্যে স্বীকৃত। তাকে বাংলাভাষার শুদ্ধতম কবি অভিধায় আখ্যায়িত করা হয়েছে। তিনি (অক্টোবর ২২, ১৯৫৪ -বঙ্গাব্দ কার্তিক ৫, ১৩৬১ ) সালে মৃত্যু বরণ করেন।