"প্রাচীন বাংলায় মুসলিম আগমন-২য় খণ্ড" বইটির সম্পর্কে কিছু কথা: প্রাচীন বাংলায় ঠিক কখন মুসলিমরা আগমন করেছিল, তা নিয়ে বিশেষ গবেষণা নেই। ইতিহাসবিদ গবেষকদের মধ্যে এ নিয়ে বিশেষ আগ্রহও নেই। তুর্কী বখতিয়ার খলজি ১২০৪ খ্রিস্টাব্দে বাংলায় শাসক হিসেবে প্রথম আগমন করেছিলেন, অনেকে এখান থেকেই বাংলায় মুসলিমদের যাত্রা শুরু বলে মনে করেন। কিন্তু এটা ইতিহাসের একটি বড় ভ্রান্তি। মুসলিমরা বাংলায় আগমন করেছিলেন মােহাম্মদ সা.-এর জীবদ্দশাতেই, যেমনটা মােহাম্মদ সা.-এর বেঁচে থাকতেই তার সাহাবি রা.-গণ সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছিলেন। সাহাবি রা.-দের জামায়াত দুনিয়ার অন্যান্য অঞ্চলের মতাে বাংলা-ভারতেও এসেছিল এটা এখন শুধু অনুমানের ব্যাপার নয়, এ সম্পর্কিত নানা দলিলই বিদ্যমান। কিন্তু ইতিহাসবিদদের এই নিয়ে মাথা ঘামানাের সময় নেই, যতােটা আছে অন্যান্য বিষয় নিয়ে পড়ে থাকার ব্যাপারে। লালমনিরহাটের মাটির নিচে প্রাপ্ত হাজার বছরের প্রাচীন মসজিদটি নিয়ে আমাদের ঐতিহাসিক, গবেষক ও প্রত্নতত্ত্ববিদদের নীরব ভূমিকায় এসব প্রশ্ন তােলার পেছনে যথেষ্ট কারণ আছে। সেদিক থেকে এ বিষয় নিয়ে গবেষণা বাংলাদেশে খুব একটা আগায় নি। ড. মােহাম্মদ হাননান এ ব্যাপারে একজন সাহসী লেখক, গবেষক ও ঐতিহাসিক। তিনি এই বিষয়ক ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন লেখা, তথ্য, উপাত্তকে প্রথমে সংগ্রহ করেছেন, অতঃপর বর্তমান প্রেক্ষাপটকে সামনে রেখে এর একটি পর্যালােচনা করেছেন।
ড. মােহাম্মদ হাননান সহস্রাব্দ ও শতাব্দীর ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, সাহিত্য, বিজ্ঞান, ইত্যাদির ওপর যে। সংগ্রহ-সংকলনটি করেছেন তা অনুসন্ধিৎসু যে-কোনাে পাঠকের কাছেই বিশ্বকোষের স্বাদ এনে দেবে। শতাব্দীর বাংলাদেশ, শতাব্দীর বিশ্ব, সহস্রাব্দের বাংলাদেশ, সহস্রাব্দের বিশ— গ্রন্থ চারটিকে নানাভাবেই সাজানাে যায়। এখানে পাঠক বাংলাদেশকে পাবেন দু’ভাবে-শতাব্দী ও সহস্রাব্দের মতাে করে, আবার বিশ্বকেও পাবেন শতাব্দীর পাশাপাশি সহস্রাব্দের পটভূমিতে। শতবছর অথবা হাজার। বছরের পরিক্রমায় বাংলাসমাজ ও বিশ্বসমাজ এভাবেই গ্রন্থ চারটিতে মূল্যায়িত হয়েছে।