"গিগো" বইটির সম্পর্কে কিছু কথা: ইপকো কিছু বুঝে উঠার আগেই গানশিপের একটি গােলা এসে আঘাত করল তাদের স্পেসশিপ নিলগিনে। সাথে সাথে নিলগিনের পিছনের অংশে আগুন ধরে গেল। ইপকো স্পষ্ট বুঝতে পারল কিছুক্ষণের মধ্যেই নিলগিন বিধ্বস্ত হবে। সেক্ষেত্রে তাকে, তার স্ত্রী ইলি এবং সন্তান রিবােকে মৃত্যুবরণ করতে হবে। বেঁচে থাকার একমাত্র বিকল্প হলাে সামনের ঐ অজানা অচেনা গ্রহে অবতরণ করা। কিন্তু তা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ সামনের ঐ গ্রহে রয়েছে অতি বুদ্ধিমান প্রাণী। আর এই প্রাণীরাই তাদের স্পেসশিপে গােলা ছুড়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। সেক্ষেত্রে সামনের ঐ গ্রহে অবতরণ করলে তাদের যে নিশ্চিত মৃত্যুর মুখােমুখি হতে হবে তাতে কোনাে সন্দেহ নেই। এদিকে গােলার আঘাতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রােবট কিপিও নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে। স্ত্রী ইলি এবং রিবাে দুজনই অবতরণ সিটে বসা। তাদের পক্ষে এখানে আসা অসম্ভব। কাজেই এ মুহূর্তে কেউ যে তাকে সাহায্য করবে সে আশাও নেই। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে ইপকো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিল। আর তা হলাে সামনের ঐ গ্রহতেই অবতরণ করবে সে। এতে যদি মৃত্যু হয় হবে। মহাকাশে এভাবে মৃত্যুবরণ করার চেয়ে নতুন গ্রহে নতুন প্রাণীদের সাথে যুদ্ধ করে মৃত্যুবরণ করা হবে অনেক আনন্দের আর গর্বের। আর ভাগ্য ভালাে হলে তারা জয়ীও হতে পারে। কারণ তারা প্রজাতিতে গিগাে, মহাবিশ্বের অন্যতম বুদ্ধিমান এবং উন্নত প্রাণী। তাদের রয়েছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি। কাজেই যুদ্ধে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা তাদের রয়েছে। আর সত্যি যদি তারা যুদ্ধে জিতে যায় তা হলে হয়তাে শুরু করতে পারবে নতুন জীবন। শেষ পর্যন্ত কি গিগােরা অজানা অচেনা ঐ গ্রহে নতুন জীবন শুরু করতে পেরেছিল?
লেখক মোশতাক আহমেদ এর জন্ম ১৯৭৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর, ফরিদপুর জেলায়। পেশায় একজন চাকুরিজীবী হওয়া সত্ত্বেও লেখালেখির প্রতি তাঁর আগ্রহ প্রচুর। এ পর্যন্ত সায়েন্স ফিকশন নিয়েই সবচেয়ে বেশি লিখেছেন। বাংলা সায়েন্স ফিকশন জগতে তার পোক্ত একটি অবস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও মোশতাক আহমেদ এর বই সমূহ ভৌতিক, প্যারাসাইকোলজি, মুক্তিযুদ্ধ, কিশোর ক্ল্যাসিক, ভ্রমণ ইত্যাদি জঁনরাতে বিভক্ত। যেকোনো একটি বিষয়ে সীমাবদ্ধ না থেকে তিনি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখতেই পছন্দ করেন। মোশতাক আহমেদ এর বই সমগ্র সংখ্যায় পঞ্চাশ পেরিয়েছে। তাঁর প্রথম প্রকাশিত বই ছিল ‘জকি’। এটি একটি জীবনধর্মী উপন্যাস। ২০০৫ সালে এটি প্রকাশিত হয়। মোশতাক আহমেদ পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রথমে ফার্মেসি বিভাগে, পরে আইবিএতে। পরবর্তী সময়ে ইংল্যান্ডের লেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অপরাধবিজ্ঞান থেকে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন। পড়াশোনার খাতিরেই হোক বা কর্মজীবনের তাগিদেই হোক, ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অনেক ভ্রমণ করেছেন। সেসব ভ্রমণকাহিনীর আশ্রয়ে তাই ক্রমেই সমৃদ্ধ হয়েছে তাঁর লেখা ভ্রমণকাহিনীগুলোও। তাঁর সৃজনশীল কর্মকাণ্ড শুধু লেখালেখিতেই গণ্ডিবদ্ধ নয়। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাজারবাগের পুলিশ ও পাকিস্তানী হানাদারবাহিনীর মধ্যে একটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। সে ঘটনার ওপর ভিত্তি করে মোশতাক আহমেদ ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রতিরোধ’ নামে একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন। এটি ২০১৩ সালের মার্চ মাসে মুক্তি পায়। তাঁর পুরস্কারের ঝুলিতে এ পর্যন্ত রয়েছে ২০১৩ সালের কালি ও কলম সাহিত্য পুরস্কার, ২০১৪ সালের ছোটদের মেলা সাহিত্য পুরস্কার, ২০১৪ সালের কৃষ্ণকলি সাহিত্য পুরস্কার, ২০১৫ সালের সিটি আনন্দ আলো পুরস্কার এবং সর্বশেষ সংযুক্তি হিসেবে সায়েন্স ফিকশন বিষয়ে বিশেষ অবদান রাখার জন্য বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০১৭।