ঐতিহাসিক ছয় দফাভিত্তিক কিশোর উপন্যাস ‘স্বাধীনতার সাঁকো’। উপন্যাসটি লিখেছেন―বিশিষ্ট শিশুসাহিত্যিক ফারুক নওয়াজ। ছয় দফা বিষয়টি অনেকের কাছে পরিচিত মনে হলেও এ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা অনেকেরই নেই! ছয় দফার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার পথ সুগম হয়েছিল। ফলে স্বাধীনতার ইতিহাস সঠিকভাবে জানতে ছয় দফা সম্পর্কে থাকতে হবে সঠিক ধারণা। ১৯৬৬ সালের ছয় দফা দাবি পেশের পর তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়াকে সাথে নিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান লাহোর থেকে ফিরছেন। এ সময় যেসব প্রস্তাব করা হয়েছিল : প্রস্তাব-১. শাসনতান্ত্রিক কাঠামো ও রাষ্ট্রের প্রকৃতি, প্রস্তাব-২. কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা, প্রস্তাব-৩. মুদ্রা বা অর্থ-সম্বন্ধীয় ক্ষমতা, প্রস্তাব-৪. রাজস্ব, কর বা শুল্ক সম্বন্ধীয় ক্ষমতা, প্রস্তাব-৫. বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয়ক ক্ষমতা, প্রস্তাব-৬. আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠনের ক্ষমতা। ‘লেখকের কথা’য় ঔপন্যাসিক ফারুক নওয়াজ লিখেছেন―‘পাকিস্তানি শাসন আমলে, ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু বাঙালির মুক্তি সনদ ছয় দফা ঘোষণা করেন। এই ছয় দফায় বাঙালির স্বাধীনতার আলো লক্ষ করা যায়। বঙ্গবন্ধু তাঁর প্রিয় শিষ্যদের উদ্দেশ্য করে বলেছেন, এই ছয় দফা স্বাধনিতার সাঁকো। এই সাঁকো দিয়েই বাঙালি স্বাধীনতার দিকে এগিয়ে যাবে।’ উপন্যাসটি ঋভু নামের এক কিশোরকে ঘিরে লেখা হয়েছে। ঋভু মেধাবী ছাত্র। ক্লাস সিক্সের ফার্স্ট বয় সে। ওর দাদা মুক্তিযুদ্ধের একজন কমান্ডার ছিলেন। কিন্তু ওর বাবা তখন এতই ছোট ছিল যে, তার পক্ষে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া সম্ভব ছিল না। এ নিয়ে তার বাবার অনেক আফসোস। সে যদি তখন বড় থাকত তবে সেও মুক্তিযোদ্ধা হতে পারত। কিন্তু তারা বাবা-ছেলে দুজননেই মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান। ঋভু আর তার বাবার স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে নানা কথোপকথন হয়। তারা মুক্তিযুদ্ধ স্বাধীনতার স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলোতে যায়। এভাবেই ছয় দফার ইতিবৃত্তসহ মুক্তিযুদ্ধের নানা ঘটনাপ্রবাহ উঠে আসে। ঐতিহাসিক উপন্যাসের ক্ষেত্রে ইতিহাস ঠিক রেখে নানা চরিত্র ও ঘটনাকে কাল্পনিকভাবে উপস্থাপন করা যায়। আর এ পদ্ধতিটিকেই অবলম্বন করে ফারুক নওয়াজ উপন্যাসটিকে নিপুণভাবে গেঁথেছেন শব্দে শব্দে, বাক্যের কারুকাজে। শিশু-কিশোররা যাতে দেশপ্রেমিক ও ইতিহাস সচেতন হয়ে ওঠে তার জন্য এমন বই পাঠ তাদের জন্য জরুরি।
Faruk Nawaz- জন্ম ১লা নভেম্বর ১৯৫৮, খুলনা শহরে মাতুলালয়ে। পিতা কাজী মাবুদ নওয়াজ প্রয়াত। মা কাজী জাহানারা। পৈতৃকবাস মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলাধীন মুজদিয়া। পিতামাতার চতুর্থ সন্তান। সৃষ্টিশীল সাংস্কৃতিক পরিবারে জন্ম; বিধায় ছোটবেলাতেই লেখালেখির হাতেখড়ি। পড়াশুনা করেছেন খুলনা, মাগুড়া, যশোর ও ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। ইসলামের ইতিহাস ও বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর। প্রাকমুক্তিযুদ্ধ সময়ে পত্রপত্রিকায় কবিতা ছাপার মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু। প্রথম বই বড়োদের কবিতা আগুনের বৃষ্টি (১৯৭৭)। দ্বিতীয় বই ও শ্রেষ্ঠ বিবেচিত গ্রন্থÑকিশোরকাব্য আমার একটা আকাশ ছিলো (১৯৮৮)। এরপর গল্প, উপন্যাস, ইতিহাস-প্রবন্ধ, ছড়া-কবিতা এবং বড়োদের সাহিত্য মিলিয়ে বইয়ের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে গেছে অনেক আগেই। পুরস্কার : অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার, এম. নুরুল কাদের শিশুসাহিত্য পুরস্কার, মধুসূদন একাডেমী পুরস্কার, ড. শহীদুল্লাহ পাঠাগার সম্মাননা, পূরবী সম্মাননা, প্রিয়জন অ্যাওয়ার্ড, পালক অ্যাওয়ার্ড, ছোটদের মেলা সম্মাননা, নজরুল সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার, প্রতীকী সম্মাননাসহ ডজন খানিক। পেশায় সরকারি চাকুরে। বর্তমানে বাংলাদেশ শিশু একাডেমীর প্রোগ্রাম অফিসার এবং মাসিক শিশু পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক পদে কর্মরত।