একটা চিল তার শ্যেনদৃষ্টিটা লক্ষে রেখে উদাস ডানা মেলে উড়ে যাচ্ছে অনেক উঁচুতে। কখনো বসছে নারিকেলগাছটার লম্বা শাখাগুলোর কোনো একটায়। নিচে মা মুরগিটা পাঁচটা হাঁসের ছানাকে ডানা দিয়ে ঢেকে দিয়েছে পরম আদরে। এই হলো মায়ের মন, মাতৃত্ব। জাত-পাত মানে না। কেবল জানে ভালোবাসার নরম আঁচল বিছিয়ে দিতে সীমা থেকে সীমাহীন পর্যন্ত। মাথার কাছের জানালাটা মেলে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছে রুবিনা। স্বচ্ছ নীল-আকাশ। যেন সদ্য ধুয়েমুছে ঝকঝকে তকতকে করে দিয়েছে কেউ। একটা উদাসী ভাব আছে আজকের আকাশটায়। মাঝখানে ধবধবে সাদা খÐ খÐ মেঘের আনাগোনা। বাড়ির পেছনে রেইনট্রি গাছটায় বসে একটানা ডেকে যাচ্ছে একটা ফিঙে। শুনতে মন্দ লাগছে না ফিঙের ডাকটা। শরতের অলস দুপুর। রুবিনার প্রিয় ঋতু এই শরৎ। রাতে মেঘ আর চাঁদের লুকোচুরি। দিনে শুভ্র মেঘের ভেলা ভেসে যাওয়া রুবিনাকে উদাসী করে দেয় অজান্তেই। আকাশের দিকে মুখ করে একটানা চেয়ে থাকতে বড্ড ভালো লাগে তার। উঠোনে বসা মুরগিটা জোরে কক্ করে ডেকে উঠতেই রুবিনায় উদাস মনের সুতায় টান পড়ল। হাত থেকে খসে পড়া তালপাখাটা কুড়িয়ে তড়িঘড়ি করে যথাস্থানে রেখে বুকের আঁচলটা কোনোমতে টেনেটুনে দরজায় এসে দাঁড়াল সে। আয় আয় করে ডাকাতেই বাচ্চাসমেত মুরগিটা এসে দাঁড়াল রুবিনার পায়ের কাছে। ওদের খেতে দিয়ে দরজায়ই দাঁড়িয়ে রইল সে। খেতে খেতে মুরগিটা একবার কৃতজ্ঞতার নজর বুলিয়ে দিল রুবিনার প্রতি। ছানাগুলোও। ওদের প্রতি চেয়ে মনটা মমতায় ভরে উঠল রুবিনার। পোঁড় খেতে খেতে ধ্বংসের কিনারায় এসে দাঁড়িয়েছে গোটা সংসার। এ সময়ে এই বোবা জীবগুলোই বড্ড আপন মনে হয় তার। ভাটির নিভৃত এক পল্লির কোণে জন্ম রুবিনার। মন যতটা সরল ততটাই কোমলতায় ভরপুর। কিন্তু জীবনের গতিপথটা আর অন্য পাঁচটা মেয়ের মতো নয়। তবে প্রকৃতির প্রতিক‚লতা আর দারিদ্র্যের রূঢ়তাকে মোকাবিলা করতে অভ্যস্থ সে। জন্ম অবধি এ রকমটাই দেখে আসছে। ফলে এ নিয়ে কোনো দুঃখবোধ হয় না তার।
পাপিয়া সুলতানা পান্না জন্মগ্রহণ করেন পহেলা বৈশাখ, কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা উপজেলায়। পিতৃভূমি ধনু নদী পাড়ের পাঁচহাট গ্রাম। রাজনৈতিক মতদ্বন্ধে এলাকাটি বর্তমানে নেত্রকোণা জেলার অধীন হলেও নিজেকে তিনি কিশোরগঞ্জের পরিচয় দিতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। লেখালেখিকে প্রধান শখ হিসেবে মনে করেন তিনি। এর মাধ্যমেই তুলে ধরার প্রয়াস চালাতে চান মানুষের জীবনের অতি বাস্তবতাকে। প্রথম কাব্যগ্রন্থ ঘুণপোকা প্রকাশিত হয় অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০১৮ তে। খেয়া নামে একটি লিটলম্যাগ সম্পাদনা করেন। বর্তমানে শিক্ষকতার পাশাপাশি আইন বিষয়ে অধ্যয়ন করছেন। সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছেন ASF (Ajharul-Sarata Foundation) নামে একটি দাতব্য সংস্থা। যাপিত জীবনের সীমাবদ্ধতা জয় করে মানবতাকে প্রতিষ্ঠা করাই তার লক্ষ্য।