‘মেলা শুরু হওয়ার সময় বের হওয়ার দুয়ার দিয়ে বই বিক্রেতারা তাদের বই নিয়ে প্রবেশ করে। গেটে গাড়ি থেকে বইগুলো নামিয়ে মেলার ভেতর নিয়ে যাওয়ার জন্য অতিরিক্ত শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। সেখানে শ্রমিক হিসেবে তারা লাবিবের মতো শিশুদের ব্যবহার করে। কারণ শিশুদের খুবই অল্প টাকায় কাজ করানো যায়। লাবিব প্রতিদিন বইমেলার গেটে দাঁড়িয়ে থাকে বই বহন করে কিছু টাকা রোজগারের জন্য। অপেক্ষায় থাকে কখন কোন বই বিক্রেতা এসে তার মাথায় তুলে দেবে বইয়ের বোঝা।’ এমন একটি অসাধারণ ও ব্যতিক্রম গল্প যে কোনো পাঠককেই মুগ্ধ করবে। আমাদের সমাজ রাষ্ট্রে নানাভাবে শিশুশ্রম চালু রয়েছে। অন্যান্য জায়গাগুলোতে অনেকের নজর পড়লেও এ বিষয়টি অনেকেরই নজরের আড়ালে থেকে যায়। এই আড়ালের বিষয়টিকে আলোতে এনে আমাদের দায়িত্ববোধকে নাড়া দিয়েছেন গল্পকার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ মজুমদার। এ বইটিতে পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের গল্পসূচি রয়েছে। এ গল্পগুলো হল- হুমায়রার সততা, লাবিবের বইমেলা, ইমুর বেড়ে ওঠা, আরিফার ফুলের ফেরি এবং পতাকাওয়ালা। বইটির পৃষ্ঠাসংখ্যা বারো। সহজেই বোঝা যায় এ গল্পগুলোর আকার খুব একটা দীর্ঘ নয়। বইয়ের শেষ গল্পটি পতাকাওয়ালা। এ গল্পটি বাংলাদেশের পতাকা পাবার ইতিহাস নিয়ে লেখা। দীর্ঘ সংগ্রাম আর মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত আমাদের এই লাল সবুজ পতাকা। এ পতাকা অর্জনের গল্প নতুন প্রজন্মকে জানাতে এ গল্পটি একটি উপযোগী গল্প বলা যেতে পারে। গল্পগুলোর সাথে রয়েছে খুবই দৃষ্টিনন্দন ছবি। ছবি দেখা ও গল্প পড়ার মধ্যে যে আনন্দ তা পাওয়া যাবে এ বইটি পাঠ শেষে। মোহাম্মদ আবদুল্লাহ মজুমদার ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার উত্তর যশপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শিশু সাহিত্য নিয়ে তার আগ্রহ ও কর্মনিষ্ঠতা ইতোমধ্যেই অনেকের মনোযোগ আকর্ষণ করে। শিশুরাই আগামীর ভবিষ্যৎ। এদের মন মনন সুন্দর ও সুশিক্ষায় গড়ে তুলতে পারলে আমাদের দেশও হবে একটি শক্তিশালী ও উন্নত দেশ। এ গল্পগুলো সেই কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাবার সহায়ক হতে পারে।
মোহাম্মদ আবদুল্লাহ মজুমদার (Mohammad Abdullah Mozumder) গণতান্ত্রিক, ন্যায়বিচার, মনুষত্ব সম্পন্ন ও অধিকার সচেতন সমাজ ও রাষ্ট্র বিনির্মাণের এক অপ্রতিরোধ্য যোদ্ধা। বিশ্বাস তার একমাত্র অবলম্বন। দুঃখকেই তিনি জীবনের চূড়ান্ত সত্য হিসেবে বিশ্বাস করেন। রক্তের সম্পর্কের বাধঁন ও কোন রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া শুধুমাত্র আত্মনির্ভরশীলতার দায়ে তিনি স্বার্থান্ধ রাজধানীতে টিকে আছেন। তার কোন রাজনৈতিক চাহিদা না থাকলেও সামাজিক বহু দায়বদ্ধতা রয়েছে। অর্থপূর্ণ জীবন ও মানুষ গড়ার শিক্ষাব্যবস্থার স্বপ্ন দেখেন বিভোর হয়ে। তিনি ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার উত্তর যশপুর গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। পিতা মৌলভী মোহাম্মদ বেলাল মজুমদার আর মা জোসনা আক্তার। মোহাম্মদ আবদুল্লাহ মজুমদার জীবনবাদী কবি হিসেবে পরিচিত। তার বিভিন্ন লেখনি ও কবিতায় বঞ্চিত মানুষের হাহাকার, বিপ্লব ও মানুষের জীবনবোধের চিত্র ফুটে উঠেছে। এছাড়াও তার শিশুতোষ লেখনি শিশুদের বাস্তব জীবনের তিক্ত সংগ্রামে অভ্যস্ত হবার প্রতি অনুপ্রাণিত করে। ইতোপূর্বে তিনি বিভিন্ন অনলাইন সংবাদমাধ্যম, সাপ্তাহিক পত্রিকা, ম্যাগাজিন ও দৈনিক সংবাদপত্রে কাজ করেছেন বর্তমানে তিনি একটি বাংলা সংবাদপত্রে উপ-সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।