“হ্যাঁ অথবা না এর গল্প" বইটির ফ্ল্যাপ এর লেখাঃ অবাক গল্প দিয়ে শুরু করি। অবাক গল্প মানে যে গল্প। পাঠকের মনে শুধু বিষ্ময় বা কৌতুহলই তৈরি করে না, বরং যে গল্প তার বয়ানের কাঠামাে ধরে এগােতে এগােতে জীবন ও মানুষের মন নিয়ে, মানুষে মানুষে জটিল-সরল বােধের অতীত নানা সম্পর্ক নিয়ে এতকিছু বলার আছে দেখে নিজেই অবাক হয়ে যায়। অবাক গল্পে লেখক কখনাে একটা ছায়া-চরিত্র, কখনাে বা রক্ত-মাংসের মানুষ হিসেবে আবির্ভূত হন। রাজিব মাহমুদের গল্প লেখার শুরু থেকেই আমি তার একজন মনােযােগী পাঠক। প্রথম গল্প থেকেই মাহমুদ চেষ্টা করেছে গল্প লেখার প্রচলিত চর্চা এবং কাঠামাের বাইরে গিয়ে লিখতে। তার দ্বিধা ছিল নিজেকে নিয়ে। চলার বড় রাস্তা থেকে বেরিয়ে একটা নতুন পথ খুঁজে নেবার সামর্থ্য কি তার আছে-এ প্রশ্ন করেছে সে নিজেকে। এজন্য প্রথমেই সে দৃষ্টি ফেলেছে নিজের ওপর। পশ্চিমে উত্তর-কাঠামােবাদী সাহিত্য-চিন্তায় একসময় ঘােষণা এলাে, ‘লেখক মৃত। মাহমুদ ভেবেছে, লেখক তাে বেড়ালের মতাে, তার আছে নয়টি জীবন; অথবা লেখক ফিনিক্স পাখির মতাে, পুড়ে ছাই হয়ে আবারও জেগে ওঠে জীবনে। এইসব যাপনের ভেতর লেখক নিজেকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে থাকেন তার লেখা গল্পে; নিজের একটা ছায়া ধীরে ধীরে সচল হয়ে ওঠে গল্পজুড়ে। হয়ত সেজন্যই হ্যা অথবা এর গল্প এর বেশ কটি গল্পে লেখক নিজেই উপস্থিত। আমার কাছে মাহমুদের এই আত্মদর্শন-ক্ষমতাকে তার। লেখক-সত্তার একটা বড় শক্তি বলে মনে হয়েছে। মাহমুদের দ্বিতীয় শক্তির জায়গা তার গল্প বুননের (এবং বানানাের শক্তির)। অনেক না’ বিষয়কে হা’ বিষয়ে পরিণত করার একটা সহজাত ক্ষমতা আছে তার। দুনিয়ার তাবৎ ভালাে গল্পগুলােতে শেষের জন্য চমক থাকে। মাহমুদের গল্পের শুরুতে একটা আভাস থাকে গল্পটি কোন পথে এগােবে সেটার। কিন্তু আভাসটি শরীর পেতে না পেতেই দ্বিতীয় আরেকটি সম্ভাবনা জেগে ওঠে যা গল্পটির ভিন্ন এক সমাপ্তির ইঙ্গিত দেয়-অনিবার্য করে তােলে এর দ্বিতীয় পাঠকে, যা হয়ত পূরণ করবে প্রথম পাঠে বােঝার ফঁাকটুকু। যে কোন ভালাে গল্পেরই একটি বা দুটি মুহুর্ত থাকে যা তাকে সংজ্ঞায়িত করে। মাহমুদের তৃতীয় শক্তিটি হল এই মুহূর্তগুলােকে বাময় করার। তার বর্ণনা কখনাে দীর্ঘ হয় না। অল্প কথাতেই, কোনাে কোনাে সময় নিছক ইঙ্গিত বা ইশারাতেই তার কথাগুলাে বলা হয়ে যায়। হ্যা অথবা না এর গল্প-তে এক অস্তিত্ববাদী দর্শনের ছায়া আছে, যা পাঠককে ভাবাবে। পাঠককে সঙ্গী করে নেয়ার এই ক্ষমতাটিও মাহমুদকে বিশিষ্ট করেছে। এ বইয়ের গল্পগুলাে আমাদের নিয়ে যাবে ভবিষ্যতের আরও অনেক অনেক গল্পে-এই আশা রাখি। আর সেই গল্পগুলাে পড়ার জন্য আমি অপেক্ষায় থাকব।। সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। কথাসাহিত্যিক।