ফ্ল্যাপে লিখা কথা হেনরি মিলারের সঙ্গে এক টেবিলে বসে খাওয়া ছিল অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা। যাঁরা তাঁর সঙ্গে বসে খেয়েছেন তাঁরা সবাই মুগ্ধ. আমোদিত, অনুপ্রাণিত অথবা আহত হয়েছেন তাঁর অননুমেয় অথবা স্বভাবের কারণে। তবে সেই সময় তাঁর দেহমনের অবস্থা যা ই হোক না কেন, তাঁর সহভোজনকারীরা নিশ্চিত থাকতেন যে খাদ্য ও পানীয়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা অজস্র ও বিচিত্র বিষয়ে একজন সত্যিকারের ওস্তাদ কথাশিল্পীর খোলামেলা আলাপচারিতার ভূরিভোজেও আপ্যায়িত হবেন। তিনি শয়তানের উকিল, বোকাহাবা,পণ্ডিত কিংবা জ্ঞানী , যে ভূমিকাতেই অভিনয় করেন না কেন তাঁর চোখেমুখে সবসময়ই এক ধরনের দুষ্টুমির আলো খেলতো। তিনি তাঁর এই চরিত্রাভিনয়ের খেলাটিকে কখনো তেমন গুরুত্বের সঙ্গে নেন নি। তাঁর মধ্যে কোন বাগাড়ম্বরের ভনিতা ছিল না, যদিও স্বীকার করতে হবে যে কখনোসখনো একটু দেখানোপনার ভাব থাকতো। বিশেষ বিশেষ মুহূর্তে তাঁর মন -মানসিকতার সঙ্গে মানানসই নানা বিচিত্র সত্তায় তিনি আবির্ভূত হতেন খাবার টেবিলে। কখনো তিনি কোন প্রাচ্যদেশীয় ধ্যানগম্ভীর সাধু, কখনোবা কালের কষাঘাত সওয়া কোন সৌম্য, সমাহিত রোমান্টিকের টুপি পরে আসতেন। কখনোবা প্রাচীনপন্থী এক লিঙ্গবাদীর রং দেখা যেতো তাঁর চেহারায়। আবার চোখের পলকে তিনি নারীবিদ্বেষী পুরুষদের হাতে নারীর নিপীড়ন ও নিগ্রহের বিরুদ্ধে অনলবর্ষী বক্ততা শুরু করতেন। তিনি যেমন একজন দরিদ, মমতাময় পিতার ভূমিকায় অভিনয় করতে পারতেন তেমনি কোন মতান্ধ ডাচ্ কাকার হুঙ্কার ও আস্ফালনে একটি মনোরম সন্ধ্যাকে নষ্ট করে দিতে পারতেন। পর্যবেক্ষকদের কাছে তাঁর এই সংস্কাররহিত ভূমিকাবদলের ব্যাপারটি যতই রহস্যময় এমনকি বিরক্তিকর ঠৈকুক না কেন, তাঁদেরও স্বীকার না করে উপায় ছিল না যে মিলারের আলাপচারিতা আর যা-ই হোক বিরস কিংবা একঘেয়ে ছিল না কখনোই। টুইঙ্কা থিবো
প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক আলম খােরশেদের জন্ম ১৯৬০ সালে কুমিল্লায় । পেশায় প্রকৌশলী আলম খােরশেদ প্রবাসে উচ্চশিক্ষা ও দীর্ঘ পেশাজীবনশেষে স্থায়ীভাবে দেশে ফিরে আসেন ২০০৪ সালে। ছাত্রাবস্থা থেকেই তিনি সাহিত্যচর্চা ও নানাবিধ সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত । শিল্পসাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় সমান উৎসাহী, তাঁর প্রধান আগ্রহের বিষয় অবশ্য সমকালীন বিশ্বসাহিত্য। তাঁর সম্পাদিত লাতিন আমেরিকান ছােটগল্প সংকলন জাদুবাস্তবতার গাথা আমাদের অনুবাদ সাহিত্যের একটি পথপ্রদর্শক কাজ। সম্পাদনা, অনুবাদ ও মৌলিক রচনা। মিলিয়ে তিনি এ-পর্যন্ত কুড়িটিরও অধিক গ্রন্থ রচনা। করেছেন। তাঁর উল্লেখযােগ্য সাহিত্যকীর্তির মধ্যে রয়েছে wils forat tay czas wars 23 A Room of one's Own এর অনুবাদ নিজের একটি কামরা, নােবেল-বিজয়ী কবি ভিস্লাভা শিম্বস্কার ত্রিশটি কবিতার অনুবাদ, বাংলাদেশের নারীবাদী গল্প-সংকলন কাটা জিহ্বার কথা, মূল স্প্যানিশ ভাষা থেকে অনূদিত বাের্হেস ও বিজোরিয়া ওকাম্পাের আলাপচারিতা, নগুগি ওয়া থিয়ােঙ্গোর নাট্যানুবাদ গির্জাবিয়ে, সালমান রুশদীর ভ্রমণ আখ্যান The Jaguar Smile এর অনুবাদ ইত্যাদি। বর্তমানে তিনি লেখালেখির পাশাপাশি চট্টগ্রাম শহরে তাঁর নিজের গড়া সংস্কৃতি-কেন্দ্র বিস্তার পরিচালনার কাজে ব্যাপত রয়েছেন ।