"কমরেড ও কিরিচ" বইয়ের প্রথম ফ্ল্যাপের লেখা: পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের নভেলার সঙ্কলন এই গ্রন্থ। এর মধ্যে তিনটি প্রকাশিত হয়েছে ঈদ সংখ্যার উপন্যাস হিসেবে। বাকি দুটি ও ঈদ সংখ্যায় মুদ্রিত, বড়গল্প হিসেবে। এসব রচনায় ছােটগল্পের আঙ্গিকে উপন্যাসের স্বাদ সৃষ্টি করা হয়েছে, রয়েছে একমুখী আখ্যান, জমাট বর্ণনা, এবং সংক্ষিপ্ত পরিসরে চরিত্রচিত্রণ ও জীবনদর্শনের নকশা। চমৎকার এবং বিচিত্র রকমের গল্প’ থাকলে ও নিছক কাহিনী-সর্বস্ব রচনা নয় এগুলাে। নাজিব ওয়াদুদ গল্প লেখেন না, গল্প নির্মাণ করেন। একজন সাহিত্য সমালোচকের এই পর্যবেক্ষণ এই পাঁচটি নভেলার ক্ষেত্রেও সত্য। কাহিনী ও পটবিন্যাস, পটভূমি রচনা, বর্ণনা ও ভাষাভঙ্গি, সংলাপ, জীবনের চিত্রায়ণ, সব মিলিয়ে একইসঙ্গে উপভােগ্য ও শৈল্পিক আকরণে সমৃদ্ধ এই পাঁচটি নভেলা। বিষয়গত দিক থেকে এগুলােকে প্রেমের আখ্যানও বলা চলে। কেননা প্রেমই এই পাঁচটি নভেলার কেন্দ্রীয় কথাবস্তু। সে প্রেমের রূপ, প্রকাশ ও পরিণতি অবশ্য ভিন্ন ভিন্ন ধরনের । প্রেমের সমান্তরালে বা কখনাে কখনাে তার অভ্যন্তরেই হিংসা-দ্বেষ-লােভ-সঙ্কীর্ণতা-প্রতিহিংসা সমান ক্রিয়াশীল । জীবনের অভ্যন্তরের ও বাইরের এই দ্বন্দ্বকেই মূলত এসব নভেলায় উল্টে-পাল্টে দেখা হয়েছে। শােষণ, বঞ্চনা, দারিদ্র ও হতাশার আড়ালে আমাদের জীবনের তলদেশে ফল্গুধারার মত অগােচরে বহমান যে প্রেম, প্রাণশক্তি ও ফুর্তির অশেষ স্রোতস্বিনী শৈল্পিক আকরণের মধ্য দিয়ে তার সন্ধান করেছেন নাজিব ওয়াদুদ। স্থান-কাল-পাত্রের বাস্তবতাকে অতিক্রম করে তিনি এক শৈল্পিক বাস্তবতা সৃষ্টি করেন, প্রবেশ করেন জীবন নামক এক বিশাল, জটিল এবং রহস্যময় গভীরতায়, পাঠককে পৌঁছে দেন নবতর উপলব্ধির জগতে।
নাজিব ওয়াদুদের জন্ম ২০ জুলাই ১৯৬১, রাজশাহী মহানগরীর উপকণ্ঠ শ্যামপুর গ্রামে। স্থানীয় মাসকাটাদীঘি বহুমুখী হাইস্কুল থেকে এসএসসি, রাজশাহী সরকারী কলেজ থেকে এইচএসসি এবং রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে। এমবিবিএস পাশ করেন। বর্তমানে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেপুটি চিফ মেডিকেল অফিসার হিসাবে কর্মরত। প্রকৃত লেখালেখি শুরু ১৯৮১ সালে, যদিও হাতেখড়ি কৈশােরে, ছড়া দিয়ে কাক ও কারফিউ, মেঘভাঙা রােদ, আবাদ, দখল, পাখির কান্না, সুন্দরী মেয়েটির নাক বোঁচা, জীয়নকাঠি, আরাে দুটি খুন, খনন, মৃত্যুঞ্জয় মারা গেছে, পদ্মাবতী প্রভৃতি গল্প লিখে। ব্যাপকভাবে আলােচিত ও প্রশংসিত হন। উপন্যাস, নাটক ও প্রবন্ধ লেখেন। গত দেড় দশকব্যাপী ছােটগল্প, প্রবন্ধ ও উপন্যাস অনুবাদ করে একজন দক্ষ অনুবাদক হিসেবেও সুনাম কুড়িয়েছেন। তিনি লিটল ম্যাগাজিন ‘নন্দন’ সম্পাদনা করেন। ইতােমধ্যে বেশ কিছু পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন।