“বেঁচে থাকি বাংলা ভাষায়” -বইয়ের প্রাক-কথা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রয়োজনে আমার ভাষা বিষয়ক লেখা থেকে নির্বাচিত ৯টি প্রবন্ধ-নিবন্ধ সংগ্রথিত করে ‘বেঁচে থাকি বাংলা ভাষায়’ গ্রন্থটি প্রকাশিত হলো। গ্রন্থটি ভাষাতত্ত্বের কৌতূহলী, আগ্রহী শিক্ষার্থী এবং গবেষকদের যেমন উপযোগী হবে; তেমনি ভাষাপ্রেমী ও অনুসন্ধানমনস্ক পাঠকদেরও হতে পারে আনন্দের সামগ্রী। ১৯৮৩ সালে বারানসী কাশী হিন্দু ইউনিভার্সিটির ভাষাতত্ত্ব বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. সত্যেস্বরূপ মিশ্র এর তত্ত্বাবধানে উপভাষাতত্ত্বের গবেষণা কর্মের সুযোগ পাই। তিনি তাঁর প্রণীত ইন্দো-ইউরোপিয়ান ও লুবিয়ান ভাষার তুলনামূলক গবেষণা পুস্তিকার একখানি আমায় দেন বাংলাদেশে গবেষক মহলে প্রচারের নিমিত্তে। পঁয়ত্রিশ বছরের অধিক সময় ধরে আমি পুস্তিকাটি সংরক্ষণ করি। বর্তমানে এটি বিবণর্, জীর্ণ; স্পর্শমাত্র পৃষ্ঠাংশ ঝরে পড়ে শীতের শুষ্কপাতার মতন। এটির পাঠযোগ্য কিছু অংশ অনুবাদ করে ‘একটি প্রাচীন ভাষা’ শিরোনামে আদিতে স্থান দেওয়া হলো। ‘আমার প্রথম ভাষা’ মূলত দাউদকান্দি অঞ্চলের ঔপভাষিক বিশ্লেষণ; এর সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে একটি শব্দ তালিকা, একটি লোক গল্প, কিছু সংখ্যক প্রবাদ। ‘চিঠি পত্রের ভাষা’ শীর্ষক নাতিদীর্ঘ প্রবন্ধে খ্যাতিমান ব্যক্তি ও পন্ডিতদের ব্যক্তিগত পত্রের ভাষা বৈশিষ্ট্য ও পার্থক্য নির্দেশিত হয়েছে। ‘নারীর ভাষা’ নিবন্ধটি ২০১১ সালে কালের কণ্ঠ পত্রিকার বিশেষ সংখ্যায় মুদ্রিত হয়েছিল তা এ গ্রন্থে পুনর্মুদ্রিত। নজরুলের ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী: ভাষাশৈলী বিশ্লেষণ’ প্রবন্ধটি নজরুল ইন্সটিটিউট পত্রিকায়, নজরুল শতবর্ষ সংখ্যায় ১৯৯৯ সালে প্রকাশিত। এ প্রবন্ধটিও পরিমার্জিত করে এখানে গ্র্রথিত। সমসাময়িক দুটি ভাষা সংগঠন ‘ভাষা আন্দোলন গবেষণা কেন্দ্র’ ও ‘বাংলা ভাষা শিক্ষক পর্ষদ’ এর পটভূমি, কার্যক্রম, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ইত্যাদি আলোচিত হয়েছে ‘ভাষা সংগঠন কথা’ রচনায়। ‘সিংহলি ভাষার উৎপত্তি’ একটি অনুবাদমূলক প্রবন্ধ, মূল লেখক ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্। শেষাংশে ‘বেঁচে থাকি বাংলা ভাষায়’ ক্ষুদ্র প্রবন্ধটি ‘বাংলা ভাষা শিক্ষক পর্ষদ’ এর পত্রিকা’ গুঞ্জরীমালীতে প্রথম প্রকাশিত। পুনর্লিখিত এ প্রবন্ধে বাংলা ভাষার বর্তমান পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে সমস্যাসমূহ চিহ্নিত হয়েছে। গ্রন্থটি প্রকাশে সরবে-নীরবে প্রেরণা দিয়েছেন আমার প্রিয় সহকর্মী অধ্যাপক ড. শায়লা নাসরিন। আমার পরিবার পাশে ছিল সগৌরবে সানন্দে। ‘ভাষা আন্দোলন গবেষণা কেন্দ্র ও যাদুঘর’-এর নির্বাহী পরিচালক ও ভাষা আন্দোলনের একনিষ্ঠ গবেষক এম. আর মাহবুবের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই প্রয়োজনীয় তথ্যাদি, পত্রপত্রিকা, গ্রন্থ দিয়ে সহযোগিতা দানের জন্য। ‘বাংলা ভাষা শিক্ষক পর্ষদ’ এর মিত্র ও ‘শিক্ষা গবেষণা একাডেমি’ এর সদস্য- যাঁরা আমার শুভার্থী তাঁদের প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি। ধন্যবাদ জানাই উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত সহকর্মী প্রফেসর মমতাজ বেগম, ড. সোহেলী নার্গিস, জনাব সালাউদ্দিন কাদের এবং সামজীর আহমেদ কে তাদের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সহযোগিতা দানের জন্য। অনুবাদ অংশে শতভাগ সহযোগিতা দিয়েছেন প্রিয়ভাজন রাইয়ান রাজী। পা-ুলিপি প্রস্তুতে সর্বাত্মক শ্রম দিয়েছে স্নেহভাজন ছাত্র আলাউদ্দিন অপু ও জাহাঙ্গীর রনি। স্মরণ করি ইমরান হোসাইন, নিজাম উদ্দিন, শাহীন মিয়া, নাঈম হাসান এর মতন উৎসাহী ছাত্রদের। প্রকাশনার গুরুদায়িত্ব পালন করেছেন পলল প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী সজ্জন খান মাহবুব। সবশেষে, বিশেষ শ্রদ্ধা ও প্রীতি বোদ্ধা পাঠকের প্রতি। - ড. আয়েশা বেগম