"জেনোসাইড ৭১ তত্ত্ব তর্ক তথ্য" বইটিতে লেখা ফ্ল্যাপের কথা: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পােলিশ আইনজ্ঞ রাফায়েল লেমকিন জেনােসাইড টার্মের জন্ম দেন। জেনােসাইড মানে একটা জাতিগােষ্ঠীকে তার পরিচয়ের দায়ে সম্পূর্ণ বা আংশিক নির্মূলের উদ্দেশ্যে সংঘঠিত নানা কর্মকাণ্ড— গণহত্যা, ধর্ষণ, উচ্ছেদ, সাংস্কৃতিক আগ্রাসন, জোরপূর্বক ধর্মান্তরিতকরণ ইত্যাদি এ সবকিছু মিলিয়েই জেনােসাইড। এটি আন্তর্জাতিক অপরাধ হিসেবে স্বীকৃত এবং এই অপরাধ দমনের জন্য আন্তর্জাতিক আইন হয়েছে ১৯৪৮ সালে। পরে যুগােশ্লাভিয়া ও রুয়ান্ডা ট্রাইব্যুনালে জেনােসাইডের বিচার হয়েছে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান আর্মি আর তাদের অক্সিলারি ফোর্সের সংঘঠিত অপরাধকে আমরা 'গণহত্যা' বলি, যার ইংরেজি ‘Mass 'Killing'। কিন্তু Mass Killing/গণহত্যা হচ্ছে জেনােসাইডের অন্তর্ভুক্ত অনেকগুলাে অপরাধের একটি আমরা গণহত্যা বলে। বাকি সব অপরাধ আড়াল করে দিচ্ছি— বিশেষত বাঙালি জাতিগােষ্ঠীকে নির্মূল করাই যে মূল উদ্দেশ্য ছিলাে সেটা আমরা বলছি না, বলছি না যে এটা জেনােসাইড। জেনােসাইড'৭১: তত্ত্ব-তর্ক-তথ্য গ্রন্থটিতে জেনােসাইড ধারণার ইতিহাস, তাত্ত্বিক কাঠামাে, স্বীকৃত কয়েকটি জেনােসাইডের বিস্তারিত এবং এদের সাথে ১৯৭১-এর নৃশংসতাকে তুলনা করে দেখানাে হয়েছে – এটা শুধু গণহত্যা ছিলাে না, পূর্ণাঙ্গ 'জেনােসাইড ছিলাে এবং আমাদের ফোকাস হতে হবে জেনােসাইডের স্বীকৃতি। এ ছাড়া ১৯৭১ কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিলাে না, বরং ছিলাে এর ১০০ বছর আগে থেকে ভারতীয় উপমহাদেশে শুরু হওয়া রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের পরিণতি। কলকাতা দাঙ্গানােয়াখালি হিন্দু নিধন বিহারে মুসলিম নিধন পুর্ব পাকিস্তানে রাষ্ট্রীয় মদদে ১৯৫০ ও ১৯৬৪এর হিন্দু নিধন ছাড়াও বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি ও শিক্ষার বিরুদ্ধে আগ্রাসন এবং বাঙালিদের প্রতি পাকিস্তানিদের মনােভাব, এ সবই ছিলাে জেনােসাইডের প্রাক প্রস্তুতি এরকম ভাবনাগুলােও বিধৃত হয়েছে। শুধু জেনােসাইডকে কেন্দ্র করে এরকম গ্রন্থ সম্ভবত বাংলা ভাষায় এই প্রথম।