"হাইজেনবার্গের গল্প" প্রচ্ছদ কাহিনী: ১৯৩৯ সালে শুরু হলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। আটলান্টিক মহাসাগরের অপর পাশে যুক্তরাষ্ট্র তার বিখ্যাত “Manhattan Project” শুরু করে যেখানে রবার্ট অপেনহাইমার সাহেবের নেতৃত্বে প্রথম মার্কিন পারমাণবিক বোমা তৈরির গবেষণা চলছিলো। যুদ্ধে টিকে থাকতে হলো হিটলারকেও বানাতে হবে জার্মান এটম বোম! কিন্তু, কে বানাবে এই মারণাস্ত্র? হিটলার কড়া নাড়লেন হাইজেনবার্গের দরজায়। গত চার দশক ধরে যেই নামকড়া জার্মান বিজ্ঞানীরা পরমাণুর গঠনের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিতে দিন-রাত এক করে ফেলেছিলেন তারাই এবার শুরু করলেন জার্মান নিউক্লিয়ার রিসার্চ টীম — ইউরেনিয়াম ক্লাব। হাইজেনবার্গ হিটলারের শত্রু থেকে পরিণত হলেন মিত্রে। ভূমিকা: লেখা-লেখির অভ্যাসটা বেশ অনেকদিন ধরেই আমার উপর চেপে বসেছে। আমি বিজ্ঞানের মানুষ; আমার বসবাস ল্যাবরেটরীর সাদা আলোর নীচে। সেই জীবনটা বেশ কঠিন পরিশ্রমের; প্রায়শই রাজ্যের ক্লান্তি ভর করে শরীরটার উপর। এমন অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে সাধারণত আমি ল্যাব থেকে বের হয়ে রাস্তার ধারের একটা কফিশপে ঢুকে পড়ি। গরম ধোঁয়া তোলা তিতা স্বাদের কালো বর্ণের তরলে চুমুক দিতে দিতে ল্যাপটপটা বের করে আরম্ভ করি লেখা-লেখি। বেশির ভাগ সময়ে সেই গল্পগুলোতেও চলে আসে আমার ল্যাবের বিজ্ঞান। ২০১৭ সালের শুরু দিকে আমার আদরের ছোট ভাই ফাহমিদের সফটওয়ার ফার্ম (batttery low interactive) আমার নামে একটি ব্লগ ওয়েবসাইট বানিয়ে দেয়। www.shamirmontazid.com । নিজের লেখা বিজ্ঞান আর ভ্রমণ বিষয়ক গল্পগুলো একটু একটু করে প্রকাশ করতে থাকি ফেইসবুকে। এই সাইটটায় প্রতি সপ্তাহে প্রায় চার-পাঁচ হাজার মানুষ আমার লেখা পড়তে আসে। আমি বেশ অবাক হয়ে যাই। ফেইসবুকের জঞ্জালে কেটী পেরী এবং ক্যাট ভিডিও বাদ দিয়ে আমার বিশাল বিশাল ঘুমপাড়ানী বিজ্ঞান বিষয়ক বাংলা প্রবন্ধ পড়তে মানুষ কেন আগ্রহী হবে? কিছু মানুষের কাছে আমি সরাসরি কারণটা জানতে চাইলাম। ১০ মিনিট স্কুলের আদরের সহকর্মী অভীপ্সু (IBA, JU) বলেছিলো, “ভাইয়া, আমি ব্যবসায় শিক্ষার ছাত্র কিন্তু বিজ্ঞানকে ভালোবাসি। কঠিন রিসার্চ পেপার পড়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু, যতবারই আপনার লেখা সায়েন্স আর্টিকেল পড়েছি ততবারই বিজ্ঞানে একটু বেশী আকৃষ্ট হয়েছি।” অভিপ্সুর কথাটা বেশ মনে ধরলো। বিজ্ঞান তো কেবল যারা সায়েন্স বিভাগে পড়ে তাদের পৈতৃক সম্পত্তি নয়। আমার ল্যাবের বিজ্ঞানটা সবার। এর আবিষ্কারের আনন্দটাও তাই সবাই সমানভাবে উদযাপন করবে। অক্সফোর্ডের বন্ধু আনিসুল করিম সবসময় আমার গল্প বলার ক্ষমতার ভূয়সী প্রশংসা করে থাকে। তাই, শেষ মেষ ঠিক করে ফেললাম যে, একটা বিজ্ঞান বিষয়ক গল্পের বই লিখবো যা বিজ্ঞানের ছাত্র না হয়েও সবাই পড়তে পারবে। ব্লগ থেকে বই লেখার পেছনের মূল কৃতিত্বটা অধ্যয়ন প্রকাশনীর তাসনোভা আপুর। তার সাথে প্রথম মিটিং-এর পর আমি ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ডে পিএইচডি করতে চলে আসি। ফেইসবুক মেসেঞ্জারে তিনি দিনের পর দিন আমাকে পান্ডুলিপি পাঠানোর জন্য তাগিদ দিতেন। এই শনিবার, আগামী রবিবার করে করে দুই মাস পর আমি তাকে ব্লগ সাইট থেকে পূর্ব প্রকাশিত ১৫ টি গল্প-প্রবন্ধ একসাথে করে পাঠাই। উনি বললেন, এগুলো নাকি বই হিসেবে পড়তেও ভালো লাগবে। যেহেতু প্রকাশক মানুষ বলেছেন, সেহেতু আশায় বুক বাধঁলাম। যেই মানুষটা গত দেড় বছরে মাত্র ১৫টা বিজ্ঞান বিষয়ক ব্লগ লিখেছে সেই মানুষটাই মাত্র একমাসে আরো নতুন ১০টা গল্প লিখতে মনস্থির করলো। আজ ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ অ্যামস্টারড্যামের এক কফিশপে বসে শেষ গল্পটা লিখে ফেললাম। পূর্বপ্রকাশিত ১৫টি এবং নতুন লেখা ১০টি গল্পসহ মোট ২৫টি কাহিনী থাকছে “হাইজেনবার্গের গল্পে”। এই বইটির নাম আমি প্রথম দিতে চেয়েছিলাম “হাইজেনবার্গের প্রলাপ”। ১০ মিনিট স্কুলের কেমিস্ট্রি শিক্ষক হিসেবে আমার ছাত্ররা হাইজেনবার্গ নামটা বেশ পছন্দ করেছিলো। ওয়ার্নার হাইজেনবার্গ সাহেব আমার সবচেয়ে পছন্দের বিজ্ঞানী। তাই বিজ্ঞানবিষয়ক কিছু করার সময় হাইজেনবার্গ নামটাই আমি বেশী ব্যবহার করি। এই বইয়ের সবগুলো আর্টিকেলকে গল্প বলা যাবে না। কিছু কিছু অংশ আমার মতামত কলুষিত প্রবন্ধ। কয়েকটি অংশে রয়েছে কিছু মজার সায়েন্স এক্সপেরিমেন্ট, কয়েকজন বিজ্ঞানীর জীবনকাহিনী; তবে বেশীর ভাগই সত্যিকার ঘটনা যা আমার মতো বিজ্ঞানপাগল মানুষেরা পড়ে প্রতিনিয়ত রোমাঞ্চিত হয়। তাই গল্প-প্রবন্ধ-উপন্যাস কোন ক্যাটাগরীতে বইটা যাবে তা আমি নির্ধারণ করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছি। আমি সাহিত্যিক নই, বিজ্ঞানী। সাহিত্যের ব্যাকরণ বিচারে হয়তো এই বইটা ডাস্টবিনের নিচের দিকে অবস্থান লাভ করবে। তবে আমার লেখা গল্পগুলো যদি এক-দুইটা স্কুল পড়ুয়া বাচ্চাকে বিজ্ঞানের প্রতি আকৃষ্ট করতে পারে তাহলে আমার এই বই লেখার উদ্দেশ্য সার্থক হবে। এই বইটা আমি বিশ্বের বেশ কিছু শহরের কফিশপে বসে লিখেছি। ঢাকার নর্থ এন্ড, অক্সফোর্ডের কস্তা কফি, এডিনবরার এলিফেন্ট হাউস, মক্কার স্টার বাকস, থিম্পুর কফি কালচার, অ্যামস্টারডামের ভাস্কোবেলোতে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে শুধুমাত্র এককাপ কফি খেয়ে ফ্রি ওয়াইফাই কাজে লাগিয়ে এই বইয়ের অধিকাংশ গল্প লেখা হয়েছে। এই প্রতিটি কফিশপের প্রতি তাই আমার গভীর কৃতজ্ঞতা। আরো কৃতজ্ঞতা আমার বন্ধু শুভ, স্বর্ণা, শামস, আয়মান, অমিতা, ইফতি, বাঁধন, অভিষেক আর ওমরের প্রতি যারা প্রতিনিয়ত আমার জীবনটা উপভোগের সঙ্গী হয়েছে। হাইজেনবার্গের গল্পের এখানেই শেষ নয়। বিশ্বের প্রতিটা কোণার কফিশপে বসে আরো গল্প লিখবো। সেগুলো প্রকাশিত হবে আগামী বছরগুলোতে। আশা করি বিজ্ঞানের জগতে আপনার পরিভ্রমণ সুখকর হোক। জয়, বিজ্ঞানের জয়! "হাইজেনবার্গের গল্প" সূচিপত্র বিজ্ঞান কীভাবে কাজ করে? /১৫ পৃথিবীর প্রথম ভ্যাকসিন /২১ ব্লু ম্যাজিক পিল /২৪ পাস্তুরাইজেশন /২৭ থ্যালিডোমাইড কেলেংকারি /৩০ জঙ্গীবাদের পেছনে আছে DNA /৩৩ একজন বিজ্ঞানী এবং ইসরাঈল /৩৫ স্পার্ম তিমির তেলের গল্প /৩৭ নিষ্পাপ ফাঁসির আসামী /৩৯ মশা ও HIV Virus /৪১ মা যখন খুনী (নয়) /৪৩ ভুল যখন ভালো /৪৪ নীরব ঘাতক /৪৭ ডিম সমাচার /৪৯ যুদ্ধাস্ত্র থেকে মাইক্রোওভেন /৫১ উটপাখির যত দোষ /৫৩ ২০০ বছর পর পিতা-পুত্রের পরিচয় /৫৬ ষষ্ঠ ইন্দ্রীয় /৫৮ ভ্রূণের মহাবিশ্ব /৬৩ কাইমেরিক মা /৬৫ মহাশূণ্যে বারো মাস /৬৭ বিবর্তনের রূপকথা /৭০ রোগ যখন জীবন বাচাঁয় /৭৬ অ্যালান টিউরিং /৭৮ হাইজেনবার্গ /৮৩ ''মস্তিষ্কের ক্যানভাস'' বই এর ফ্ল্যাপ এ বইটা গল্পের নয় কিংবা দর্শনেরও নয়। সাংঘর্ষিক অনুভূতির সংকলন বলা যেতে পারে। নাগরিক জীবনে প্রতিনিয়ত অনেক কিছু দেখেও না দেখার ভান করার বোকামি চতুরতার অসহায় বহিঃপ্রকাশ। কেউ অনুভূতি লুকিয়ে রাখে, কেউ চুপচাপ ব্যক্তিগত ডায়েরিতে লিখে রাখে, কেউবা ইন্টারনেটে প্রকাশ করে সারা পৃথিবীকে জানিয়ে দিতে চায়। বইয়ের কোথাও কোনো ধারাবাহিকতা নেই, নেই কোনো পক্ষপাত। একবার ঘর্মাক্ত রিকশাচালকের মাথায় বয়ে চলা কষ্টের কথা বলা হয়েছে তো আরেকবার শিল্পাঞ্চলের জ্যামে। নিজের বিশাল পাজেরো গাড়িতে বিরক্তি নিয়ে বসে থাকা শিল্পপতির মাথায় কী চিন্তা চলছে তা বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে। কখনো নারীর দৈনন্দিন সংগ্রামের কথা আবার কখানো। ক্রিকেটে জেতার আনন্দ আর ফুটবলে হেরে যাওয়া নিয়ে আক্ষেপ করা হয়েছে। বাংলাদেশকে নিয়ে। একবার অনেক আশাবাদী আবার পরেরবার হতাশার কথা বলা হয়েছে। সাধারণ বাংলাদেশি মস্তিষ্কে নিউরন সেলের বিক্রিয়াগুলোকে কালো হরফে আঁকার চেষ্টায় এই বই। ভূমিকা আমি লেখক নই। এই বইয়ের কোনো পাতায় কোনো ধারাবাহিকতা নেই, বিষয় নির্বাচনে না বিষয়ের দৈর্ঘ্যে-প্রস্থে বা শব্দ সংখ্যায়। গত ১০ বছর। ধরে একটু একটু করে সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে এটা-সেটা নিয়ে চারপাশ দেখে অনেক কিছু ভেবেছি বুঝেছি চেয়েছি, তারপর লিখে রেখেছি। সেসব কথাই এই বইয়ের পাতায় পাতায় ছাপা। ধারাবাহিকতা নেই কোথাও। মলাটে নিজের ছবি, স্পষ্ট করে দেয়, আমি একজন প্রচণ্ড নার্সিসিস্ট, এটা শিকার করতে একটুও দ্বিধা নেই আমার। রাজধানীতে পা রেখেছিলাম ৭০০ টাকা নিয়ে, নিজের গল্পটাই আমার দৈনন্দিন অনুপ্রেরণা। নিজের অবস্থান পরিবর্তনের সাথে সাথে শেকড়টাকে আরো বেশি করে আঁকড়ে ধরে তারপর আমি ভাবার আর বোঝার চেষ্টা করে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত। তাই পাতা উল্টানোর আগে আরেকবার অনুরোধ ধাক্কা লাগলে ক্ষমা করে দেবেন। আমি তরুণ বয়সের অনেকটা সময় সমুদ্রে কাটিয়েছি যুদ্ধজাহাজে, তারপর রাজধানীতে এসে পড়েছি ব্যবসা প্রশাসন। আমার মননের অনেকটা জায়গা জুড়েই আছে লাভ-লোকসান মধ্যবিত্ত বাঙালির সব রকমের দোষ-গুণ আর লাভের সাথে বসবাস আমার প্রতিদিন। এই বইটা কোনো গল্পের নয়, কবিতার না, ভারিক্কি কোনো প্রবন্ধ সংকলনও নয়। স্রেফ আমার ভাবনাগুলো। কোনোটা আমার নিজের অভিজ্ঞতা, কোনোটা একটা অণুগল্প, কোনোটা মনের কোণে জমে থাকা অনুযোগে, কোনোটা আবার বাংলাদেশকে প্রচণ্ড ভালোবাসা একেকজন নাগরিকের, যার আবার দেশের প্রতি চাওয়াটা হয়তো একটু বেশি। এই বইয়ের যেসব শব্দ মোটা দাগে লিখা সেখানে পাঠককে সবচেয়ে বেশি সময় দেয়ার অনুরোধ করছি। বিশেষ ধন্যবাদ দিতে চাই আমার বইয়ের প্রকাশক তাসনোভা আদিবা সেঁজুতি আপাকে। যিনি টানা এক বছর আমাকে অনেকটা ধরে বেঁধেই বইটি শেষ করতে বাধ্য করেছেন। বিশেষ করে আতাউর সুন্ময়কে ধন্যবাদ জানাতে চাই আমার ভাবনাগুলোকে কখনো ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে, কখনো ইউটিউব ভিডিও থেকে, কখনো বক্তৃতা থেকে এনে সংকলন করতে সাহায্য করার জন্য। “বিজ্ঞানীদের কাণ্ডকারখানা-2” বই এর ফ্ল্যাপের কথাঃ বিজ্ঞান আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। আর এই বিজ্ঞান ও । প্রযুক্তির মাধ্যমেই মানুষ প্রকৃতিকে করেছে জয়, অসম্ভবকে । করেছে সম্ভব। আমাদের প্রত্যেকের জীবনে তাই বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানীদের অবদান বিশাল। কিন্তু এই বিজ্ঞানীদের সম্পর্কে। একটা ভুল ধারণা আছে সবার মধ্যে—বিজ্ঞানীরা জটিল ও। নিরস সব বিষয় নিয়ে কাজ করেন। ব্যাপারটা আসলে তা না, । বিজ্ঞানীরা আমাদের সবার মতোই মানুষ, হাসি কান্না আনন্দ। বেদনায় তাদের জীবন। এই গ্রন্থের লেখক রাগিব হাসান। শৈশবে পড়েছিলেন আবদুল্লাহ-আল-মূতী শরফুদ্দিনের লেখা।আবিষ্কারের নেশায় বইটি। তার পেশা ও নেশা হিসেবে। বিজ্ঞানকে বেছে নেওয়ার পেছনে সেই বইটির ভূমিকা। অপরিসীম। লেখকের সন্তান যায়ান ও রিনীতা যোয়ীকে রূপকথার বদলে তিনি বিজ্ঞানীদের জীবনের অসাধারণ সব গল্প শোনান- যা। অনেক ক্ষেত্রে রূপকথাকেও হার মানায়। প্রতিদিন, প্রতি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ওদের গল্প শোনাতে লেখকের মনে হলো, এই গল্পগুলো সবার জানা দরকার। সেই চিন্তা। থেকেই ২০১৮ সালের বইমেলায় বিজ্ঞানীদের কাণ্ডকারখানার ১ম খণ্ডটি লিখেছিলেন। লেখক ভেবেছেন, অল্প কয়েকজন। শিশুকেও যদি বিজ্ঞানের অপার সৌন্দর্যের আলোয় উদ্বুব্ধ। করতে পারা যায় তবে তার সার্থকতা। কিন্তু লেখককে অবাক। করে দিয়ে প্রচুর শিশুকিশোর তরুণ-তরুণী বইটি পড়েছে। তারা বিজ্ঞানী ও গণিতবিদদের জীবনের কথা জেনেছে, রোল। মডেল হিসেবে বেছে নিয়েছে সেই বিজ্ঞানীদের। উৎসাহের। সাথে তারা সেসব কথা লেখককে জানিয়েছে। তাই বাকি। অনেক বিজ্ঞানীর জীবনী নিয়ে প্রকাশিত হলো বিজ্ঞানীদের। কাণ্ডকারখানা সিরিজের দ্বিতীয় বইটি। ভূমিকা বিজ্ঞান আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। আর এই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মাধ্যমেই মানুষ প্রকৃতিকে করেছে জয়, অসম্ভবকে করেছে সম্ভব। আমাদের প্রত্যেকের জীবনে তাই বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানীদের অবদান বিশাল। কিন্তু এই বিজ্ঞানীদের সম্পর্কে একটা ভুল ধারণা আছে সবার মধ্যে—বিজ্ঞানীরা জটিল ও নিরস সব বিষয় নিয়ে কাজ করেন। ব্যাপারটা আসলে তা না, বিজ্ঞানীরা আমাদের সবার মতোই মানুষ, হাসি কান্না আনন্দ বেদনায় তাদের জীবন। শৈশবে পড়েছিলাম শ্রদ্ধেয় আবদুল্লাহ-আল-মূতী শরফুদ্দিনের লেখা সেই বই—আবিষ্কারের নেশায়, যেখানে অনেক বিজ্ঞানীর অসামান্য জীবন ও অবদান নিয়ে লেখা হয়েছিল। আমার পেশা ও নেশা হিসেবে বিজ্ঞানকে বেছে নেওয়ার পেছনে সেই বইটির অপরিসীম ভূমিকা আছে। আমার সন্তান যায়ান ও রিনীতা যোয়ীকে রূপকথার বদলে বলি বিজ্ঞানীদের জীবনের অসাধারণ সব গল্প—যা অনেক ক্ষেত্রে হার মানায় রূপকথাকেও। প্রতিদিন, প্রতি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ওদের গল্প শোনাতে শোনাতে মনে হলো, এই গল্পগুলো সবার জানা দরকার। তাই গত বছরের বইমেলায় বিজ্ঞানীদের কাণ্ডকারখানার প্রথম খণ্ডটি লিখেছিলাম। ভেবেছিলাম অল্প কয়েকজন শিশুকেও যদি বিজ্ঞানের অপার সৌন্দর্যের আলোয় উদ্বুদ্ধ করতে পারি, তাহলে আমার এই বইটা লেখা সার্থক। আমাকে অবাক করে দিয়ে প্রচুর শিশুকিশোর, তরুণ-তরুণী বইটি পড়েছে, তারা বিজ্ঞানী ও গণিতবিদদের জীবনের কথা জেনেছে, রোল মডেল হিসেবে বেছে নিয়েছে সেই বিজ্ঞানীদের। উৎসাহের সাথে তারা সেসব কথা আমাকে জানিয়েছে, আর আমার সন্তানদের বাইরেও অনেক তরুণ মানুষকে অনুপ্রাণিত করতে পেরে আমার নিজেকে সার্থক মনে হয়েছে। সূচিপত্রঃ * ভূমিকা * লুই পাস্তুর : মন্দ জীবাণুদের ত্রাস * গণিতপ্রেমী কাজি আজিজুল হক * শশীকান্তের বিপদ * কেকুলের (দুঃ) স্বপ্ন। * আলাভোলা বিজ্ঞানী উইনার * গণিতের বরপুত্র : শ্রীনিবাস রামানুজন * অগাস্টা অ্যাডা : প্রথম প্রোগ্রামার * বোস বাবুর জেদ * লুকানো নোবেল মেডেল : নাৎসিদের বোকা বানানো * দানজিগের দেরি * টেসলার তেজ * শেওড়াতলীর মেঘনাদ : বিপ্লবী বিজ্ঞানী * গ্যালিলিওর পৃথিবী * জোসেলিন বেল বার্নেল : ভিন গ্রহের এলিয়েন শিকারি * হকিংয়ের কৃষ্ণবিবর * বেগুনি রঙের ইতিকথা। * অ্যামেজিং গ্রেইস ও তার বাগের গল্প। * স্যার টিমের বিশ্বজোড়া জাল
বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের সফলতার গল্পের সাথে যে ব্যক্তির নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত, তিনি মুনির হাসান। তিনি একইসাথে একজন বিজ্ঞানী, লেখক, ব্লগার ও উদ্যোক্তা, যিনি তারুণ্য ও উদ্যোক্তা এই দুইয়ের মেলবন্ধনে বেকারত্বের বাঁধা ডিঙোতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য উৎসাহ জাগানিয়া প্লাটফর্ম ‘চাকরি খুঁজবো না, চাকরি দেবো’ এর সাড়া জাগানো পথচলা ও সাফল্যের পেছনেও রয়েছে এই মানুষটিরই হাত। মুনির হাসানের আরেকটি পরিচয় হলো- তিনি বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক (BdOSN) এর সহকারী প্রতিষ্ঠাতা। বর্তমানে মুনির হাসান দৈনিক প্রথম আলোর যুব কর্মসূচী সমন্বয়কের কাজে নিয়োজিত আছেন। মুনির হাসানের জন্ম ১৯৬৬ সালের ২৯ জুলাই বন্দরনগরী চট্টগ্রামে। সেখানেই সেন্ট মেরিজ, মুসলিম হাই স্কুল ও মুসলিম এডুকেশন সোসাইটিতে শেষ করেন হাই স্কুলের পাঠ। বাকি শিক্ষাজীবন জুড়ে আছে চট্টগ্রাম কলেজ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম। বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডে অবদান ও সম্পৃক্ততার জন্য বন্ধু মহলে ‘ম্যাথ মুনির’ নামে পরিচিত হলেও বুয়েটে তাঁর পড়ার বিষয় ছিলো ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং। দৈনিক সংবাদের সাপ্তাহিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ফিচার পাতায় লেখালেখি করতে গিয়ে সাহচর্য পেয়েছেন আ. মু. জহুরুল হক, আবদুল্লাহ আল-মুতী, শরফুদ্দিন কিংবা এ আর খানের মতো বিজ্ঞান লেখক ও বিজ্ঞান কর্মীদের। তাঁদের অনুপ্রেরণায়ই বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করার কাজে আরও উদ্যমী হয়েছিলেন। বিভিন্ন সময়ে ভোরের কাগজ ও প্রথম আলোর বিজ্ঞান বিষয়ক ফিচার পাতারও করেছেন সম্পাদনা। অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বে ২০০৩ সালে অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদের সাহচর্যে গড়ে তোলেন বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি। বর্তমানে সেই সফল কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বরত আছেন মুনির হাসান। তাঁর অসাধারণ সব কাজের সাথে তাল মিলিয়ে, অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে সময়ে সময়ে বেশ কিছু বইও লিখেছেন মুনির হাসান। মুনির হাসান এর বই সমগ্র এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- শরবতে বাজিমাত, গ্রোথ হ্যাকিং মার্কেটিং, গল্পে গল্পে ধাঁধা, অঙ্কের ধাঁধা ধাঁধায় অঙ্ক ইত্যাদি। মুনির হাসান এর বই সমূহ এর মধ্যে লেখকের বুয়েটে জীবন নিয়ে লেখা আত্মজৈবনিক বই ‘পড়ো পড়ো পড়ো’ পেয়েছে অসম্ভব পাঠকপ্রিয়তা। তাঁর জীবনেরই মতো মুনির হাসানের বই তাঁর পাঠকদের উদ্দীপিত করে নিজের পছন্দে নিজের জীবন বেছে নিতে ও গড়ে তুলতে।