"রাজদর্শন : খ্যাতনামাদের সঙ্গে সাক্ষাতের স্মৃতিচারণা" বইয়ের সংক্ষিপ্ত কথা: “মৃত্যুসঙ্গী ও লেখক আবদুল্লাহ আল-হারুন প্রায় চার দশক ইউরোপ প্রবাসী। ১৯৭৭ সালের অক্টোবরে বিশেষ পরিস্থিতিতে দেশত্যাগ করেন তিনি। প্রথমে গ্রিস, তারপর জার্মানি। ২০০২ সালের ডিসেম্বরে চলে যান সুইজারল্যান্ড। সেখানে তিনি দাভোজের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন হোটেল গ্র্যান্ড স্টাইগেনবার্গার বেলভেদ্রে-তে নাইট অডিটর পদে চাকরি নেন। হোটেলটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে তিন হাজার ফুট উচ্চতায় দাভোজ শহরে অবস্থিত। এখানেই প্রতি বছর ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরামের সভা অনুষ্ঠিত হয়। বছরের সব সময় রাষ্ট্রপ্রধান, রাজা-বাদশাহ, প্রিন্স-প্রিন্সেস, ক্রোড়পতিরা এখানে আসেন ছুটি কাটাতে, বরফের ওপর নানান খেলা খেলতে। এই হোটেলটিতে কাজের সুবাদেই বিল ক্লিনটন, নেলসন ম্যান্ডেলা, কফি আনান, পিটার উস্তিনভ, ম্যাডোনা, বিল গেটস, পল ম্যাকার্টনি, প্রিন্স চার্লস, জিমি কার্টার প্রমুখ খ্যাতিমানদের সান্নিধ্যে আসার সুযোগ হয় লেখকের। জার্মানিতে ফিরে আসেন ২০০৫ সালে। গ্রন্থভুক্ত বাকি খ্যাতিমানদের মধ্যে দালাই লামা, এলিজাবেথ কুবলার রস, রিচার্ড গিয়ার এবং বেন কিংসলির সান্নিধ্যে লেখক আসেন জার্মানির বিভিন্ন শহরে নানা উপলক্ষে। ফারুক শেখের সঙ্গে সাক্ষাত হয় লন্ডনে, রোমান পোলানস্কির সঙ্গে ইতালির বোজেন শহরে, দাভোজে টনি ব্লেয়ার এবং শাবানা আজমীর সান্নিধ্যে আসেন লেখক। বইটি প্রথাগত যে-কোনো সাক্ষাৎকারগ্রন্থের তুলনায় অনেক দূরবর্তী এবং সমৃদ্ধ। কারণ বইটির অধিকাংশ সাক্ষাতের অভিজ্ঞতাই আকস্মিক অথচ ঘটনাবহুল, স্মৃতিময়। লেখকের অমূল্য এসব অভিজ্ঞতার বাছাই কয়েকটি নিয়ে ‘রাজদর্শন’ বইটি।”
বোহেমিয়ান লেখক Abdullah Al Haroon প্রায় চার দশক ইউরোপ প্রবাসী। বর্তমানে জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টের নিকটবর্তী নয়ে-ইজেনবর্গ শহরে থাকেন। জন্ম ১৯৪৫ সালে, রাজশাহীতে। বেড়ে উঠেছেন জামালপুরে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যের পাঠ শেষ করে '৬৮ সালে। পাবনার একটি কলেজে শিক্ষকতা দিয়ে পেশাজীবন শুরু। '৭৭ সাল অবধি কখনও আমলা, কখনও বিদেশি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তা। '৭৭ সালের অক্টোবরে দেশত্যাগ, প্রথমে গ্রিস, তারপর জার্মানি। জার্মানিতে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থনা মঞ্জুর '৮৫ সালে। '৯৩ সালে পান জার্মানির নাগরিকত্ব। প্রবাসজীবন নানা বৈচিত্র্যে ভরা। আছে দীর্ঘ বেকারত্ব, হোটেলে বাসন-কোসন ধোয়া, কাপড়ের মিলে শ্রমিক, এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট অফিসের কেরানি, হোটেলের নাইট অডিটর, প্যাকার, স্টোরকিপার, সুপারভাইজারসহ নানা রকমের পেশার অভিজ্ঞতা। ২০০২ সালের ডিসেম্বরে চলে যান সুইজারল্যান্ড। সেখানে তিনি অ্যাঙ্গেলবার্গের একটি হোটেলে এবং পরে দাভোজের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সাত তারা হোটেল গ্র্যান্ড স্টাইগেনবার্গার বেলভেদরে চাকরি নেন। সেখানে তিনি বিল ক্লিন্টন, নেলসন ম্যান্ডেলা, কফি আনান, পিটার উস্তিনভ, পল ম্যাকার্টনি, ম্যাডোনা, রোমান পোলানস্কি, বিল গেটস, টনি ব্লেয়ার, প্রিন্স চার্লস প্রমুখ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খ্যাতিমান ব্যক্তিদের সান্নিধ্যে আসার সুযোগ পান। জার্মানিতে ফিরে আসেন ২০০৫ সালে। বিচিত্র ও চমকপ্রদ এসব অভিজ্ঞতা তাঁর লেখার অনুপ্রেরণা। মৃত্যুপথযাত্রীদের শেষ সময়ে সঙ্গ দেয়ার ইউরোপিয়ান সংগঠন হজপিসের সক্রিয় সদস্য তিনি। সুযোগ পেলেই সানন্দে মৃত্যুসঙ্গ দেন। মৃত্যুসঙ্গ ও মৃত্যু নিয়ে লিখেছেন- জীবনমরণের সীমানা ছাড়ায়ে, অঙ্গবিহীন আলিঙ্গন, মৃত্যু: একটি দার্শনিক জিজ্ঞাসা এবং মত্যসঙ্গীর দিনলিপি এ চারটি বই। ২০০৮ সালের একুশে বইমেলায় প্রথম বই প্রবাসে দৈবের বশের প্রকাশ উপলক্ষে দেশে এসেছিলেন দেশত্যাগের ত্রিশ বছর পর। ২০১০ সালের নভেম্বরে অবসর জীবনের শুরু। সময় পেলে অনুবাদ কাজও করে থাকেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য অনুবাদ কাজের মধ্যে রয়েছে- সুইডিশ উপন্যাস সিটি অব মাই ড্রিমস [ইংরেজি থেকে বাংলা], হার্টা ম্যলারের উপন্যাস- আটেমসাউকেল [জার্মান থেকে বাংলা], টনি ব্লেয়ারের দি জানি, জন পার্কিনসনের– দি কনফেসনস অব এন ইকোনোমিক হিটম্যান [ইংরেজি থেকে বাংলা] ইত্যাদি। রবীন্দ্রসংগীতের বিশেষ অনুরাগী। চার ভাইবোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়, বড় ভাই বাংলাদেশের বিশিষ্ট নাট্যজন আবদুল্লাহ আল-মামুন।