"সংস্কৃতি ভাবনা" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: প্রাবন্ধিক বুদ্ধিজীবী যতীন সরকারের অন্যতম অবদান সংস্কৃতির প্রকৃত রূপের সঙ্গে পাঠক সাধারণকে সংযুক্ত করা। পুঁজিবাদী বিশ্বায়নের যুগে সংস্কৃতি যখন পণ্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে এবং পণ্য ভােগবাদের রমরমা যুগে যখন সংস্কৃতি ও বিনােদন সমার্থক প্রপঞ্চে পরিণত হয়েছে তখন তিনি চুলচেরা বিশ্লেষণ করে সংস্কৃতি ও বিনােদনের পার্থক্য চিনিয়ে দেন। দেশসেরা সংস্কৃতিতাত্ত্বিক তিনি। হাঙ্গেরির দার্শনিক লুকাচ সংস্কৃতিকে সকল মানবিক কর্মকাণ্ডের লক্ষ্যবিন্দ এবং রাজনীতিকে সে লক্ষ্যৰিন্দতে পৌঁছার পথ হিসেবে দেখেছিলেন। লুকাচের অনুসারী যতীন সরকার সংস্কৃতিকে রাজনীতির চূড়ায় বসিয়ে সংস্কৃতির মধ্যে যে অনুশীলনজাত মননগত উৎকর্ষ ও মূল্যবােধ রয়েছে তা দিয়ে রাজনীতিকে পরিশ্রুত করার কথা বলেছেন। তিনি মনে করেন এদেশে সংস্কৃতির মহৎ মানবিক লক্ষ্যকে ছাপিয়ে উঠেছে রাজনীতির সংকীর্ণ কৌশল। তাই রাজনীতিকে পরিশােধিত করতে হলে, মুক্তিযুদ্ধের অপহৃত মূল্যবােধকে পুনরুদ্ধার করতে হলে, ধর্মাশ্রিত জঙ্গিবাদকে রুখে দাঁড়াতে হলে যথার্থ সাংস্কৃতিক জাগরণের কোনাে বিকল্প নেই। এই জাগরণ শুধু শহুরে শ্রেণির মুষ্টিমেয় সুবিধাভােগী নয়, গ্রামের প্রান্তিক জনগােষ্ঠীরও। এই সম্মিলিত জাগরণই পারে আমাদের চেতনাগত পশ্চাৎপদতার মূল উপড়ে ফেলতে। যতীন সরকারের সংস্কৃতি ভাবনা' এই প্রত্যয়েরই ধারক।
Jatin Sarker জন্ম : নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার চন্দপাড়া গ্রামে ২ ভাদ্র ১৩৪৩, ১৮ আগস্ট ১৯৩৬ । দীর্ঘ চার দশক ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অধ্যাপনা করেন। উল্লেখযোগ্য গ্ৰন্থ : সাহিত্যের কাছে প্রত্যাশা, বাংলাদেশের কবিগান, বাঙালীর সমাজতান্ত্রিক ঐতিহ্য, সংস্কৃতির সংগ্রাম, মানবমন মানবধর্ম ও সমাজবিপ্লব, গল্পে গল্পে ব্যাকরণ, দ্বিজাতিতত্ত্ব নিয়তিবাদ ও বিজ্ঞানচেতনা, সংস্কৃতি ও বুদ্ধিজীবী সমাচার, আমাদের চিন্তাচৰ্চার দিক-দিগন্ত, ধৰ্মতন্ত্রী মৌলবাদের ভূত ভবিষ্যৎ ভাষা সংস্কৃতি উৎসব নিয়ে ভাবনা চিন্তা, প্রাকৃতজনের জীবনদর্শন, সত্য যে আমার যেটুকু সাধ্য । সম্পাদিত গ্ৰন্থ : সোনার তরী, প্রসঙ্গ : মৌলবাদ, জালালীগীতিকা সমগ্ৰ । বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাবেক সভাপতি এবং ত্রৈমাসিক সমাজ অর্থনীতি ও রাষ্ট্র পত্রিকার সম্পাদক । মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক অনবদ্য আত্মজীবনী পাকিস্তানের জন্ম মৃত্যু-দৰ্শন ‘প্রথম আলো বর্ষসেরা বই-এর পুরস্কারে সম্মানিত। সর্বোচ্চ রাষ্ট্ৰীয় সম্মান স্বাধীনতা পুরস্কার ও বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেছেন।