ভূমিকা উবুন্টু একটি লিনাক্সভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম, যা গত এক দশকে ডেস্কটপ ও ল্যাপটপ কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। বর্তমানে লিনাক্সভিত্তিক অনেক অপারেটিং সিস্টেম চালু রয়েছে, তার মধ্যে ডেস্কটপ/ল্যাপটপ ব্যবহারকারীদের কাছে উবুন্টু সবচেয়ে জনপ্রিয়। উইন্ডোজের তুলনায় লিনাক্স ব্যক্তিগত কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের কাছে অপেক্ষাকৃত অপরিচিত, তাই এটি নিয়ে অনেকেরই এক ধরনের ভীতি কাজ করে। উবুন্টুর ওপর একটি বাংলা বই সেই ভীতি দূর করতে সহায়ক হবে বলেই আমি মনে করি। আরো অনেক লিনাক্সভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেমের মতো উবুন্টুও বিনা মূল্যে পাওয়া যায়। যদিও আমাদের দেশের কম্পিউটার ব্যবহারকারীরা সফটওয়্যার পাইরেসির ব্যাপারে তেমন সচেতন নন, কিন্তু আমাদের জানা প্রয়োজন যে, সফটওয়্যার পাইরেসি আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। আর যখন আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠানের জন্য কম্পিউটার কিনব – সেটি হতে পারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত, কিংবা ব্যবসায়-প্রতিষ্ঠান, তখন কিন্তু সঠিক লাইসেন্স নিয়েই অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করতে হবে। এখন বাংলাদেশে যদি প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে ১০ লাখ কম্পিউটার ব্যবহার করা হয় (ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করলে সংখ্যাটি আরো বড়ো হতে পারে) আর প্রতিটি কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেমের জন্য আমাদের ১০ হাজার টাকা খরচ করতে হয়, তাহলে মোট কত টাকা আমরা দেশের বাইরে পাঠিয়ে দিচ্ছি, সে হিসাবটি আমি পাঠকের হাতেই ছেড়ে দিলাম। তাই লিনাক্সভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেমই হতে পারে আমাদের জন্য সঠিক অপারেটিং সিস্টেম। উবুন্টু ফ্রি ও ওপেনসোর্স সফটওয়্যার। এখানে সফটওয়্যারের সঙ্গে সঙ্গে সোর্সকোড পাওয়ার স্বাধীনতা, নিজের ইচ্ছেমতো সোর্সকোড পরিবর্তনের স্বাধীনতা ও সফটওয়্যারটি অন্য কাউকে দেওয়ার স্বাধীনতা থাকে (যেটি বেশিরভাগ সফটওয়্যারের ক্ষেত্রেই থাকে না), যা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের জন্য প্রস্তুত হতে হলে প্রযুক্তিই আমাদের একমাত্র হাতিয়ার। আর সেটি শুধু প্রযুক্তির ব্যবহার করেই হবে না, বরং প্রযুক্তিকে নিজেদের বশে আনা এবং প্রয়োজনমতো প্রযুক্তি ব্যবহার ও তৈরি করাও আমাদের শিখতে হবে। আমরা যদি সেদিকে এগিয়ে যেতে চাই, তাহলে আমাদের দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষকে লিনাক্স ব্যবহারে অভ্যস্ত হতে হবে, তার পরের ধাপেই আমরা হয়তো লিনাক্সের সোর্স কোড পরিবর্তন করে নিজেদের প্রয়োজনমতো গড়ে নিতে পারব – তাতে আমাদের প্রোগ্রামারদেরও সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। তাই প্রথম ধাপটি, অর্থাৎ লিনাক্সভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উবুন্টুর ওপর এরকম একটি সহজ-সরল বাংলা বই লেখার জন্য লেখককে আমি অভিনন্দন জানাই। আশা করি, এটি উবুন্টুর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। - তামিম শাহ্রিয়ার সুবিন
লেখকের কথা সবার জন্য উবুন্টু বইতে আপনাকে স্বাগত! বাংলাভাষী কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের কথা ভেবে এই বইটি লেখা হয়েছে। উবুন্টু অপারেটিং সিস্টেমটি মাত্রই ব্যবহার শুরু করেছেন অথবা অল্প কিছুদিন ধরে ব্যবহার করছেন – এমন ব্যবহারকারীদের যেসব সাধারণ বিষয় জানা থাকা প্রয়োজন, যেমন – উবুন্টু ইনস্টল করা, দৈনন্দিন কাজের জন্য বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন পরিচিতি, কমান্ড ব্যবহারসহ আরো বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে বইটিতে আলোচনা করা হয়েছে। প্রতিটি বিষয় বিস্তারিতভাবে ধাপে ধাপে বর্ণনা করা হয়েছে, যেন বর্ণনা অনুসরণ করে খুব সহজেই কাজগুলো সম্পন্ন করা যায়। ক্যানোনিকাল প্রতি ছয় মাসে একবার উবুন্টুর নতুন সংস্করণ প্রকাশ করে থাকে। প্রতি চার সংস্করণ পরপর অর্থাৎ 2 বছর পরপর লং টার্ম সাপোর্ট (Long Term Support) বা এলটিএস (LTS) সংস্করণ প্রকাশ করা হয়। প্রতিটি উবুন্টু সংস্করণের ভার্শন নম্বর সেই সংস্করণের প্রকাশের বছর এবং মাসের সংখ্যার ওপর নির্ভর করে নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। পাশাপাশি একটি কোড নেম ব্যবহার করা হয়, যার প্রথম অংশে থাকে একটি বিশেষণ এবং দ্বিতীয় অংশে থাকে একটি প্রাণীর নাম! যেমন, উবুন্টুর সাম্প্রতিক সংস্করণ 18.04 (Bionic Beaver) একটি এলটিএস সংস্করণ, যা পরবর্তী 5 বছর নিয়মিত আপডেট করা হবে। এর পূর্ববর্তী এলটিএস সংস্করণটি ছিল 16.04। এই বইটি লেখা হয়েছে একেবারে নতুন ব্যবহারকারীদের কথা মাথায় রেখে। নতুন উবুন্টু ইনস্টল করা, সাধারণ কাজের জন্য বিভিন্ন সফটওয়্যার ব্যবহার করা, কাজের সুবিধার জন্য বিভিন্ন ধরনের সেটিংস পরিবর্তন করা, অথবা নিজের পছন্দমতো কাস্টমাইজ করাসহ আরো নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এখানে। এ ছাড়া যারা প্রোগ্রামিং শিখতে আগ্রহী তাদের জন্য প্রোগ্রামিং-সহায়ক বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশনের ব্যবহার এবং এ-সম্পর্কিত টিপস দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি প্রোগ্রামিংয়ের একেবারে শুরুর ধাপগুলোও আলাদা অনুচ্ছেদে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে। উবুন্টু এবং এর বিভিন্ন ব্যাবহারিক দিক সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে চাইলে এই বই-সম্পর্কিত ওয়েবসাইটে (http://ubuntuforall.com/) আলোচনা করা যেতে পারে। পাশাপাশি উবুন্টু অফিসিয়াল ফোরাম থেকেও বিভিন্ন বিষয়ে সাহায্য পাওয়া যাবে। সূচীপত্র • ভূমিকা • লেখকের কথা • লেখক পরিচিতি • অপারেটিং সিস্টেম (Operating System) • অপারেটিং সিস্টেমের ধরন • লিনাক্স • উবুন্টু-এর ইতিহাস • উবুন্টু দর্শন • উবুন্টু ইনস্টল করা • ইনস্টলের আগে করণীয় • কীভাবে পাওয়া যাবে উবুন্টু • বিভিন্ন ফ্লেভারের উবুন্টু • 32-বিট ও 64-বিট সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য • বুটেবল ডিভাইস তৈরি করা • উবুন্টু লাইভ • উবুন্টু ইনস্টলেশনের ধাপসমূহ • বুটলোডার – GNU GRUB • বুটলোডার/গ্রাব আপডেট করা • উবুন্টু ডেস্কটপ • ডেক্সটপ পরিচিতি • GNOME • উবুন্টু কিবোর্ড শর্টকাট • ফাইলস : উবুন্টু ফাইল ম্যানেজার • ডেক্সটপ কাস্টমাইজ করা • জিনোম টুইকস (GNOME Tweaks) • হিডেন ফাইল ও ডিরেক্টরি • উবুন্টুতে বিভিন্ন কাজের সফটওয়্যারসমূহ • অফিস স্যুট (Office Suite) • ইমেইল অ্যাপ্লিকেশন • ওয়েব ব্রাউজার • পিডিএফ রিডার • মিডিয়া প্লেয়ার • মিউজিক প্লেয়ার • সিডি ডিভিডি বার্ন করা • ছবি ব্যবস্থাপনা • ছবি সম্পাদনা • মেসেঞ্জার • VoIP অ্যাপ্লিকেশন • বিট টরেন্ট অ্যাপ্লিকেশন • টার্মিনাল • উবুন্টুতে বাংলা লেখা • কিবোর্ড পরিবর্তনের শর্টকাট • প্রভাত কিবোর্ড লে-আউট • ওপেন বাংলা কিবোর্ড • উবুন্টুতে অভ্র ফোনেটিক কিবোর্ড ব্যবহার • উবুন্টুতে বিজয় কিবোর্ড ব্যবহার • উবুন্টুতে ইন্টারনেট ব্যবহার • উবুন্টু নেটওয়ার্ক সেটিংস • ব্রডব্যান্ড সংযোগ স্থাপন (Auto Ethernet) • ব্রডব্যান্ড সংযোগ স্থাপন (Static) • ব্রডব্যান্ড সংযোগ স্থাপন (DSL বা PPPoE) পদ্ধতি-1 • ব্রডব্যান্ড সংযোগ স্থাপন (DSL বা PPPoE) পদ্ধতি-2 (টার্মিনাল থেকে) • জিপিআরএস বা এজ মডেম দিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহার (পদ্ধতি-1) • হার্ডওয়্যার ব্যবস্থাপনা • অতিরিক্ত ড্রাইভার ইনস্টল করা • সফটওয়্যার ব্যবস্থাপনা • উবুন্টু সফটওয়্যার