“তাজউদ্দিন আহমদ: এক তরুণের রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠা" বইটির ফ্ল্যাপ এর লেখাঃ বাংলাদেশ আন্দোলন বিবেচনা করলে প্রথমেই আসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথা। তারপর তাঁর ছায়াসঙ্গী তাজউদ্দীন আহমদের কথা। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আজ প্রায় ৫০ বছর পর দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় তাঁদের সম্পর্কে আমাদের জানার পরিধি অনেক কম। তাজউদ্দীন আহমদের কথা বাদ দিই, বঙ্গবন্ধু সম্পর্কেও অনেক ধারণা অস্পষ্ট থেকে যেত যদি না তাঁর কন্যা ক্ষমতায় আসতেন। এর কারণও উপেক্ষা করা যায় না। বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর প্রায় ত্রিশ বছর পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কাজ করার পরিস্থিতি ছিল না। সরকারে ছিল পাকিস্তানপন্থী দল। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বড় ভূমিকা রাখতে পারতেন। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ছাত্র শিক্ষক হিসেবে যুক্ত আজ প্রায় ৫০ বছর। আমি দায়িত্ব নিয়েই বলছি, আমরা শিক্ষকরা এ ক্ষেত্রে নিজ দায়িত্ব পালন করিনি। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে, বঙ্গবন্ধু কে নিয়ে মানবিক ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষকরা যে পরিমাণ কাজ করতে পারতেন তা করেননি। বরং প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমাজের বাইরে যারা আছেন তারাই লিখেছেন, সেটি কবিতা, গল্প, উপন্যাস, বিবরণ, গবেষণা যাই হােক-না-কেন। এতে আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠের সুবিধাভােগী মনােভাবই ফুটে ওঠে..
মুনতাসীর মামুনের পৈতৃক বাড়ি চাঁদপুর জেলার গুলবাহার গ্রামে, কিন্তু তিনি ঢাকার ইসলামপুরে নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামে। সেখানেই পোর্ট ট্রাস্ট প্রাইমারি ও হাই স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা নেন। পরে ভর্তি হন চট্টগ্রাম কলেজে। অতঃপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে স্নাতক, স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন এবং একই বিভাগ থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। শিক্ষাজীবনে সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত ছিলেন, কাজ করেছেন ‘দৈনিক বাংলা বিচিত্রা’য়। এছাড়াও স্বাধীনতার পর প্রথম ডাকসু নির্বাচনের সম্পাদক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সংসদের সভাপতি হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৭৪ সালে প্রভাষক পদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপরই তার বিভিন্ন অনুবাদগ্রন্থ, চিত্র সমালোচনা এবং ইতিহাস বিষয়ক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। ইতিহাসের প্রতি তার ভালোবাসা এবং দায়িত্ববোধ থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে 'মুক্তিযুদ্ধ বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ গবেষণা ইন্সটিটিউট' প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলার ইতিহাসকে তিনি প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চান- এই উদ্দেশ্যেই মুনতাসীর মামুনের বই লেখা। একজন শিক্ষক হওয়ার পাশাপাশি তিনি একজন ইতিহাসবিদ ও সাহিত্যিক। ঢাকা শহর নিয়ে তার রয়েছে গবেষণাপত্র। গড়ে তুলেছেন ‘সেন্টার ফর ঢাকা স্টাডিজ’ নামের ইতিহাস চর্চার একটি প্রতিষ্ঠান, যেখান থেকে মুনতাসীর মামুন এর বই সমগ্র তথা ১২টি গবেষণামূলক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। মননশীল এই লেখক দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে লিখে যাচ্ছেন নানা বিষয়ে। মুনতাসীর মামুন এর বই সমূহ এর বিষয় বহুমাত্রিক। তার গ্রন্থের সংখ্যা ২২০, যাতে স্থান পেয়েছে গল্প, প্রবন্ধ, গবেষণা এবং অনুবাদ সাহিত্য। শিশু-কিশোরদের নিয়েও তার লেখা গ্রন্থ প্রশংসা কুড়িয়েছে। গণতান্ত্রিক আন্দোলনেও তার সক্রিয় উপস্থিতি লক্ষ্যণীয়। বর্তমানে এই ইতিহাসবিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিষয়ের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।