"দারুণ গল্পের লোক" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: ভূমিকাটাও গল্পের মত। রূপকথার গল্প নয়, মাটির মানুষের গল্প। ভেতরের গল্পগুলােও পাঠকদের ভালাে লাগবে সে আশা থাকলাে। ...নদীর এ পাড়ে একটা ছােটমােট ঘাট। আমি ঘাটের। উপর দাড়িয়ে আছি। প্রচন্ড কুয়াশা এসে নাকে মুখে লাগছে। চাঁদের আলাের নিচে কুয়াশাকে লাগছে ধোঁয়ার মত। কুয়াশা কুণ্ডলী পাকিয়ে পাকিয়ে নদীর বুক শাদা করে ফেলেছে। একটা শাদা চাদর আমার গায়ে পেছানাে, ভেতরে পাঞ্জাবি, দুই হাত দুই পকেটে। নদীর কুলের দিকে ঘন বাগান। সেদিকে চাঁদের আলাে আর কুয়াশা মিলে এক অস্পষ্ট জগত তৈরী করে রেখেছে। আমি অপেক্ষা করছি একজনের জন্য। তিনি গল্প নিয়ে আসছেন। মানুষকে গল্প নিয়ে আসতে হয় না। একেকজন মানুষ নিজেই জীবন্ত গল্প। যিনি আসছেন তিনি শতবর্ষী একজন প্রাচীন মানুষ। তাঁর কাছে অনেক প্রাচীন গল্প শুনতে পাই। তাঁকে নিয়ে ঘাট ছেড়ে আমরা গ্রামের মাঝখানে ফিরে যাব। পথে আমার বাবার কবর পড়বে। সেখানে কিছুক্ষণ দাঁড়াবাে আমরা। আমি মাঝে মাঝে শুনতে পাই আব্বা আবু তাহের আমাকে ডাকছেন, 'বাবা ইয়াছিন! তাই সেখানে কিছুক্ষণ না দাঁড়িয়ে পারব না। তারপরে নিরব জনপদে রাতের নিস্তব্ধতা অক্ষুন্ন রেখে চলে যাব গন্তব্যে। তবে আমরা যেখানে যাব সেটা শেষ গন্তব্য না। একটা। অস্থায়ী স্টেশন মাত্র। জগত চলে যাচ্ছে জগতের নিয়মে-ধীরে। মানুষও চলে যায়। কিন্তু মানুষের কথাগুলাে থেকে যায়। মানুষের জীবনের কথা কখনাে শেষ হয় না। অনেক বলা কথা, অনেক না বলা কথা ঘুরে বেড়ায়। সে সব হাওয়ায় ভেসে বেড়ানাে কথাগুলাে মাঝে মাঝে কণ্ঠ খুঁজে পায়; মাঝে মাঝে সে সব কথা সাহিত্যে গেঁথে যায় পাতায় পাতায়। গল্পকারেরা বলে যান গল্পমালা। ‘দারুণ গল্পের লােক আমার প্রথম গল্পগ্রন্থ। ১৬টি গল্পের প্রত্যেকটা গল্পই ভিন্নমাত্রায় দারুণ রকমের মানুষের বর্ণিল জীবনের নানান গল্প আছে এখানে। প্রত্যেকটা গল্পই অসাধারণ এবং প্রত্যেকটা গল্পই পেয়েছে স্বাভাবিক সমাপ্তি।