সেবার বই ছাপার কারখানা থেকে অজস্র রঙ করার বই ছাপা হলাে। হু হু করে বাচ্চারা কিনে নিলাে সেই বই। শুধু একটা বই দোকানের অসংখ্য বই এর ভিড়ে গেল হারিয়ে। সেই বইটিতে ছিল এক শহর। এক সাদা কালাে রঙহীন শহর। সেই শহরে ছিল সবকিছু। বড় ছােট, ঘর বাড়ি, বাগান পার্ক মানুষ সব! রঙের অভাবে সেই শহরে আলাে ছিল না, অন্ধকার ছিল যে তাও বলি কী করে! এক অদ্ভুত মরে যাওয়া আলাে যেন চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতাে, সেখানের সূর্যটাকে এখনাে কেউ রঙ করেনি দেখে সে এমনেই বােকার মত ঝুলে থাকতাে উপরে। তার ছিল না কোনাে কাজ। মানুষগুলাে ভেবে নিতে হবে কিছু, এত কি ভাবার সময় আছে? ছিলনা সাতরঙা রঙধনু। আসলে ছিল কিন্তু সে বেরঙা সাদা রঙের সাদটা দাগ হিসেবে সূর্যটার পাশে ঝুলে থাকতাে। একটা গুমােট শ্যাতশ্যাতে পরিবেশ থাকতে চারদিকে। কিন্তু মানুষ যে দুঃখে থাকতাে তা কিন্তু না!বেশ আনন্দে ছিল তারা, ধূসর শহরটাতে তারা বেশ ছিল। বাচ্চারাও আনন্দে বড় হচ্ছিলাে, স্কুলে যেতাে, বড়রা যেতাে অফিসে কাজে-কর্মে। গলির মাথায় মাথায় থাকতাে ফেরিওয়ালারা, সজি বিক্রেতারা। সকাল বিকেল সেখানে মহিলারা ভিড় করতাে কেনাকাটাতে। আপাতদৃষ্টিতে তাদের দুখী মনে হলেও তারা কি তাই ছিল বলে মনে হয়? উহু এভাবে আনন্দেই কেটে গেল কত বছর। একদিন অন্যান্য বই বের করতে গিয়ে বইটি বের হয়ে আসলাে। একটা বাচ্চা তা দেখে কান্না জুড়ে দিলাে তার চাই সেই বই। বিরক্ত অফিস ফেরত বাবা বাচ্চার কান্না থামাতে বইটি বগলদাবা করে বাড়ি ফিরলেন ছেলেকে নিয়ে। ছেলে বইটি নিয়ে ছুটলাে তার ঘরে। ড্রয়ার খুঁজে বের করলাে পুরনাে রঙগুলাে। ঝটপট রঙ করা শুরু করে দিলাে। কিন্তু রঙ করার সাথে সাথে শহরে ঘটতে লাগলাে যেন আজব আজব ঘটনা। বই এর শহরের মানুষরা তাে অবাক। এ কী হচ্ছে চারপাশে!সাদা কালাে রঙ এর বাইরের অন্য রঙ এর সাথে পরিচিত হতে লাগলাে তারা। হুড়মুড় করে ঘটে যেতে লাগলাে নানা ঘটনা। সবার বাড়ি হয়ে গেল রঙিন। পােশাক থেকে শুরু করে গায়ের রঙ হয়ে গেল পৃথক। গন গন করে সূর্য আলাে ছড়াতে লাগলাে।