"একটা দেশ যেভাবে দাঁড়ায়"বইটির ১ম ফ্লাপের কিছু কথা: শিক্ষা যদি একটি জাতির মেরুদণ্ড হয়, তাহলে শিক্ষাঙ্গনগুলাে হলাে সে মেরুদণ্ডের কশেরুকা। কশেরুকা দুর্বল হয়ে গেলে যেমন মানুষের মেরুদণ্ড দুর্বল হয়ে যায়, মানুষ সােজা হয়ে দাঁড়াতে পারে না, তেমনি শিক্ষাঙ্গন। দুর্বল হয়ে গেলে একটা জাতি শির উঁচু করে ঋজু হয়ে। দাঁড়াতে পারে না। একটি দেশকে জাগাতে হলে শিক্ষাঙ্গনকে জাগাতে হয়। গবেষণাকে সংস্কৃতিতে রূপ। দিতে হয়। একজন মানুষকে মূল্যায়ন করতে হয় শুধু কর্ম দিয়ে। যােগ্যকে উপযুক্ত স্থান দিতে হয়। অযােগ্যকে আগাছার মতাে ধীরে ধীরে তুলে ফেলতে হয়। তারুণ্যের আগ্রহ ও নেশাকে রাষ্ট্রের সম্পদে রূপ দিতে হয়। মেধাকে লালন করতে হয়। মেধার তীব্র প্রতিযােগিতা প্রতিষ্ঠা করতে হয়। সারা দুনিয়ার সাথে জ্ঞান-গবেষণার আদান-প্রদান থাকতে হয়। আর এই বিষয়গুলােই অণুপ্রবন্ধ আকারে রচিত হয়েছে একটা দেশ যেভাবে দাঁড়ায়’ বইটিতে। বইটি পড়তে পড়তে পাঠকের সামনে একটি কালের দর্পণ ভেসে উঠবে। বৈশ্বিক প্রতিযােগিতার এই সময় একটি সমাজ ও সমাজের তারুণ্য কী করে সগৌরবে সমহিমায় দাঁড়াবে, সেসব দিকনির্দেশনা ও রূপরেখা দৃশ্যমান হয়ে উঠবে সেই দর্পণে। ভূমিকা: প্রায় দুই বছর আগে রউফুল আলমের সঙ্গে আমার পরিচয় হয় তার লেখার মাধ্যমে। দৈনিক প্রথম আলাে’ ও সােশ্যাল মিডিয়ায় উচ্চশিক্ষা ও বিজ্ঞান-প্রযুক্তি বিষয়ক তার কয়েকটি লেখা ও অভিমত আমার নজরে পড়ে। ইউরােপ-আমেরিকার শিক্ষাব্যবস্থা ও গবেষণা সংস্কৃতির রীতিনীতির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের পশ্চাৎপদতা, সামাজিক উদাসীনতা ও সীমাবদ্ধতা এবং তরুণদের আকুতি নিয়ে প্রেরণামূলক লেখাগুলাে পড়ে আমি বেশ মুগ্ধ হই । ‘একটা দেশ যেভাবে দাঁড়ায়’ বইটি মূলত দৈনিক প্রথম আলাে এবং অন্যান্য বিজ্ঞান কাগজে বিভিন্ন সময় প্রকাশিত তাঁর অণুপ্রবন্ধগুলাের (Short Articles) একটি সংকলন। এই লেখাগুলােতে বিশ্বজুড়ে চলমান জ্ঞান-গবেষণার প্রতি লেখকের গভীর পর্যবেক্ষণ ও ভালােবাসা ফুটে ওঠে। পাশাপাশি বাংলাদেশের মতাে একটি উন্নয়নশীল দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে গবেষণা ও তারুণ্যের মেধাশক্তি কীভাবে বৈপ্লবিক ভূমিকা রাখতে পারে, সে বিষয়গুলাে তিনি তুলে ধরেছেন। কীভাবে শত সীমাবদ্ধতার মাঝেও এই প্রতিযােগিতাময় পৃথিবীতে বাংলাদেশ মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে, এ দেশের নতুন প্রজন্মের মেধাবী তরুণেরা যুগােপযােগী পদক্ষেপ নিতে পারবে, সে বিষয়ক দিকনির্দেশনার প্রতিফলন ঘটেছে। দেশের গবেষণা সংস্কৃতির চলমান অবস্থা, নীতিনির্ধারকদের অজ্ঞতা এবং সীমাহীন অবহেলা, শিক্ষক এবং গবেষক নিয়ােগে অনিয়ম প্রভৃতি কীভাবে আমাদের মেধাবী তরুণ-তরুণীদের প্রতিনিয়ত বৈশ্বিক প্রতিযােগিতায় (Global Competition) পিছিয়ে দিচ্ছে—বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তসহ উপস্থাপিত হয়েছে বইটিতে। অদূর ভবিষ্যতের পৃথিবীতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যাপ্তি, প্রসার এবং সুযােগ মানব সভ্যতায় এক অভূতপূর্ব সামাজিক ও অর্থনৈতিক রূপান্তরের কারণ হবে। দেশে মূল্যবােধের অবক্ষয়ের এই কালে একবিংশ শতাব্দীর কিশাের ও তরুণদের আমরা কীভাবে উদ্বুদ্ধ করব, কীভাবে তাঁদের মানবসম্পদে গড়ে তুলতে মানসম্পন্ন গবেষণার দ্বার উন্মােচন করব, নতুন শিল্পবিপ্লবের উপযােগী কারিগরি প্রশিক্ষণ দিয়ে তাঁদের বাহু এবং দৃষ্টিকে প্রসারিত করতে পারব—তারই আলােচনা করা হয়েছে বইটিতে। | যারা দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবেন এবং কিশাের-তরুণদের জীবনকে পরিবর্তনের জন্য কাজ করতে চান—এ বইটি তাদের জন্য খুবই সহায়ক ও উদ্দীপক হবে বলে আমার বিশ্বাস।
জন্ম ১৫ আগস্ট, কুমিল্লায়। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক শেষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কেমেস্ট্রি পড়েছেন। তারপর সুইডেনের স্টকহোম ইউনিভার্সিটি থেকে অর্গানিক কেমেস্ট্রিতে মার্স্টাস এবং পিএইচডি শেষে সুইডিশ কেমিক্যাল সোসাইটির স্কলারশিপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনির্ভাসিটি অব প্যানসেলভ্যানিয়ায় (UPenn) পোস্টডক্টরাল গবেষণা করেন। বর্তমানে তিনি আমেরিকার নিউজার্সিতে ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ড্রাস্টিতে সিনিয়র সাইন্টিস্ট হিসেবে কাজ করছেন। লেখালেখির সাথে তার সম্পৃক্ততা বহুদিনের। দেশের জাতীয় দৈনিকগুলোতে নিয়মিত লিখেছেন তিনি। তার অণুপ্রবন্ধের বই “একটা দেশ যেভাবে দাঁড়ায়” পাঠক সমাদৃত। বাংলাদেশের টেকসই, সুষম উন্নয়নের জন্য তিনি তার অভিজ্ঞতা ও দিকনির্দেশনগুলো লেখার মাধ্যমে প্রকাশ করে যাচ্ছেন।