গুড্ডুবুড়াদের বাড়িতে মুরগি ডিম দিল। তারপর সেই মুরগি বাচ্চা ফোটাল ৮টা। একদিন খুব গরম পড়েছে। গুড্ডুবুড়া ঘেমে একাকার। সে গেল বারান্দায়। গিয়ে দেখে, মুরগিটা ঝিমোচ্ছে। মুরগির বাচ্চাগুলো পানি খাওয়ার জন্য বাটিতে ঠোঁট নামিয়েছে। আহা, গরমে কষ্ট পাচ্ছ বলে গুড্ডুবুড়া একটা মুরগির বাচ্চা ধরে নিয়ে গিয়ে ফ্রিজে রেখে দিল। আরও নেবে বলে আসতেই মা মুরগি ওর হাতে দিল ঠোকর। ও ভয়ে পালিয়ে এল। মুরগির বাচ্চাটা মারা গেল ফ্রিজে। তাই নিয়ে গুড্ডুবুড়ার কী কান্না। সে তো ভালো করতে চেয়েছিল। খারাপ হয়ে গেল যে...
ওদের বাড়িতে কোনো পাহারাদার নেই। গরমের দিন। জানালা না খুলে ঘুমোনো যায় না। কিন্তু জানালা খুলে ঘুমালে প্রায়ই ওদের বাড়িতে চোর আসে। একবার তো ওর দাদিমার কানে হাত দিয়ে কানের দুল পর্যন্ত খুলে নিয়ে গিয়েছিল। কী করা যায়। চোরটাকে তো ধরতে হবে। গুড্ডুবুড়া একটা ইঁদুর ধরা কল জানালার কাছে টেবিলের ওপরে রেখে দিল। বাইরে থেকে দেখা যায় না। রাতের বেলা ফল ফলল মারাত্মক। জানালায় চোর এসে যেই-না হাত দিয়েছে, অমনি ইঁদুরের কল তার হাত ধরল কামড়ে। চোরটা হাত টানতেই আরও ব্যথা লাগছে। ততক্ষণে বাড়ির সবাই জেগে উঠেছে। চিৎকার চেঁচামেচিতে রাস্তার পাহারাদারেরা ছুটে এল। এরপর থেকে গুড্ডুবুড়াদের বাড়িতে আর চোর আসে না...
আনিসুল হক, বাংলাদেশে গত শতাব্দীর আশির দশকে আবির্ভূত হওয়া একজন প্রখ্যাত কবি, কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার ও সাংবাদিক। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, গদ্যকার্টুন, রম্যরচনা, ভ্রমণকাহিনী, শিশুসাহিত্যসহ সাহিত্যের নানা ক্ষেত্রে রয়েছে তার সাবলীল বিচরণ। বর্তমানে বাংলাদেশের জনপ্রিয় দৈনিক প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক এবং কিশোর আলোর সম্পাদক হিসেবে কর্মরত আছেন। আনিসুল হকের জন্ম ১৯৬৫ সালের ৪ মার্চ নীলফামারীতে। শিশু মনোবিজ্ঞানের শিক্ষক বাবার অনুপ্রেরণায় ছোটবেলা থেকেই আগ্রহ জন্মেছিলো লেখালেখি আর ছবি আঁকায়। ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন সাহিত্যজগতে প্রবেশ করেন প্রথম কবিতার বই ‘খোলা চিঠি সুন্দরের কাছে’ প্রকাশের মধ্য দিয়ে। আনিসুল হক এর বই প্রকাশের কালটি ছিলো উত্তাল স্বৈরশাসনবিরোধী আন্দোলনের সময়। আনিসুল হক এর বই সমূহ প্রেমের প্রতি পক্ষপাত করলেও একইসাথে সেসময়ের রাজনৈতিক অস্থিরতার চিত্রও ফুটিয়ে তুলেছে। তাঁর অন্যান্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘আমি আছি আমার অনলে’, ‘আসলে আয়ুর চেয়ে বড় সাধ তার আকাশ দেখার’, এবং ‘জলরংপদ্য’। মুক্তিযুদ্ধের সত্য ঘটনা নিয়ে লেখা উপন্যাস ‘মা’, আনিসুল হক এর বই সমগ্র এর মধ্যে পাঠকের মনে সবচেয়ে বেশি দাগ কেটেছিল। এছাড়াও ‘বীর প্রতীকের খোঁজে’, ‘নিধুয়া পাথার’, ‘আয়েশামঙ্গল, খেয়া’, ‘ফাঁদ’, ‘বেকারত্বের দিনগুলিতে প্রেম’, ‘ভালোবাসা আমি তোমার জন্য কাঁদছি’, ‘ফাল্গুন রাতের আঁধারে’ তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস। বিভিন্ন স্বনামধন্য পত্রিকার সম্পাদকের ভূমিকা পালন করেছেন দীর্ঘদিন, এখনও লিখে যাচ্ছেন পত্রিকার কলাম। লিখেছেন বেশ কিছু টেলিভিশন নাটক ও সিনেমার চিত্রনাট্যও। কথাসাহিত্যে অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ বেশ কিছু পুরস্কার পেয়েছেন বাংলা সাহিত্যের আধুনিক এই লেখক।