মিজানুর রহমান নাসিমের গল্পে আরােপিত সুখ বা ত্যালত্যালে রােমান্টিকতা নেই। তার গল্পের মানুষেরা প্রায়শঃ পরাজিত, বিবর্ণ, অস্থির-ভঙ্গুর, পলাতক; যেখানে অনিবৃত্ত ঘটনাবলী রুদ্রাক্ষের মালার মতাে চোখ পাকিয়ে থাকে আমাদের দিকে। ভঙ্গুর সময়ের ভাঁজে ভাঁজে মানুষের চিৎকার ঝাঝালাে, ফেনিল টগবগে। কখনও মিয়মান, শব্দহীন, চিমড়ে নদীর মতাে চুইয়ে বয়ে চলা। কখনও অদৃশ্য অথচ পাকাপােক্ত, জরায়-খরায় লেপ্টানাে জীবনকথার সুপ্ত খনিজ স্তর। সেই স্তর কেটে কেটে তিনি জীবনের মৌল আকর, দেশকালে তার নিগুঢ় অভিঘাত-অবভাসকে তুলে আনেন। শামসুন্নাহারের ক্রান্ত অবয়ব দিগবলয় ছাড়িয়ে মহাকালে আছড়ে পড়ে। অমােঘ বলে ফেরানাে যায় না কিছুতেই। নাজমার দিনগুলাে ফের বাস্তুচক্রের তাগিদে অংকুরিত হয় আরও অগণিত অপঘাত বা মৃত্যু-প্রহরের আশংকায়। স্তন্যপায়ী শিশু মাতৃস্তন খোড়লে উঁকি দিয়ে নশ্বর জীবনকে দেখে। চানমিঞা, টুনু, মকু বানিয়া, লেবু, রাণু, বিপাশা, আনসার আলী, ছয়ফুল-দুলালীরা সময় কুঁড়ে যার যার মতাে করে বেরিয়ে পড়ে। জীবন সেখানে প্রতিভাত হয় নানা সমীকরণে-মাত্রায় । রােজিনা-বানুর দোহে তাতানাে সর্য খাড়া হয় পালােয়ানের বস্তির ছাপরায়। যাপিত জীবনের এইসব যূথচারী অনুসঙ্গ ঢাউস মাছির মতাে ভনভন করে চারপাশকে ব্যতিব্যস্ত রাখে। আর এসব নিয়েই তার কাহিনিকথার সরল অথচ নির্জলা বুনন।