"মৃত্যু : একটি দার্শনিক জিজ্ঞাসা" বইয়ের সংক্ষিপ্ত কথা: ‘আমাদের জীবন এবং পার্থিব অস্তিত্বের প্রারম্ভ জন্ম দিয়ে এবং এর অনিবার্য সমাপ্তি মৃত্যুতে। এটাই এ পৃথিবীর মহাসত্য। মৃত্যুভয়টি মানুষের সবচাইতে বড় ভয়। এটা এড়ানোর জন্য কত রকম চেষ্টাই-না আমরা করে থাকি! অবচেতন মনে আমরা অবোধ শিশুর মতো কল্পনা করি, সবাই মরলেও আমি মরব না। কেন এই ভয়, কেন আমরা মৃত্যুকে সব সময় এড়িয়ে যেতে চাই, কেন এই মহাসত্যটিকে আমরা এক মুহূর্তও স্মরণ করতে রাজি নই তার ব্যাখ্যা ঘণ্টার পর ঘণ্টা দেয়া যেতে পারে। বিবর্তনের পথ বেয়ে মানুষ যত সভ্য হয়েছে, এ ভয়টি তত বেড়ে গেছে। এ বইয়ে যে সত্যটি বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করা হয়েছে তা হচ্ছে, জীবন ও মৃত্যু কেউ কারো শত্রু নয় বরং পরম বন্ধু। মানুষ যতদিন বাঁচে, দুজনে পরস্পরের হাত ধরাধরি করে চলে। দেহ একসময় অনিবার্য, প্রাণিজ কারণে ক্লান্ত হয়ে আত্মার সাথে বিচ্ছিন্ন হতে বাধ্য হয়। কিন্তু খুব অল্পসংখ্যক ব্যক্তিই এই সন্দেহাতীত নিশ্চয়তাটি নিয়ে ভাবেন। এই অমোঘ সত্যকে স্বীকার করার সাহস অর্জনের জন্য আমাদের প্রতিনিয়ত শিক্ষা নিতে হবে। আশা করা যায়, এ বইটি পড়ে অনেকেই এ ভয়টিকে অতিক্রম করতে পারবেন। ইউরোপে [আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়াতেও] গত শতকে সংগঠিত হজপিস-আন্দোলনের ওপর ভিত্তি করে বইটি লেখা। বইটির মূল উদ্দেশ্য মৃত্যুর স্বাভাবিক ও মানবিক দিকগুলোর সঙ্গে পরিচয় করানো।’
যা থাকছে : ভূমিকা- [৯-১৫] জন্ম ও মৃত্যু- [১৭-২৮] জীবন : জন্ম-মৃত্যুর সাঁকো- [২৯-৩৪] মৃত্যুভয় ও নিবারণ- [৩৫-৪২] মৃত্যুর পথে বিভিন্ন পর্যায়- [৪৩-৬৬] হজপিস আন্দোলন- [৬৭-৮৭] মৃত্যুসঙ্গ ও কয়েকজন মৃত্যুপথযাত্রীর কথা- [৮৮-১১১] প্রায়-মৃত্যুর অভিজ্ঞতা- [১১২-১৪৪] অন্তিমযাত্রা- [১৪৫-১৫৭] শেষ মুহূর্তটির আগে ও পরে- [১৫৮-১৭৯] মৃত্যুর পর জীবন- [১৮০-১৮৯] নশ্বর জীবন, শাশ্বত ভালোবাসা- [১৯০-২০১] মৃত্যুর কোনো অস্তিত্ব নেই- [২০২-২০৬]
বোহেমিয়ান লেখক Abdullah Al Haroon প্রায় চার দশক ইউরোপ প্রবাসী। বর্তমানে জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টের নিকটবর্তী নয়ে-ইজেনবর্গ শহরে থাকেন। জন্ম ১৯৪৫ সালে, রাজশাহীতে। বেড়ে উঠেছেন জামালপুরে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যের পাঠ শেষ করে '৬৮ সালে। পাবনার একটি কলেজে শিক্ষকতা দিয়ে পেশাজীবন শুরু। '৭৭ সাল অবধি কখনও আমলা, কখনও বিদেশি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তা। '৭৭ সালের অক্টোবরে দেশত্যাগ, প্রথমে গ্রিস, তারপর জার্মানি। জার্মানিতে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থনা মঞ্জুর '৮৫ সালে। '৯৩ সালে পান জার্মানির নাগরিকত্ব। প্রবাসজীবন নানা বৈচিত্র্যে ভরা। আছে দীর্ঘ বেকারত্ব, হোটেলে বাসন-কোসন ধোয়া, কাপড়ের মিলে শ্রমিক, এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট অফিসের কেরানি, হোটেলের নাইট অডিটর, প্যাকার, স্টোরকিপার, সুপারভাইজারসহ নানা রকমের পেশার অভিজ্ঞতা। ২০০২ সালের ডিসেম্বরে চলে যান সুইজারল্যান্ড। সেখানে তিনি অ্যাঙ্গেলবার্গের একটি হোটেলে এবং পরে দাভোজের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সাত তারা হোটেল গ্র্যান্ড স্টাইগেনবার্গার বেলভেদরে চাকরি নেন। সেখানে তিনি বিল ক্লিন্টন, নেলসন ম্যান্ডেলা, কফি আনান, পিটার উস্তিনভ, পল ম্যাকার্টনি, ম্যাডোনা, রোমান পোলানস্কি, বিল গেটস, টনি ব্লেয়ার, প্রিন্স চার্লস প্রমুখ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খ্যাতিমান ব্যক্তিদের সান্নিধ্যে আসার সুযোগ পান। জার্মানিতে ফিরে আসেন ২০০৫ সালে। বিচিত্র ও চমকপ্রদ এসব অভিজ্ঞতা তাঁর লেখার অনুপ্রেরণা। মৃত্যুপথযাত্রীদের শেষ সময়ে সঙ্গ দেয়ার ইউরোপিয়ান সংগঠন হজপিসের সক্রিয় সদস্য তিনি। সুযোগ পেলেই সানন্দে মৃত্যুসঙ্গ দেন। মৃত্যুসঙ্গ ও মৃত্যু নিয়ে লিখেছেন- জীবনমরণের সীমানা ছাড়ায়ে, অঙ্গবিহীন আলিঙ্গন, মৃত্যু: একটি দার্শনিক জিজ্ঞাসা এবং মত্যসঙ্গীর দিনলিপি এ চারটি বই। ২০০৮ সালের একুশে বইমেলায় প্রথম বই প্রবাসে দৈবের বশের প্রকাশ উপলক্ষে দেশে এসেছিলেন দেশত্যাগের ত্রিশ বছর পর। ২০১০ সালের নভেম্বরে অবসর জীবনের শুরু। সময় পেলে অনুবাদ কাজও করে থাকেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য অনুবাদ কাজের মধ্যে রয়েছে- সুইডিশ উপন্যাস সিটি অব মাই ড্রিমস [ইংরেজি থেকে বাংলা], হার্টা ম্যলারের উপন্যাস- আটেমসাউকেল [জার্মান থেকে বাংলা], টনি ব্লেয়ারের দি জানি, জন পার্কিনসনের– দি কনফেসনস অব এন ইকোনোমিক হিটম্যান [ইংরেজি থেকে বাংলা] ইত্যাদি। রবীন্দ্রসংগীতের বিশেষ অনুরাগী। চার ভাইবোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়, বড় ভাই বাংলাদেশের বিশিষ্ট নাট্যজন আবদুল্লাহ আল-মামুন।