"বেদ রহস্য" বইটি সম্পর্কে কিছু কথা: প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশের সভ্যতা সংস্কৃতির লিখিত নিদর্শন যে মহাগ্রন্থ থেকে পেয়ে থাকি তাকে আমরা বেদ বলে জানি। কিন্তু বেদ কেবলমাত্র একটি বা কতকগুলি গ্রন্থের সমষ্টিমাত্র নয়, বেদ এক অখণ্ড পূর্ণাঙ্গ সাহিত্য। এমনকি, বৈদিক সাহিত্য মানব সভ্যতার অগ্রযাত্রার ইতিহাসে একটি সম্পূর্ণ যুগও বলা চলে। বেদ কেবলমাত্র প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশের সভ্যতাসংস্কৃতির বাহকই নয়, বিশ্ব সভ্যতার ক্ষেত্রেও একটি প্রাচীন যুগস্বরূপ। এর থেকে উন্নততর প্রাচীন কোন সাহিত্য-নির্ভর সভ্যতা-সংস্কৃতির কথা আমরা এখন পর্যন্ত অনুসন্ধান করে পাইনি। আর যদি কোথাও থেকেও থাকে, কারণ ‘কাল নিরবধি, বিপুলা এ পৃথিবী, বৈদিক সংস্কৃতির উদার উজ্জ্বল বিশালতার মধ্যে তার বিলুপ্তি ঘটেছে নিঃসন্দেহে। আর মানব সভ্যতার প্রথম অরুণােদয় এখানেই ঘটেছে বলে আমাদের দৃঢ় ধারণা। সপ্তসিন্ধু হলাে সিন্ধু, সরস্বতী, বিতস্তা, চন্দ্রভাগা, ইরাবতী, শতদ্রু ও বিপাশা। | মানুষ যেমন তার ভবিষ্যৎ জানবার জন্য নিয়ত আগ্রহান্বিত, তেমনি তার অতীত ইতিহাসকে জানতেও। কারণ, অতীতকালের মানুষের চিন্তা, কর্ম ও জ্ঞানের উপরই গড়ে উঠেছে বর্তমানের সভ্যতা। তাই মানব সভ্যতার একটি ধারাবাহিক সামগ্রিক রূপ গড়ে তুলতে প্রাচীনকালের ইতিহাস জানা অপরিহার্য। বৈদিক সাহিত্য প্রাচীন ভারতের ধারাবাহিক কোন ইতিহাস না হলেও এর থেকে আমরা সেই যুগের ধর্মীয়-সামাজিক-অর্থনৈতিক-সাংস্কৃতিক অবস্থার একটি সামগ্রিক চিত্র পাই। জগতের প্রাচীনতম গ্রন্থ, আদি গ্রন্থ-এই বেদ। সকল জ্ঞানের আধার, যা কিছু বেদ্য বা জানবার বিষয়, তা বিধৃত আছে ঐ মহাগ্রন্থে। বেদ’ শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থও জ্ঞান। দীর্ঘদিন ধরে নানা ঘটনায় নানাভাবে এই বেদ-বাণী সুখে-দুঃখে-আনন্দে-বিস্ময়ে প্রাচীন ভারতবাসী আর্যদের মনে প্রাণরস সঞ্চারের প্রধান উৎস হিসাবে গণ্য হয়ে এসেছে। বেদ সম্পর্কে আরো বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে বইটিতে।