বাংলাদেশে জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের কার্যক্রম শুরু হয়েছিল ২০১২ সাল থেকে। তারপর থেকে অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ২০১৫ সালে জোটে আন্তর্জাতিক জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড কমিটির স্বীকতি। ২০১৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রতিবছর বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড়ে লড়াই করেছে। পদক জিতেছে। অনেকেই পেয়েছে বিদেশের নামীদামী বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃত্তি নিয়ে লেখাপড়ার সুযােগ। তবে এসবের থেকেও যে ব্যাপারটা অনেক বড় তা হলাে- এই আন্দোলনের মাধ্যমে দেশের শিক্ষার্থীদেরকে প্রশ্ন করতে আগ্রহী করে তােলা গেছে। প্রতিটি জীববিজ্ঞান উৎসবে একটা প্রশ্নোত্তর পর্ব থাকে যেখানে দর্শকসারি থেকে শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন করে এবং মঞ্চে উপবিষ্ট শিক্ষক-শিক্ষিকাবৃন্দ তার উত্তর দেন। এটি এ উৎসবের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্ব। সরাসরি মাইক্রোফোনে প্রশ্ন করা এবং চিরকুটে প্রশ্ন লিখে মঞ্চে পাঠানাে- উভয় প্রকারে প্রশ্ন রাখার সুযােগ থাকে সেখানে। ভালাে প্রশ্নের জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থাও থাকে। প্রতিবারই দেখা যায়, অনেকগুলাে চিরকুট জমা হয়ে যায় এবং শেষ পর্যন্ত সময়ের অভাবে তার একটা ক্ষুদ্র অংশের জবাব দেওয়া যায় মাত্র। যারা উত্তরটি সাথে সাথে পায় না তারা নিশ্চয়ই মনােক্ষুন্ন হয়। কিন্তু সেই চিরকুটগুলাে খুব যত্ন করে রেখে দেওয়া হয়। সেখান থেকে উত্তর লিখে প্রকাশ করার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়। তবে সময়ের অভাবে (কিংবা হয়তাে আলসেমির কারণে!) তা এতােদিন করা হয়ে ওঠেনি। কথায় আছে, বেটার লেট দ্যান নেভার!
১৯৮৭ সালের ১ জানুয়ারি রাজশাহীতে জন্ম বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ ও লেখক সৌমিত্র চক্রবর্তীর। কাঞ্চননগর মডেল হাই স্কুল থেকে প্রাইমারি এবং ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। বই পড়ার নেশা ছোটবেলা থেকেই, আর এ বিষয়ে সবসময়ই উৎসাহ দিয়ে গেছেন তার বাবা-মা। তবে ক্যাডেট কলেজে পড়াকালে কলেজের লাইব্রেরিতে থাকা অনেক বিরল বইয়ের খোঁজ পেয়েছিলেন। সেসব বইয়ের মাঝে তাকে সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করতো গণিতের বই। ফলে গণিতের প্রতি আগ্রহটা তার সহজাত, কিন্তু এর পাশাপাশি তিনি জীববিজ্ঞানকেও আপন করে নিয়েছিলেন। অপরদিকে ঝিনাইদহ সরকারি স্বাস্থ্য সহকারী প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটের অধ্যক্ষ বাবা এবং ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের নার্সিং সুপারভাইজার মায়ের অনুপ্রেরণাও তাকে প্রভাবিত করেছে। তাই চিকিৎসক হওয়ার আশায় তিনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করেন। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাসিস্টেন্ট প্রফেসর হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। কিন্তু গণিত এবং জীববিজ্ঞানের প্রতি ভালবাসা থেকে তিনি পাশাপাশি লেখালেখিও করছেন। সৌমিত্র চক্রবর্তীর বই লেখার ধাঁচ অনেকটা গবেষণাধর্মী, এছাড়াও বাংলায় সহজভাবে তিনি গণিত এবং বিজ্ঞানের গুরুগম্ভীর বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করে থাকেন যাতে করে সাধারণ পাঠকের কাছে বিষয়গুলো সহজ হয়ে দাঁড়ায়। সৌমিত্র চক্রবর্তী এর বই সমূহ এর মাঝে উল্লেখযোগ্য হলো ‘প্রাণের মাঝে গণিত বাজে’, ‘জীবনের গল্প’, ‘জীবনের গাণিতিক রহস্যঃ পপুলেশন জেনেটিক্স ও গেইম থিওরি’, ‘গণিতের সাথে বসবাস’, ‘খণ্ড ক্যানভাস’ ইত্যাদি। বই লেখার পাশাপাশি তিনি আরো কিছু কাজের জন্য প্রশংসিত হয়েছেন। তিনি একাধারে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের একাডেমিক কাউন্সিলর, বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড কমিটির কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী এবং ময়মনসিংহ প্যারালাল ম্যাথ স্কুলের উদ্যোক্তা। তাঁর সময় কাটে অবসরে বই পড়ে ও প্রোগ্রামিং চর্চা করে। ২০২১ সালে "করোনা বৃত্তান্ত" বইয়ের জন্য বাংলা একাডেমি কর্তৃক "হালীমা-শরফুদ্দীন বিজ্ঞান লেখক পুরস্কার" -এ ভূষিত হয়েছেন।