রিকশায় চলার সময় নীচে তাকালে দেখবে, পথটা কী-দ্রুত একটা কনভেয়ার বেল্ট-এর মতাে ছুটে যাচ্ছে পিছনে, আর রিকশাটা, প্রবল-ঝড়ে-নুয়ে-মুয়ে-পড়া তালগাছের মতাে, প্রাণপণ চেষ্টা করছে স্থির থাকতে। এভাবেই, সময় ছুটে যায় আর আমরা যুঝি, স্থির থাকতে। সময়ের তােড়ে আমাদেরও চাকা ঘুরতে থাকে। চাকাটা বল-বেয়ারিং-এর মতাে ঘােরে বলেই দাড়াতে পারি। চাকাই গতি, চাকাই স্থিতি। এই চাকা মানুষের শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার, শ্রেষ্ঠ হাতিয়ার। নদী বয়ে চলে তার দুই পাড়-কে হেনে-হেনে পার নিজের একটু-একটু ক্ষয় করে। টিকে থাকতে থাকে একসময় আর পারে না-ঝুপ করে ভেঙে পড়ে ঐ নদীতেই হয় নিঃশেষ আর মেলে না উদ্দেশ। আমাদের আয়ুটা তাহলে যতখানি ক্ষয় আমরা করতে পারি নিজেদের, টিকে থাকার জন্য, এবং টিকে থাকা পর্যন্ত... টেম্পুর গর্ভে লােকগুলােকে দ্যাখাে! ঐটুকুন একটা গলাছিলা মুরগির পেটে এতগুলি আন্ডা! প্রথমে একটু চাপাচাপি, একটু গুতাগুতি–আপনে তাে ভাই একলাই দুইজনের সিট মাইরে দিচ্ছেন!তারপর সবাই কেমন সরু হয়ে, খাটো হ'য়ে, আঁটো হ'য়ে, দিব্যি ফিট করে গেল। ছেলেবেলায় জুতা কিনে দেয়া হ'ত একটু ছােট সাইজের, ধারণা ছিল, “ছাড়বে”। কিন্তু হামেশাই জুতা ছাড়ত না, পায়েরই খানিক ছােট হয়ে খাপ খেতে হত। বয়স, এবং শরীরের আয়তনের তুলনায় বেশ-ছােট দুটি পায়ের পাতায় সেই স্মৃতি আমি আজও ধারণ করি, বেশ কিমতি জুতার মতােই লােকগুলি রীতিমতাে বস্তু হয়ে গেল, টেম্পুর শরীরের অংশ হয়ে গেল, কারণ, তাদের বাড়ি ফেরা চাইই-তা যত লঘুদেহেই হােক, এমনকি সূক্ষ্ম শরীরে হলেও আপত্তি নাই।
দক্ষিণ ঢাকার নবাবগঞ্জ থানাস্থ বান্দুরা গ্রামে ১৯৬৫ সালে সুব্রত অগাস্টিন গােমেজের জন্ম। এক বছর বয়সের আগেই পিতার কর্মস্থল ঢাকা শহরে আগমন এবং সেখানেই বেড়ে ওঠা। শৈশব-যৌবনের অধিকাংশ কাটে পুরান ঢাকার নারিন্দা, লক্ষ্মীবাজার, সুত্রাপুর এলাকায়। সেন্ট গ্রেগরী, নটরডেম আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে পড়াশােনা। মধ্য-আশি থেকে লেখা প্রকাশ পেতে শুরু করে নানা লিটল ম্যাগাজিনে। এখনও অবধি মূলতঃ লিটল ম্যাগাজিনেরই লেখক। নিজে, মাসুদ আলী খানের সঙ্গে সম্পাদনা করেছেন প্রসূন। তাছাড়া শামসুল কবির (কচি) ও ফরহানুর রহমান অপি-র সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বৈকল্পিক প্রকাশনা সংস্থা পেচা-র সঙ্গে। ইদানীং অগ্রবীজ পত্রিকার নামকাওয়াস্তা যৌথ সম্পাদক।। ১৯৯৫ থেকে সুব্রত অস্ট্রেলিয়ায়। প্রকাশিত বইগুলাের মধ্যে রয়েছে : অন্তউড়ি (চর্যাপদের আধুনিকায়ন, ১৯৮৯), তনুমধ্যা (কবিতা ১৯৯০), কালকেতু ও ফুল্লরা (উপন্যাস ২০০২, পুনঃ ২০১৯), পুলিপােলাও (কবিতা ২০০৩), মাতৃমূর্তি ক্যাথিড্রাল (গল্প ২০০৪, পুনঃ ২০১৯), কবিতাসংগ্রহ (কবিতা ২০০৬), ঝালিয়া (কবিতা ২০০৯), মর্নিং গ্লোরি (কবিতা ২০১০), কবিতা ডাউন আন্ডার। (নির্বাচিত অস্ট্রেলিয় কবিতার অনুবাদ, অংকুর সাহা ও। সৌম্য দাশগুপ্ত'র সাথে, ২০১০), ভেরােনিকার রুমাল। (কবিতা ২০১১), হাওয়া-হরিণের চাঁদমারি (কবিতা। ২০১১), স্বর্ণদ্বীপিতা (বিশ্ব-কবিতার অনুবাদ ২০১১), আমাকে ধারণ করাে অগ্নিপুচ্ছ মেঘ (কবিতা ২০১২), Ragatime (ইংরেজি কবিতা ২০১৬), শ্রেষ্ঠ কবিতা। (কবিতা ২০১৮), ইশকনামা (কবিতা ২০১৯)।।