‘মেঘ রোদ্দুর বৃষ্টি’ বই থেকে নেওয়া কিয়দংশ.. শাশুড়িকে বশ করার মন্ত্র বলে দিই, শুনুন। অল্প বয়সী শাশুড়িকে বশ করবেন প্রশংসা দিয়ে। তার কর্মদক্ষতা, রান্না, ম্যানেজমেন্ট-এর প্রশংসা করুন। শিখতে চান বলে আগ্রহ প্রকাশ করুন। সংসারের বিভিন্ন বিষয়ে তার পরামর্শ নিন। মাঝেমাঝে তার ছেলের নামে বিচার দিন। সিরিয়াস বিচার না কিন্তু আবার! ‘মা, আপনার ছেলে আমি বললে শোনে না, আপনি একটু বলে দিন’—এই টাইপের বিচার। সিরিয়াস সমস্যাগুলো নিজেরা সমাধান করবেন। যথাসম্ভব চেষ্টা করবেন দু-জনের বাইরে যেন না যায়। হাজবেন্ডের কাছে শাশুড়ির বদনাম করার চাইতে শাশুড়ির কাছে হাজবেন্ডের নামে অভিযোগ করা অধিক ফলপ্রসূ। শাশুড়ি স্বস্তি পাবেন, ‘যাক, ছেলে তাহলে পুরোপুরি বউয়ের হয়ে যায়নি, বউয়ের সাথেও উল্টাপাল্টা করে। কথা শোনে না।’ আর বয়স্ক শাশুড়ি হলে শুধু গল্প করবেন তার সাথে। সময় দিন তাকে। বৃদ্ধ বয়সে তারা খুব একা হয়ে পড়েন। নিজের ছেলে-মেয়েদেরকেও আগের মতো কাছে পান না। তাকে শুধু বলবেন গল্প বলতে। অতীতের সুখ-দুঃখের কাহিনি, বিয়ের সময়ের গল্প বলতে। একবার উস্কে দিয়ে এরপর শুধু চুপচাপ বসে থাকবেন, দেখবেন কীভাবে বলে যাবেন। শুনতে শুনতে একসময় দেখবেন, আপনি আপনার শাশুড়ির প্রেমে পড়ে গেছেন!....
চোখ পানিতে ভিজে গেছে। মনে অপরাধবোধ কাজ করছে। ইউসুফ কেন আমাকে এসব কথা বলেনি—এখন বুঝতে পারছি। অতীতের গুনাহর কথা জানিয়ে অবিশ্বাস আর সন্দেহ সৃষ্টি করা ছাড়া তো কোনো লাভ নেই। তাছাড়া ও ওই জীবনকে অনেক আগেই পেছনে ফেলে এসেছে। এখন ও শুধু আমাকেই ভালোবাসে। নিজের হাতে ডায়েরির পাতাগুলো ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করলাম, এরপর আগুন ধরিয়ে দিলাম। অতীতের গুনাহর সাক্ষী রাখার কোনো মানে নেই। কাগজগুলোয় লকলক করে আগুনের শিখারা জ্বলছে—পুড়ে যাক সব কাগজ, পুড়ে যাক বীভৎস সব স্মৃতি। ঘরে ঢুকে দেখি ইউসুফ অগোছালো বিছানাতেই ঘুমিয়ে পড়েছে। কী নিষ্পাপ মায়াময় একটি চেহারা! মাথার নিচের বালিশটা ভেজা, আমি কেঁদেছি, সেও কেঁদেছে। কী পরিমাণ সংগ্রামই না করেছে মানুষটা আল্লাহর পথে চলার জন্য! যুবতী নারীর ডাকে সাড়া না দেওয়া একজন পুরুষের পক্ষে প্রায় অসম্ভব ব্যাপার! সেই সাথে বন্ধু-বান্ধবের জোরাজুরি, পিয়ার-প্রেশার, অঢেল সম্পদের মোহ ত্যাগ করা! এরপর ভালোবাসার মানুষকে পর হয়ে যেতে দেখা! সেটাও কী সম্ভব! কত রাগ ছিল আমার মনে, কত প্রশ্ন, কত কৌতূহল। ঠিক করলাম—সেসব কিছু প্রকাশ করে এই ভাঙা অন্তরটাকে আর বিব্রত করব না। আল্লাহ তাআলা এই মানুষটার ত্যাগের বিনিময়ে আমাকে স্ত্রী হিসেবে পাঠিয়েছেন, যেন আমি মানুষটির মনের যত্ন নিই। আল্লাহ তাআলা আমাকে এই সংগ্রামী মানুষটির যোগ্য ভেবেছেন, কী করে তাকে কষ্ট দিই! অনেক মমতায় ঘুমন্ত মানুষটির মাথা জড়িয়ে ধরলাম। এত মমতা বোধ হয় শুধু স্বামী-স্ত্রী’র মাঝেই সম্ভব। একমাত্র আল্লাহই পারেন স্বামী-স্ত্রী’র মাঝে এই গভীর ভালোবাসা ঢেলে দিতে।