"আমি সিরাজুল আলম খান: একটি রাজনৈতিক জীবনালেখ্য" বইয়ের ভেতর থেকে: বাংলাদেশের রাজনীতির এক প্রবাদ পুরুষ, রহস্যময় ব্যক্তিত্ব সিরাজুল আলম খান। ১৯৬০ থেকে ৭০ দশক পর্যন্ত এদেশের স্বাধিকার ও স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং স্বাধীনতা পরবর্তী রাজনীতিতেও তিনি এক বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করেছেন। তবে এই ভূমিকাটি তিনি পালন করেছেন মঞ্চের প্রায় বাইরে থেকে। বস্তুত এই নেপথ্যচারী ভূমিকাই তার ব্যক্তিত্বে এক আলাদা মাত্রা বা বিভূতি আরােপ করেছে। জীবৎকালেই তিনি হয়ে উঠেছেন এক কিংবদন্তি। একজন দক্ষ সংগঠক হিসেবে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রাম পরিচালনায় সাফল্যের পাশাপাশি একাধিক নতুন সংগঠনের জন্ম দিয়েছেন। এবং সে সব সংগঠনের নীতি ও রণকৌশল নির্ধারণে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন। কিন্তু ছাত্ররাজনীতির পরে নিজে আর কখনাে কোনাে সংগঠনের নেতৃপদ গ্রহণ করেননি। যদিও সে সব দল বা সংগঠনের নেতা-কর্মী ও সদস্যরা জেনেছেন তিনিই তাঁদের আসল নেতা। আওয়ামী লীগ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার পাশাপাশি ‘নিউক্লিয়াস’ নামে গােপন সংগঠন তৈরি করে। ১৯৬০-এর দশকের শুরু থেকেই তাঁর নেতৃত্বে একদল তরুণ স্বাধীনতার লক্ষ্যে তাদের কর্মকাণ্ড শুরু করে। মুক্তিযুদ্ধকালে যারা বিএলএফ বা মুজিববাহিনী হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। স্বাধীনতার পর আবার এই অনুসারী ও সমর্থকদেরকে নিয়েই তিনি সরকার বিরােধী রাজনৈতিক দল জাসদ-এর জন্ম দেন। এদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস আলােচনায় বিক্ষিপ্তভাবে ‘নিউক্লিয়াস’-এর ভূমিকার কথা উঠে এলেও তাঁদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে বিশদ জানার সুযােগ আমাদের অদ্যাবধি হয়নি। এ বইটিতেই প্রথম সিরাজুল আলম খানের নিজের জবানিতে পাঠক তা জানার সুযােগ পাবেন। যেমন জানা যাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তাঁর পাস্পরিক বিশ্বাস বা আস্থার সম্পর্ক এবং পরবর্তী টানাপােড়েনের কথাও। জাসদ-গণবাহিনী রাজনীতির অনেক অজানা কথাও পাঠক এ বইটি পড়ে জানতে পারবেন। সিরাজুল আলম খানের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে সাংবাদিক শামসুদ্দিন পেয়ারার লেখা এ বইটি বাংলাদেশের ইতিহাস সম্পর্কে আগ্রহী সাধারণ পাঠক ও গবেষক সকলের জন্যই একটি অপরিহার্য গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত হবে।
শামসুদ্দিন আহমেদ পেয়ারা। জন্ম ২৭ মার্চ ১৯৫০। রাজনীতির সাথে জড়িত ১৯৬২-র শিক্ষা আন্দোলন থেকে। তারপর ১৯৬৬-৬৭-র ৬-দফা আন্দোলন, ১৯৬৯-এর ১১-দফা আন্দোলন পেরিয়ে ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের প্রথম পর্বে বিএলএফ-এর। পরশুরাম, ফুলগাজি, ছাগলনাইয়া ও সােনাগাজি থানার কোম্পানি কমান্ডার। দ্বিতীয় পর্বে শেখ ফজলুল হক মণি ও মেজুর জেনারেল সুজন সিং উবান-এর নেতৃত্বে মিজোরামের দেমাগিরি থেকে পরিচালিত পার্বত্য চট্টগ্রাম মুক্ত করার অভিযানে অংশগ্রহণ। ১৯৭২-'৭৫ মেহনতি মানুষের মুখপত্র দৈনিক গণকণ্ঠ’ ও পরে নানা সংবাদপত্রের সাথে সংযুক্তি। শেষ দিকে জাতিসংঘ শিশু তহবিলে কাজ করে কর্মজীবনের পরিসমাপ্তি। ১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৮১ পর্যন্ত সিরাজুল আলম খানের ঘনিষ্ঠ সহযােগী হিসাবে তাঁর নেতৃত্বাধীন রাজনীতির কর্মী ছিলেন। বর্তমানে মােহমুক্ত।