"সাম্রাজ্যবাদ ও সংস্কৃতি" বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ ‘সাম্রাজ্যবাদ ও সংস্কৃতি' গ্রন্থটিতে সাম্রাজ্যবাদ উপনিবেশবাদ ও এদের দ্বারা সৃষ্ট সাংস্কৃতিক ক্ষেত্র সম্পর্কে ব্যাপক ও পুঙ্খানুপুঙ্খ আলােচনা-পর্যালােচনা করা হয়েছে। বিশেষ করে সাম্রাজ্যবাদী পশ্চিমাদেশসমূহ এবং এশিয়া, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া উত্তর আমেরিকা ও লাতিন আমেরিকার শিল্প-সাহিত্যসহ সংস্কৃতি সম্পর্কে আলােচনা পর্যালােচনা এ গ্রন্থে স্থান পেয়েছে। কেউ যদি সাম্রাজ্যবাদী সংস্কৃতি সম্পর্কে কোন একক বইয়ের ওপর নির্ভর করেন, তাহলে এই গ্রন্থটি হবে একমাত্র অবলম্বন। এটা নিশ্চিতভাবে একটি বিশ্ব কৌষিক পর্যালােচনা। এটা আধুনিক ইউরােপের ইতিহাসে সাম্রাজ্যবাদের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জিং উদ্যোগকে বাস্তবত স্পর্শ করে। এতে অবশ্য উনবিংশ শতাব্দীর ফ্রান্স ও ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক পদ্ধতি সম্পর্কে অভূতপূর্ব ও নজিরবিহীন সশ্ন ভেদাভেদের ওপর দৃষ্টিপাত করা হয়। তদুপরি এ গ্রন্থে উপন্যাস থেকে কবিতা এবং কবিতা থেকে গীতিনাট্য ইত্যাদির মধ্যে বিচরণ করে। এমনকি গীতিনাট্য থেকে তুলনামূলক গণমাধ্যমের মধ্যেও বিষয়টি ঘােরাফেরা করতে থাকে। এটা একটি সাহসী, বুদ্ধিদীপ্ত ও প্রয়ােজনীয় পুস্তক। লেখক বিভিন্ন প্রেক্ষাপট থেকে সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ এবং সংস্কৃতিকে অধ্যয়ন ও পর্যালােচনা করেন। প্রাচীনকাল থেকেই ‘সাম্রাজ্যবাদ’ কথাটা ব্যবহার হয়ে আসছে। প্রাচীনকালে রাষ্ট্র তার পাশ্ববর্তীর অঞ্চলও দূরবর্তী অঞ্চলগুলাে শক্তি বলে দখল করতাে। এসকল অঞ্চল উপনিবেশ এবং তা দখলকারী শক্তিকে সাম্রাজ্যবাদ বলা হয়। রাষ্ট্রশক্তি ও অঞ্চল মিলে সাম্রাজ্য গঠিত হতাে। প্রাচীন কালে বাইজেন্টিয়াস সাম্রাজ্য, মধ্যযুগে অটোমান সাম্রাজ্য, রােমান সাম্রাজ্য ও মােগল সাম্রাজ্য বিশেষভাবে পরিচিত। মধ্যযুগের এসকল সাম্রাজ্যবাদকে সামন্তবাদী সাম্রাজ্যবাদ বলা হতাে। সাম্রাজ্যবাদের গর্ভে পুঁজিবাদের জন্ম। পুঁজিবাদ উদ্ভবের সাথে আধুনিক জাতীয় রাষ্ট্র ব্যবস্থার উদ্ভব ঘটে। পুঁজিবাদ তার জাতীয় বেড়া ভেঙ্গে বহুজাতিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তােলে। পুঁজি বিকাশের প্রয়ােজনে পণ্য তার জাতীয় বেড়ার বাইরে আরাে ব্যাপকভাবে প্রসারিত হয়। এতে পুঁজিবাদী পণ্যের বিকাশ আরাে বেড়ে যায় এবং তার বিস্তৃত বাজারের প্রয়ােজন দেখা দেয়া। এসকল কারণে পশ্চিমা পুঁজিবাদী দেশগুলাে আমেরিকা আবিষ্কার উত্তমাশা অন্তরীণ হয়ে ভারত আসার পথ উদ্ভাবন করে। এমনকি অস্ট্রেলিয়া আবিষ্কারসহ নতুন নতুন অঞ্চল আবিষ্কার ও দখল করে। এসকল অঞ্চলে আদিবাসীদের জোরপূর্বক উচ্ছেদ করে বা তাদের স্থানান্তর ঘটিয়ে পশ্চিমা দখলদারেরা বসতি স্থাপন করে। এসকল ক্ষেত্রে পশ্চিমা শক্তির নতুন নতুন ভৌগােলিক পথ ও অঞ্চল আবিষ্কার, অস্ত্র-শস্ত্র উদ্ভাবন, গবেষণা করতে হয়। এসব সংক্রান্ত চিন্তাভাবনা- তাদের আচার আচরণ, মনােভাব অর্থাৎ সমগ্র সংস্কৃতি এ গ্রন্থে আলােচনা করা হয়েছে। লেখক এ গ্রন্থে শিল্প-সাহিত্যের বিশ্বজনীন রূপটিকে বিশেষভাবে উল্লেখ করার প্রয়াস চালান। এ বিশাল গবেষণা গ্রন্থের বাংলা ভাষায় অনুবাদ বাংলা ভাষাভাষি পাঠকের কৌতূহল ও আত্মার খােরাক দানে সক্ষম হবে বলে আমার বিশ্বাস।