একাত্তরে বাঙালি জাতির সশস্ত্র স্বাধীনতাসংগ্রাম একটি আন্তর্জাতিক যুদ্ধে রূপ নিয়েছিল। এই যুদ্ধে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান সরাসরি জড়িয়ে পড়ে। বড় শক্তি ও তাদের প্রভাবিত দেশগুলো স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পক্ষে-বিপক্ষে তৎপর হয়ে ওঠে। এই সংকটে জাতিসংঘ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দুটো পর্যায়ে এই ভূমিকা প্রতিফলিত হয়: ভারতে আশ্রয় নেওয়া বাঙালি শরণার্থীদের ভরণপোষণ ও দুর্ভিক্ষ রোধে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা এবং ডিসেম্বরে যুদ্ধ বন্ধ ও রাজনৈতিক প্রশ্নে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে বিশ্বের বড় শক্তিসহ বিভিন্ন দেশ ও জাতিসংঘের বিভিন্ন অঙ্গসংস্থার দৃষ্টিভঙ্গি ও তৎপরতা লাখ খানেক দলিলপত্রে লিপিবদ্ধ রয়েছে। এ যাবৎ অবমুক্ত বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ দলিলপত্রের ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে জাতিসংঘের ভূমিকার একটি নিরপেক্ষ মূল্যায়ন করা হয়েছে এ বইয়ে। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধ এবং এ যুদ্ধের পটভূমির ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আন্তর্জাতিক আইন ও কূটনীতির দৃষ্টিকোণ থেকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় কেন যুক্তিসংগত, এ বইয়ে তা-ও ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
আশফাক হােসেন জন্ম ৩১ ডিসেম্বর ১৯৬৯, মৌলভীবাজার শহরে। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়াশােনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব নটিংহামে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে এমফিল পর্যায়ে গবেষণার বিষয় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ । লন্ডনের ব্রিটিশ লাইব্রেরি ও স্কটল্যান্ডের জেমস্ ফিলে আর্কাইভসে সংরক্ষিত মূল দলিলপত্রের ভিত্তিতে যুক্তরাজ্যের নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ঔপনিবেশিক বিশ্বায়ন বিষয়ে পিএইচডি সম্পন্ন করেছেন। ২০০৭ সালে যুক্তরাজ্যের সিসিপি প্রেস থেকে প্রকাশিত স্টাডিজ ইন পােস্ট কালচার কনফ্লিক্ট জার্নালে তাঁর প্রবন্ধ মুদ্রিত হয়েছে। গবেষণার জন্য ইউজিসির রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদক’ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত বিচারপতি ইব্রাহীম স্বর্ণপদক’ পেয়েছেন। প্রকাশিত গ্রন্থ আটটি, গবেষণা প্রবন্ধের সংখ্যা শতাধিক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. হােসেন বর্তমানে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ (ডেপুটেশন)।