আধুনিক বাংলা ভাষার প্রমিত রীতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ঔপনিবেশিক শাসনের নিশ্ছিদ্র কতৃর্ত্বে। ব্যাকরণ, অভিধান এবং অন্য নানা ধরনের ভাষাচর্চায় সেকালের প্রমিতের ধারাবাহিকতা আজও বহমান। বাংলাদেশের প্রমিত বাংলা শিক্ষিত নাগরিক মধ্যবিত্ত শ্রেণির উচ্চারণ-স্বভাবকে যথেষ্ট মূল্য না দিয়ে হুবহু অনুসরণ করেছে উপনিবেশিত কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত ভাষারীতিকে। স্বভাবতই ভাষা-ব্যবহারকারীদের মধ্যে এ ব্যাপারে ব্যাপক অস্বস্তি আছে। প্রমিত ভাষায় একধরনের আপসরফা আর সম্মতি প্রতিষ্ঠা করতে হয়। ভাষা কোনো বিলাসদ্রব্য নয় যে ব্যবহারের স্বার্থে কিছু সময়ের জন্য খানিকটা অস্বস্তি মেনে নেওয়া যেতে পারে। এটা একটা সার্বক্ষণিক অস্তিত্ব। কৃত্রিমতার মাত্রা বেশি হলে তার চলে না। অন্যদিকে, ঢাকার প্রমিত-বিরোধীদের ব্যবহারিক আর বাস্তব যুক্তি খুবই জোরালো হলেও ভাষা-সম্পর্কিত কিছু প্রয়োজনীয় যুক্তি তাঁরা উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছেন। সাধারণভাবে তাঁরা ভাষার ব্যক্তিগত এবং সাহিত্যিক ব্যবহারের ব্যাপারেই আগ্রহী। কিন্তু ভাষার ব্যবহার তো এ দুইয়ের মধ্যে সীমিত নয়। ভাষায় শিক্ষার জন্য বইপুস্তক লিখতে হয়, অফিস-আদালত চালাতে হয়। এককথায় রাষ্ট্র বলে যে কৃত্রিম, নিপীড়ক অথচ দরকারি অস্তিত্ব আছে, তার সাথে ভাষার ওতপ্রোত সম্পর্ক। এ দিকটা প্রমিত-বিরোধীদের অধিকাংশের লেখালেখিতে এমনকি ইশারায়ও উপস্থাপিত হয়নি। বাংলা ও প্রমিত বাংলা সমাচার বইটি এ প্রেক্ষাপটেই রচিত।
প্রাবন্ধিক ও গবেষক। জন্ম ২৩ আগস্ট, ১৯৭৫ নোয়াখালীর হাতিয়ায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে এমএ এবং পিএইচডি। বর্তমানে ওই বিভাগে অধ্যাপক হিসাবে কর্মরত। পিএইচডি গবেষণার বিষয় ‘বাংলা ভাষার উপনিবেশায়ন ও বি-উপনিবেশায়ন’। আগ্রহের বিষয় সাহিত্য, নন্দনতত্ত¡, ইতিহাস, রাজনীতি ও সংস্কৃতি অধ্যয়ন। ছোট-বড় শতাধিক প্রবন্ধ প্রকাশ করেছেন। অনুবাদ করেছেন গুরুত্বপূর্ণ কিছু তাত্ত্বিক রচনা। প্রকাশিত গ্রন্থ বাংলা ভাষার উপনিবেশায়ন ও রবীন্দ্রনাথ [২০১৯]; বাংলা ও প্রমিত বাংলা সমাচার [২০১৯]; কবি ও কবিতার সন্ধানে [২০২০]; হুমায়ূন আহমেদ : পাঠপদ্ধতি ও তাৎপর্য [২০২০]; বিষয় সিনেমা : তিনটি অনূদিত প্রবন্ধ [২০২০]। সম্পাদিত গ্রন্থ নির্বাচিত কবিতা : সৈয়দ আলী আহসান [২০১৬]