“...হে মহাভিক্ষু, অপরের উপদেশের সাহায্যে কখনও। মােক্ষলাভ হয় না। হে ঋষি, বুদ্ধত্ব লাভের সেই চরম। মুহুর্তে আপনার অন্তরে কি ঘটেছিল তা কথায় প্রকাশ করা। সম্ভব নয়। আপনার উপদেশই যে কথা বলে তা। অনেক ব্যাপক। অসৎ পথ পরিহার করে কিভাবে সৎপথে। চলতে হবে- সে-শিক্ষাও পাওয়া যায়। কিন্তু লক্ষ লক্ষ। প্রার্থীর মধ্যে আপনি কি করে স্বয়ংবর বুদ্ধ হলেন, সে-রহস্য সম্বন্ধে আপনি নির্বাক। আপনার উপদেশ। শােনার পর এ কথাই আমি ভেবেছি। এই আমার। উপলব্ধি হয়েছে। এ জন্য আবার আমি যাত্রা করব। এর। চেয়ে ভালাে উপদেশের সন্ধানে আমি যাচ্ছি না। জানি এর চেয়ে ভালাে উপদেশ নেই। সকল গুরু এবং সকল । উপদেশ ত্যাগ করে একাকী নিজের পথে লক্ষ্যে পৌছুব। অথবা প্রাণ দেব। কিন্তু আজকের দিনটির কথা আমার । চিরকাল মনে থাকবে। এই ক্ষণটি। যখন একজন। পবিত্র মহাপুরুষ দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। বুদ্ধের চোখ মাটির দিকে নিবদ্ধ মহাসমুদ্রের মতাে। অতলস্পর্শী তাঁর চোখে গভীর প্রশান্তি।। ‘আশা করি তােমার যুক্তিতে ভুল নেই। ধীরে ধীরে বললেন তথাগত, ‘তুমি অভীষ্ট লাভ করবে— এই। কামনা করি। তুমি কি লক্ষ্য করেছ কত ধর্মপ্রাণ। লােকের ভিড় হয় আমার চারপাশে? তারা আমার। উপদেশ মাথা পেতে নেয়। হে বিদেশী সন্ন্যাসী, তুমি কি মনে কর আমার উপদেশ ত্যাগ করে তাদের আবার। কামনা-বাসনার জগতে ফিরে যাওয়াই ভালাে হবে?'। ‘এসব চিন্তা নিয়ে আমি একবারও মাথা ঘামাইনি,' বলল। সিদ্ধার্থ। তারা আপনার উপদেশ মতাে চলুক না কেন! তারা অভীষ্টে পৌছে সিদ্ধি লাভ করুক। অন্যের জীবন। সম্বন্ধে বিবেচনা করার অধিকার নেই আমার। আমার । জীবন কোন পথে চলবে, সে-বিচারই আমি করব। গ্রহণ। বা বর্জন করার দায়িত্ব আমার। আমরা সন্ন্যাসীরা। অহং থেকে মুক্তি চাই। হে মহষী, আমি যদি আপনার। শিষ্যত্ব গ্রহণ করতাম, সে হত বাহ্যিক। আমি শান্তি । পেয়েছি, মােক্ষ লাভ হয়েছে আমার এই বলে। আত্মপ্রতারণা করতাম। আসলে অহংবােধ ভিতরে। থেকেই যেত এবং ক্রমশ বাড়ত। আপনার আনুগত্যে, আপনার প্রীতি ও আপনার অনুগামী ভিক্ষুদের । ভালােবাসায় তা নব রূপ নিত মাত্র।'..” ।
হারমান হেসের জন্ম ১৮৭৭ সালে জার্মানীর কালে।। তার পিতা এবং পিতামহ ছিলেন প্রটেস্ট্যান্ট মিশনারি।। সেই সুবাদে তের বছর বয়স পর্যন্ত তিনি ধর্মীয় বিদ্যালয়ে পড়াশােনা করার পর ছেড়ে দেন। আঠারাে বছর বয়সে বই বিক্রেতা হিসেবে সুইজারল্যাণ্ডের ব্যাসেলে চলে আসেন এবং জীবনের প্রায় পুরােটাই তিনি সুইজারল্যাণ্ডে বাস করেন। তার প্রথম দিককার রচনাসমূহের মধ্যে রয়েছে পিটার ক্যামেনজিন্দ (১৯০৪)। বিনিথ দ্য হুইল (১৯০৬), গারট্রড (১৯১০)। এই সময়কালের মধ্যে হেস বিয়ে করেন এবং তিন পুত্র সন্তানের জনক হন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় হেস জার্মান যুদ্ধবন্দীদের বই পুস্তক সরবরাহ শুরু করেন এবং এই সময়ে তার লেখনিতে যুদ্ধবিরােধী এবং শান্তিবাদী মতবাদ প্রকট হয়ে ওঠে। প্রথম বিবাহ বিচ্ছেদের পর তিনি সুইজারল্যাণ্ডের মন্টাগানােলায় চলে আসেন এবং এখানেই তিনি তার সর্বাধিক উল্লেখযােগ্য গ্রন্থগুলাে রচনা করেন : সিদ্ধার্থ (১৯২২), স্টিপেনওলভ (১৯২৭), নার্সিশাস অ্যাণ্ড গােল্ডমুন্ড (১৯৩০)। ১৯৪৬ সালে সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি নােবেল পুরস্কার লাভ করেন। হারমান হেস ১৯৬২ সালে পঁচাশি বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।