ভূমিকা যখন স্কুলের ছাত্র ,তখন সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘দেশে বিদেশে’, ‘মুসাফির’ এবং ‘ভবঘুরে ও অন্যান্য’ পড়ে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম তাঁর অনন্য সাধারণ ভ্রমণবৃত্তান্ত আর চারপাশের দেখা চিত্রকল্পের বর্ণনায়। মনে মনে স্বপ্ন দেখতাম তাঁর বর্ণনার দেশগুলোতে ,বিশেষ করে মধ্য এশিয়ার প্রাচীন সংস্কৃতি দেখতে যাবার। বহু যুগ পরে সে স্বপ্নের কিছুটা সফল হয় চীন ভ্রমণের সময়। এসময়ই চীনের পশ্চিমের সর্বদূরবর্তী শহর কাশগড় ও উইগুর সভ্যতার কথা জানতে পেরে এবং প্রাচীন সিল্ক রুট আবার নবরূপে জাগরিত হচ্ছে এ খবর পেয়ে মনে প্রচন্ড আগ্রহ হলো এ অঞ্চলগুলো ঘরে দেখার । নানা জনে সাথে আলোচনা করতে তারা যেভাবে আমাকে নিরুৎসাহিত করতে চাইলো তাতে আগ্রহ বাড়লো বই কমালো না। আমার বড় ছেলের উৎসাহেই ট্রাভেল এজেন্ট এর কাছে দৌড়াদৌড়ি শুরু করলাম। ওরা ওশুনে প্রথমে বার কয়েক ঢোঁক গিলে নিল। যাই হোক ইন্টানেটের কল্যাণে ও ট্রাভেল এজেন্টের সহায়তায় অবশেষে বিশ্বের অন্যতম দুর্গম এলাকা উরুমচি ও কাশগড়ে ভ্রমণ সম্ভব হলো। যে অসাধারণ অভিজ্ঞতা আমাদের হলো তা ভাষায় প্রকাশের নয়।
ঝুঁকিটা নেহায়েতেই বেশী-যথেষ্ট বেশী। যেখানে আঞ্চলিক ভাষা ছাড়া কেউ অন্য কোন ভাষা বোঝে না, সেখানে থাকা খাওয়া চলা ফেরা কেনাকাটা দর্শনীয় স্থান খুঁজে নেয় সেসব দেখা-এক কথায় দুঃসাধ্য। সে দুঃসাধ্যকে আয়ত্ত করতে এক ধরণের অপর রোমাঞ্চ অনুভব করেছি-বিষ্ময়ে হতবাক হয়েছি-আবেগে আপ্লুত হয়েছি। চীন তো কেবল চীনই নয়-মহা চীন- যার এক প্রান্ত ছুঁয়েছে জাপানকে আর এক অংশ এসে পৌঁছেছে আফগানিস্তানে। যার উত্তরের প্রান্ত রাশিয়ার সাথে আর দক্ষিণে ভারত-পাকিস্তান আর কাশ্মির।
বেইজিং তবু জানা বোঝার শহর- আন্তর্জাতিক দুনিয়ার সাথে যোগাযোগ থাকায়, ব্যবসায়-বাণিজ্যে লোকজনের যাতায়াত রয়েছে। কিন্তু উরুমচি ও কাশগড়? কীভাবে এ দীর্ঘ পথ পাড়ি দিলাম, দেখলাম অভুতপূর্ব এক সভ্যতা - সে কথা বলার জন্যই এ বইয়ের অবতারণা
বইটির বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য ও অন্যান্য প্রসঙ্গে সহায়তা করেছে আমার সহধর্মিনী তৌহিদা ফারুক ও বড় ছেলে মাহবুব সাবের।
অজানাকে জানার জন্যই তো মানুষের জীবন। ভ্রমণের তাগিদ সকল ধর্মেই দেয় হয়েছে। যেতেই যখন হবে তখন অপরিচিত ,দুর্গম স্থান -নয় কেন? পাঠকদের কাছে আমার তাই একান্ত অনুরোধ -একুটু ঝুঁকি নিয়ে দেখুন না -অজানাকে জানতে দুর্গম অঞ্চলে পা রাখতে কেমন লাগে? মাহবুবুর রহমান ফারুক
মাহবুবুর রহমান ফারুক (জন্ম ১৯৪২-এর ২ জুলাই) ১৯৬৬ সালে পরিসংখ্যানে এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করে ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজে শিক্ষকতা পেশায় কর্মজীবন আরম্ভ করেন। দীর্ঘ ৩৫ বৎসর তিনি ঝিনাইদহ সহ ফৌজদারহাট, ময়মনসিংহ গার্লস, রাজশাহী ও বরিশাল ক্যাডেট কলেজসমূহে। শিক্ষকতাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন । তিনি ২০০০ সালে পাবনা ক্যাডেট কলেজ থেকে অধ্যক্ষ থাকাকালীন অবসরে যান। বর্তমানে। তিনি উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজে উপাধ্যক্ষ পদে নিয়ােজিত আছেন। বাংলা একাডেমী থেকে ১৯৯৪ সালে তাঁর লেখা ব্যবহারিক ও গাণিতিক পরিসংখ্যান (১-৩ খন্ড), ২০০৬ সালে হজ্ব, ওমরাহ ও উন্নতজীবন এবং ২০০৭ সালে যে নদী মরুপথে (উপন্যাস) প্রকাশিত হয় ।