"শতাব্দীর চিঠি"বইটির প্রথমের কিছু কথা: আপনার সেই চিঠির কথা মনে পড়ছে। বহু শতকের দূরত্ব থেকে আমার হৃদয়কে পাঠিয়ে দিয়েছি আপনার সেই পত্রের পাশে। মুক্তিকামনা আর ব্যথা, হাহাকার আর আগুন, প্রত্যাশা আর ভীতি, প্রত্যয় আর প্রার্থনা ছিলাে আপনার প্রতিটি হরফে। যে রাতে চিঠি লিখেন, আকাশে লক্ষকোটি তারা চমকে উঠেছিলাে? শিউরে উঠেছিলাে বাতাসের হৃদয় থেমে গিয়েছিলাে সময়ের শ্বাস-প্রশ্বাস? আপনার একটি চিঠি ইতিহাসের গতি দিয়েছিলাে বদলে। এই আকাশের দিকে উখিত মিনার, এই মাথায় সফেদ টুপি দিয়ে রাস্তায় নেমে আসা ভাের, এই কাদামাখা পথ দিয়ে এগিয়ে চলা মক্তবের মেয়ে কিংবা এই স্বাধীন পদ্মার ঢেউ, যমুনার মুক্ত চর-সকলেই স্বকীয় অস্তিত্বের প্রয়ােজনে তাকিয়েছিলাে আপনার কলমের দিকে। কী লিখছে কলম! কী লিখেছিলাে কলম সেই রাতে? পাণ্ডুয়ার সেই জ্যোৎস্রাজ্বলা রাতে-যখন বাংলার ভাগ্য রচনা করছিলাে রাজা গণেশ নারায়ণের ভয়াল ত্রিশূল। | আপনি, নুর কুতুবুল আলম, কোন সাহস আর শক্তিতে হয়ে উঠেছিলেন বাংলার শেষ আশ্রয়? আপনার তাে বিত্ত বলতে কিছুই ছিলাে । ছিলাে না কোনাে লশকর-সেনাবাহিনী। ছিলাে না কোনাে রাজকীয় প্রস্তুতি। কিন্তু আপনি প্রতিবাদী হলেন। প্রবল পরাক্রান্ত দখলদারের বিরুদ্ধে হয়ে উঠলেন প্রতিরােধ। তুফানের বিপরীতে এমন নিঃসঙ্গ লড়াই বার বার দেখেনি ইতিহাস। আপনি দাঁড়িয়েছিলেন ইতিহাসের একটি ধারায়, চাইছিলেন বাংলা ও বাঙালির মানবপ্রেমের ঐতিহ্য আর তাওহিদি জীবনসত্যের সংরক্ষণ, রাজা গনেশ হাঁটছিলেন বিপরীত আরেক ধারায়, চাইছিলেন মুসলিমবিহীন বাংলা। সাম্প্রদায়িক নির্মমতার হাত দিয়ে লিখছিলেন রক্ত ও বিনাশের দাস্তান।
কবি, গবেষক ও আলেম মুসা আল হাফিজ। ১৯৮৪ সালের ৫ অক্টোবর সিলেট জেলার বিশ্বনাথ উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের মাখর-গাঁও গ্রামে তাঁর জন্ম। ১৯৯৫ সালে, ১১ বছর বয়সে কুরআন মজিদের হিফজ সম্পন্ন করেন। ২০০৭ সালে কৃতীত্বের সাথে তাকমিল ফিল হাদীস (মাস্টার্স সমমান) সম্পন্ন করেন। জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ তরুণ আলেম প্রতিভা-২০০৮ এ সম্মানীত হন। ২০০৯ সালে কর্মজীবনের শুরু ঐতিহ্যবাহী বিশ্বনাথ জামেয়া মাদানিয়ায় শিক্ষকতা এবং মাসিক আল ফারুকের উপদেষ্টা সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে। ২০১৬ সালে উচ্চতর ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জামেয়াতুল খায়র আল ইসলামীয়া সিলেটে বিভাগীয় প্রধান হিসেবে যোগদান করেন। ২০১৯ সালে ঢাকায়, যাত্রাবাড়ীতে প্রতিষ্ঠা করেন ইসলামী দা‘ওয়াহ ও গবেষণা কেন্দ্র মা‘হাদুল ফিকরি ওয়াদদিরাসাতিল ইসলামিয়া। বর্তমানে ইসলামিক হিস্ট্রি অ্যান্ড কালচার অলিম্পিয়াড বাংলাদেশের চেয়ারম্যানের দায়িত্বপালন করছেন। ২০১১ সালে হয় তার কবিতা নিয়ে প্রকাশিত হয় কবি-সমালোচক মুকুল চৌধুরীর সনাক্তধর্মী আলোচনা ‘মুসা আল হাফিজ: কবিতার নতুন কণ্ঠস্বর’। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. রিজাউল ইসলাম তার সাহিত্যকর্ম নিয়ে লিখেন গবেষণাগ্রন্থ- মুসা আল হাফিজের মননবিশ্ব (২০১৮)। তরুণ কবি এম আসাদ চৌধুরীর সম্পাদনায় ২০১৯ সালে প্রকাশিত হয় তার সাহিত্যকর্ম নিয়ে বিশজন আলোচকের পর্যালোচনাগ্রন্থ ‘মননের কবি, বৈদগ্ধের দৃষ্টিতে’। বিভিন্ন বিষয়ে তিনি ৫০টির অধিক বই লিখেছেন।