শব্দের মালা গাঁথেন বহুমাত্রিক ধারার লেখক মেহেদী আরিফ। মননে কবি, ধ্যানে উদ্যোক্তা ও জ্ঞানে একজন প্রতিশ্রুতিশীল শিক্ষক। তাঁর জন্ম রূপমায়া ঘেরা সাতক্ষীরাতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্য ও সেন্ট্রাল ল’ কলেজে অধ্যয়ন শেষে নিজেকে ভাসিয়ে চলেছেন সাহিত্য ভেলায়। প্রচলিত ধারাকে পাশ কাটিয়ে দৃঢ়চিত্তে পা রেখেছেন সাহিত্যের বুলন্দ দরওয়াজায়। Mehadi Arif's Therapeutic English (MATE) এর পরিচালক হিসেবে অত্যন্ত সার্থকতার সাথে শত প্রাণে পৌঁছে দিচ্ছেন জ্ঞানের দীপ্তিমান আভা যা ঘুমন্ত শিক্ষার্থীকে দেয় চেতনা, দুর্বল শিক্ষার্থীকে করে সবল আর ভীরু শিক্ষার্থীর প্রাণে জোগায় দুর্জয় সাহস। আহছান্উল্লা ইন্সটিটিউট অব ইনফরমেশন এন্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজীতে একজন Adjunct Faculty হিসেবে কর্মরত আছেন তিনি। এছাড়াও তিনি ‘বই সখা’ নামক একটি অনলাইন বুকশপের প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। প্রগ্রেসিভ পাবলিশার্স থেকে এ পর্যন্ত তাঁর লেখা ‘মিষ্টি নিমপাতা’ (জীবনদর্শন), ‘আদর্শ শিক্ষক’ (প্রবন্ধ) ও ‘কানাগলি’ (উপন্যাস) তিনটি সৃজনশীল বই প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও তিনি পনেরোটি একাডেমিক বইয়ের কাজ সম্পন্ন করেছেন। পঠনপাঠন, লেখালিখি ও ভ্রমণ তাঁর আরাধ্য। অভিজ্ঞতার আতশকাচে দেখেন জীবনকে। ‘শব্দফুল’ লেখকের প্রথম কাব্যগ্রন্থ। শাব্দিক অনুরণন ও বিষয়বৈচিত্র্যের মনোরম উপস্থাপনে কাব্যিক দ্যোতনায় গ্রন্থটি পাঠককে নিয়ে যাবে অনুভবের অন্তরালে। অমর একুশে বইমেলা ২০২৪-এ মেহেদী আরিফ-এর শব্দফুল বইটি প্রকাশ করতে পেরে ‘চয়ন প্রকাশন’ আনন্দিত।
পাঠক বেরিয়েছে মনের খোরাক যোগাতে। অক্ষিযুগলে যেন দুটো এনার্জি বাল্ব জ্বলে উঠেছে সমুখে রাখা জ্ঞানের ভাণ্ডার দেখে। আহা! বহু বইয়ের সমাহারে সহসা একটি নামও চোখ এড়িয়ে গেলো না। নাম তার "আদর্শ শিক্ষক"। মুখে যেন অকস্মাৎ আমলকির কামড় পড়েছে এমন ভঙ্গি করে বইটির দিকে কৌতূহলের তীর তাক করলো। তার ব্যাপ্তি খুব বেশি না। বড়জোর এক সেকেণ্ড। অতঃপর মনের ডায়েরিতে খুব গুছিয়ে "আদর্শ শিক্ষক" শীর্ষক কোনো বইয়ের বিষয়বস্তু কতটা একঘেয়ে ও গতানুগতিক হতে পারে তার ফিরিস্তি তৈরি করে নিলো। এ কাজ করতে অবশ্য তার বেশ কয়েক সেকেণ্ড ব্যয় হয়ে গেলো। যত যাই হোক, সুমিষ্ট আম কিংবা তেঁতো আমলকি, জীর্ণ করতে তো উভয়েরই সময়ের প্রয়োজন।
কী খাপছাড়া প্রসঙ্গ! জি, এটি আমাদের অধিকাংশেরই সংকীর্ণমনা চেতনার এক সাধারণ চিত্র। সেই আমলকির কথাই ধরি না কেন। প্রথম কামড়ে মুখের গ্রন্থিগুলোও এমনভাবে আক্ষেপ প্রকাশ করে যেমনটা এক গামলা দুধে এক ফোঁটা টক দিয়ে দিলে অনুভূত হয়। শুরুর কয়েক মুহূর্তের তিক্ততা এর পরবর্তী মিষ্টতা ও গুণাগুণকেও হার মানায়। তিক্ততার ব্যক্ততায় আমরা কেবল আমলকিকেই রিক্ত হাতে ফিরিয়ে দিই না, ফিরিয়ে দিই আমাদের সচেতন মনকে, আমাদের সুপ্ত চেতনাকে, আমাদের অন্তর্নিহিত শক্তিকে। আমাদের সেই রিক্ততা আজ আকাশ ছুঁতে চলেছে। তাই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু "আদর্শ শিক্ষক" বইটির সামান্য শিরোনাম আমাদের সুবোধ অন্তরে কীভাবে দাগ কাটতে পারে তা অসামান্যরূপে ব্যক্ত না করে কলমটিও সামনে এগোতে চাচ্ছিলো না।
এবারে আসা যাক মূল প্রসঙ্গে। এতক্ষণ জল ঘোলা করলাম ঠিকই। কিন্তু তাই বলে বইটির ভেতরকার নান্দনিক অবকাঠামোর উপর থেকে পর্দা সরিয়ে দিয়ে এর বিষয়বস্তুকে সস্তা কোনো লেখার কাতারে ফেলে দিতে মোটেই ইচ্ছুক নই আমি। "আদর্শ শিক্ষক" বইটির লেখক, মেহেদী আরিফ, নিজে শিক্ষকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত দীর্ঘ সময় ধরে। সেই দারুণ অভিজ্ঞতাকেই কলমের পেট চেপে বের করে কাগজের বুকে আবদ্ধ করার লোভনীয় খেলায় মেতে ওঠার প্রয়াস চালিয়েছেন তিনি। লেখকের ভাষায়, "একজন আদর্শ শিক্ষক জ্ঞান সাধনায় মশগুল একজন সাধক, যিনি সূর্য হয়ে আলো দেন, বটবৃক্ষ হয়ে ছায়া দেন, আশীর্বাদ হয়ে পুষ্পবৃষ্টির মতো বর্ষিত হন; যার এক চোখ শাসন ও অপর চোখ ভালোবাসার ছবি আঁকে।"
আদর্শ শিক্ষক বুলিমাত্রই হৃদয়ের মণিকোঠায় আয়নার মতো ভেসে ওঠে জীবনের পথ পরিক্রমায় আমাদের সাথে যুক্ত হয়ে যাওয়া সেসব শিক্ষকের প্রতিচ্ছবি যাদের স্মৃতি বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে ফেলা দুর্গম পাহাড় পাড়ি দেওয়ার মতোই কষ্টসাধ্য। তাঁরা আমাদের মনের গভীরতম স্তরে এমনভাবে রেখাপাত করেন যে কোনো ভাবনা চিন্তা ছাড়াই তাঁদের আমরা স্মরণ করি সময়ে-অসময়ে। সেই আদর্শ শিক্ষকদের প্রতি অনুরাগ ও শ্রদ্ধার সীমা-পরিসীমা হয়তো আমরা অনেকেই শব্দের দেয়ালে আবদ্ধ করতে পারি না, তবে ধারণ করি হাজার গুণ বেশি। লেখক কেবল আমাদের অব্যক্ত ব্যঞ্জনাগুলিকে কুড়িয়ে এনে শব্দের মালা গেঁথেছেন নিজস্ব ভঙ্গিতে। তার ভাবানুবাদে, শিক্ষক যেন ক্লান্ত সৈনিক, কিংবা দিনশেষে ঝরে পড়া এক ড্যাফোডিল ফুল। এ শব্দমালার সুবাসে পাঠকের মাতোয়ারা মন ফিরে যেতে চায় সেই সোনাঝরা দিনগুলিতে, স্মৃতিচারণার জোয়ারে ভেসে তার হৃদয় তরঙ্গমুখর হয়ে ওঠে। লেখকের কলমের পেট চেপে বের হওয়া প্রতিটি শব্দ পাঠকের মনকাননে বুলেটের মতো প্রবিষ্ট হয়ে ক্ষত-বিক্ষত করে হৃদয়কে, উস্কে দেয় তার সযত্নে লালিত অনুভূতিগুলোকে।
হরেক রকম আলাপনের ভিড়ে লেখকের একটি প্রচেষ্টা আমাকে সবচেয়ে জোরালোভাবে নাড়া দিয়েছে। তিনি শিক্ষকতাকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে পৌঁছে দিতে কঠোরভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছেন লেখনীতে। কতই না সৌভাগ্যবান সেই শিক্ষক যাঁর শিক্ষার্থী তাঁর শিক্ষাকে পরবর্তী প্রজন্মের নিকট তুলে ধরার দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করেছে! লেখকের এ প্রচেষ্টা শিক্ষার্থীদের যতটা না পুলকিত করবে, তার চেয়ে বেশি অনুসন্ধিৎসু করে তুলবে। শিক্ষকতা মাত্রই শিল্প বলে অভিহিত করে থাকি আমরা। কিন্তু এ শিল্প যে অচিরেই তার শৈল্পিকতার শেষ চিহ্ন হতেও নিশ্চিহ্ন হতে চলেছে তা আমাদের সামনে বৃষ্টিস্নাত প্রকৃতির মতো স্বচ্ছ। এদেশের তথাকথিত শিক্ষিত সম্প্রদায় এবং শিক্ষাব্যবস্থা এ কার্যক্রমে সক্রিয় অনুঘটকরূপে ভূমিকা রাখছে হাতে হাত ধরে। অন্ধকারের এ ঘোর কাটিয়ে উঠতে লেখক উন্মাদ হয়ে শব্দের বন্যা বইয়ে দিয়েছেন, যেমনভাবে অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ, এপিজে আবদুল কালাম, অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক কিংবা ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ মশাল হাতে রাজপথে নেমেছিলেন আলোকে ছিনিয়ে আনার জন্য।
অন্ধকার যতই হোক, আলো একদিন আসবেই। এ বুলি অকপটে আউড়ে বেড়াই আমরা। কিন্তু মুখের কথা আমাদের মুখেই থেকে যায়। তা না হলে যাঁদের জাতি গঠনের কারিগর দাবি করি তাঁদেরকেই আবার সদর্পে হেয় প্রতিপন্ন করার সাহস আমরা পেতাম না। আজ আমাদের সুশীল সমাজে সভ্যতার আতিশয্যে শিক্ষকেরা অপাংক্তেয় বৈ কিছু নয়। আমাদের আদর্শ শিক্ষকেরা যেখানে শ্রেণিকক্ষে তাঁর শিক্ষার্থীদের সন্তানরূপে পরিগ্রহ করতে বিন্দুমাত্র সংশয় প্রকাশ করেন না, সেখানে আমরা কীসের অধিকারে সেই শিক্ষকদের পালাক্রমে দীনতা ও হীনতার ঝুড়িতে বন্দী করার প্রয়াস চালাই তা প্রশ্নবিদ্ধ। বইটির পাতা উল্টাতে যেয়ে চোখ কোথাও আটকে গিয়েছে কিনা তা দ্বিধাহীনচিত্তে বলতে না পারলেও, মন যে আমাদের এই অসুস্থ মানসিকতার বেড়াজালে আটকা পড়ে গিয়েছে তা পরখ করে বলতে পারি।
আমাদের বাবা-মায়েরা সন্তানদের বড় মানুষ তৈরি করার দায়িত্ব অর্পণ করেন শিক্ষকদের উপর। "আদর্শ শিক্ষক"-এর প্রতিটি পৃষ্ঠায় চোখ নোঙর করে বিবেকের দর্পণে একটি প্রশ্ন স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর রূপ লাভ করেছে, যাঁদের উপর চোখ বন্ধ করে দেশের ভবিষ্যৎ নির্মাণের গুরুদায়িত্ব ন্যস্ত করছি দিনশেষে আমরা কেউই তাঁদের মতো হতে চাই না। এ বৈশিষ্ট্যই হয়তো আজ আমাদের শ্রেষ্ঠত্বের আসনে আসীন করেছে। একারণে বইটি যতটা শিক্ষার্থীদের মর্ম স্পর্শ করবে, ততটাই অভিভাবকদের ভাবসমুদ্রে ভাসাবে। লেখকের লেখনীর প্রাবল্যে একজন শিক্ষার্থীর চোখেও যদি আদর্শ শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন লালিত হয় তবে কম কী?
Read More
Was this review helpful to you?
By Jannatul Ava,
30 Dec 2020
Verified Purchase
বুক রিভিউ বইয়ের নামঃআদর্শ শিক্ষক লেখকঃমেহেদী আরিফ প্রকাশকঃপ্রগ্রেসিভ পাবলিশার্স মূল্যঃ২০০ টাকা মাত্র
মা-বাবা ও আত্নীয় -স্বজনের আদর-স্নেহ অতিক্রম করে যখন বিদ্যা অর্জনের পথে মানুষ পা দেয় তখন সর্বপ্রথম যে মহৎ মানবের সান্নিধ্য লাভ করে তিনি হলেন শিক্ষক|শিক্ষক হলেন মানুষ তৈরির কারিগর|তাই প্রতিটি মানুষের জীবনে শিক্ষক হলেন দ্বিতীয় জন্মদাতা|তিনি বাঁচতে এবং বাঁচাতে শেখান|প্রতিটি মানুষ তার জীবনে অসংখ্য শিক্ষকের সান্নিধ্য লাভ করে|কিন্তু প্রতিটি শিক্ষকই শিক্ষার্থীর মনে সমান জায়গা লাভ করেন না|আর এর কারণও শিক্ষক নিজেই|তিনি যেমন নিজের কাজের দ্বারা শিক্ষার্থীর মনে জায়গা তৈরি করেন ঠিক তেমনি নিজের অবহেলার মধ্য দিয়ে তিনি চলে যান শিক্ষার্থীর থেকে অনেক দূরে|সকল শিক্ষকই শিক্ষক কিন্তু যে শিক্ষক নিজের ছাত্রের মনে অমরত্ব লাভ করতে পারেন তিনিই হলেন একজন আর্দশ শিক্ষক|আর প্রত্যেক শিক্ষার্থীই নিজের জীবনে শিক্ষককে নয় যিনি কেবল বিদ্যা দেবেন বরং এমন শিক্ষককে কামনা করে যিনি বেঁচে থাকার মন্ত্র শেখাবেন,বিদ্যার পাশাপাশি জীবন সম্পর্কে ধারণা দেবেন|'আদর্শ শিক্ষক'বইটিতে লেখক তাই আদর্শ শিক্ষকের বৈশিষ্ট্য,আদর্শ শিক্ষক হওয়ার উপায় এবং নিজের জীবনের বেশ কিছু আদর্শ শিক্ষকের জীবনী ফুটিয়ে তুলেছেন যাতে করে এই বইটি পাঠের মধ্য দিয়ে একজন শিক্ষক নিজের কমতিগুলো কে পূরণ করে হয়ে উঠতে পারেন একজন আদর্শ শিক্ষক|
শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড|এই শিক্ষা যিনি প্রদান করেন তিনি হলেন শিক্ষক|শিক্ষক বিদ্যা প্রদান করেন|কিন্তু কেবল বিদ্যা দ্বারাই একজন মানুষ সারাজীবন অতিবাহিত করতে পারে না|কারণ জীবনে চলার পথে একজন পথপ্রদর্শকের প্রয়োজন হয় যিনি জীবন সম্পর্কে মানুষকে অবগত করান,জীবনকে ভালোবাসতে শেখান|তিনি মানুষকে বাঁচতে এবং অন্যকে বাঁচাতে শেখান|আর যে শিক্ষক এই পথপ্রদর্শকের দায়িত্ব পালন করেন তিনিই হলেন আদর্শ শিক্ষক|
মানুষের জীবনে প্রথম শিক্ষক হলেন মা|মা সন্তানকে জন্ম দেন,লালন-পালন করেন|তাকে কথা বলতে শেখান|প্রতিটি মা একেকজন আদর্শ শিক্ষক |লেখক তা পাঠককে উপলব্ধি করাতে এপিজে আবদুল কালামের 'আমার মা'কবিতাটি নিজের বইটিতে খুব সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন|সাথে লেখক উল্লেখ করেছেন এই বিখ্যাত শিক্ষকের সফল হবার কাহিনী|যা সত্যিই প্রশংসনীয়|তিনি আরও তুলে ধরেছেন আব্রাহাম লিংকনের লেখা সেই বিখ্যাত চিঠি যা তিনি নিজের ছেলের প্রধান শিক্ষকের কাছে লিখেছিলেন|সেই চিঠি আবারও মনে করিয়ে দেয় বাবার চেয়ে উত্তম কোনো শুভাকাঙ্খী কেউ হতে পারে না|
লেখক আরও ফুটিয়ে তুলেছেন নিজের জীবনের বেশ কিছু শিক্ষকের জীবনীর অংশবিশেষ|দুলাল চন্দ্র দাশ,রাবেয়া খাতুন,আকবর আলী প্রমুখ শিক্ষকের আবির্ভাব কীভাবে তার জীবনকে পাল্টে দিয়েছে তা খুব সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক|তাঁরা বর্তমানে বেঁচে না থাকলেও তাঁরা অমরত্ব লাভ করেছেন আদর্শ শিক্ষক হিসেবে লেখকের মনে|আর এর চেয়ে কোনো উত্তম উপহার হয় না একজন শিক্ষকের জন্য|
আদর্শ শিক্ষক হলেন একজন শিক্ষার্থীর জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহার |তাঁরা যদি মারাও যান তবুও তাঁরা অমরত্ব লাভ করেন শিক্ষার্থীর মনে|আর এখানেই একজন শিক্ষকের জীবন প্রকৃত অর্থে সার্থকতা লাভ করে|আদর্শ শিক্ষক কিন্তু সেই ব্যক্তি নন যাকে শিক্ষার্থীরা জন্তুর মতো ভয় করবে আবার তিনি এমন ব্যক্তিও নন যাকে শিক্ষার্থীরা কোনো পাত্তাই দিবে না|বরং একজন আদর্শ শিক্ষক হবেন রাগ,শাসন,ভালোবাসাপ্রভৃতি গুণের সমন্বয়ে গঠিত একজন আদর্শ মানুষ|তিনি শিক্ষার্থীর চোখে চোখ রেখে কথা বলবেন,তাকে বুঝতে চেষ্টা করবেন এবং তার পাশে থেকে তাকে সাহায্য করার চেষ্টা করবেন|লেখক নিজের বইটিতে এই বিষয়গুলো খুব সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছেন|তিনি বেশ কিছু বইয়ের নামও উল্লেখ করেছেন নিজের বইতে যা পাঠের মাধ্যমে একজন শিক্ষক যথেষ্ট সহায়তাপ্রাপ্ত হবেন আদর্শ শিক্ষক হয়ে উঠতে|সর্বোপরি,প্রতিটি শিক্ষার্থীই কামনা করে নিজের জীবনে একজন আদর্শ শিক্ষককে|তাই প্রত্যেক শিক্ষকের চেষ্টা করা উচিত নিজেকে একজন আদর্শ শিক্ষক হিসেবে তৈরি করা|কেননা একটি সুন্দর দেশ ও জাতি গঠনে আদর্শ শিক্ষকের ভূমিকা সর্বাপেক্ষা বেশি|কারণ,তাঁরাই তো জাতি গঠন করেন আর জাতিই গঠন করে দেশকে|আর আদর্শ শিক্ষক হওয়ার জন্য 'আদর্শ শিক্ষক'বইটি অত্যন্ত সহায়ক বলে আমি মনে করি|
ভুল-ত্রুটি মার্জনীয়| জান্নাতুল ফেরদৌস আভা
Read More
Was this review helpful to you?
By Ramisha Rahman ,
11 Oct 2020
Verified Purchase
বইয়ের নাম: আদর্শ শিক্ষক লেখক: মেহেদী আরিফ প্রকাশনী: প্রগ্রেসিভ পাবলিশার্স
গ্রন্থালোচনা:
অশান্ত মনকে শান্ত করতে, অন্ধ বিবেককে দৃষ্টি দিতে, ব্যর্থ প্রচেষ্টাকে মান দিতে, ভাটা পড়ে যাওয়া ইচ্ছার নদীতে বান ডাকাতে, ভগ্ন বিস্কুটের মতো চূর্ণ হওয়া ইচ্ছাকে ইস্পাতসদৃশ করতে, জালি লাউয়ের ডগার মতো নুইয়ে পড়া শোককে শক্তিতে পরিণত করতে বইয়ের বিকল্প নেই। জ্ঞান বা বিদ্যা হলো খোলা আকাশ। জ্ঞানের আলো সঠিকভাবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের হতে তুলে দেওয়ার দায়িত্ব নিয়ে থাকেন একজন শিক্ষক। একজন শিক্ষকের অনেক দায়িত্ব। নিজেদের ভিতরে উত্তম গুণাবলী জমা করার পাশাপাশি জ্ঞান অর্জন এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে জ্ঞান বিতরণের দায়িত্বও তাদেরই। আর শিক্ষার্থীরা বিশ্বাস করে যে, শিক্ষকরা কখনো ভুল করতে পারেন না। শিক্ষকদের ভুল অনেক সময় শিক্ষার্থীদের চোখ এড়িয়ে যায়। এটা তাদের তীব্র আবেগ, শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। শিক্ষার্থীদের মনে আঠার মতো লেগে থাকে ভয়, যা তাদের মস্তিষ্ক ক্ষয় করে দেয়। একজন শিক্ষক তার শিক্ষার্থীদের দুর্বলতা মোকাবেলায় সাহায্য করেন। তাই শিক্ষার্থীদের কাছে শিক্ষক হলেন আশীর্বাদস্বরূপ।
একজন আদর্শ শিক্ষক সদা হাস্যোজ্জ্বল এক প্রতিমূর্তি। ডোপামিন নামক এক ধরনের হরমোন রয়েছে যা মানুষের ভিতরকার হাসি কান্নার উদ্রেক সৃষ্টিকারী এক নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। আদর্শ শিক্ষকের মুখে হাসি এমনভাবে খেলা করে যেন মনে হয় ডোপামিন হরমোন সদা তার মধ্যে জাগ্রত। শিক্ষক শিক্ষার্থীদের চোখে চোখ রেখে কথা বলেন, ফলে মনে হয় তিনি সবাইকে দেখছেন। চোখে চোখ রেখে কথা বলার মধ্যে দিয়ে একজন শিক্ষকের সার্বজনীনতা প্রকাশ পায়। ফলে শিক্ষার্থীরা অমনোযোগী হওয়ার ফুরসত পায় না। এছাড়া একজন আদর্শ শিক্ষক পাঠ্য নিয়ম সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখেন এবং কৌশলের মাধ্যমে তা শিক্ষার্থীদেরকে বুঝিয়ে দেন।
মেহেদী আরিফ এর লেখা "আদর্শ শিক্ষক" বইটিতে লেখক একজন আদর্শ শিক্ষকের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য, মর্যাদা এবং গুরুত্ব সম্পর্কে তুলে ধরেছেন। বইটিতে বিভিন্ন খ্যাতনামা ব্যক্তিদের সেরা ও সার্থক হয়ে উঠার পেছনে একজন আদর্শ শিক্ষকের ভূমিকা সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে। আবার লেখক এখানে বিভিন্ন আদর্শবান ও কালজয়ী শিক্ষক সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন। একজন আদর্শ শিক্ষক হতে চাইলে এই বইটি তার জন্য অনেক উপকারী হবে। এছাড়া যেকোনো শিক্ষার্থী বইটি পড়লে তাদের মধ্যেও একজন আদর্শ শিক্ষক হয়ে ওঠার অনুপ্রেরণা জাগবে এবং শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত হবে। আদর্শ শিক্ষকের গুরুত্ব এবং গুণাবলী এবং তাদের গল্প নিয়ে লেখা মেহেদী আরিফ এর এই বইটি অতুলনীয়।
নামঃ রামিশা রহমান শৈলী শ্রেণিঃ দশম স্কুলঃ মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ কৃতজ্ঞতাঃ মেহেদী আরিফ।
Read More
Was this review helpful to you?
By Saiful islam,
10 Apr 2019
Verified Purchase
বুক রিভিউ
বইয়ের নাম: আদর্শ শিক্ষক লেখক: মেহেদী আরিফ ধরন: গবেষণাধর্মী প্রকাশকাল: ২০১৯ বইমেলা
শিক্ষকদের নিয়ে আমাদের ছোটবেলা থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত বেশ মজার- মজার গল্প আছে। আমরা স্যারদের বিভিন্ন নামে ডাকতাম। আমাদের যেমন প্রিয় শিক্ষক রয়েছে তেমনি অপছন্দের শিক্ষকও রয়েছে। আমরা পছন্দ-অপছন্দ নির্ধারণ করতাম স্যারদের ক্লাস করে। যে স্যারের ক্লাস বেশি ভাল লাগতো তিনি আমাদের প্রিয় হয়ে যেতেন!
অপ্রিয় সত্য কথা হলো- আমরা যে সমাজে বাস করি, সেখানে শিক্ষকদের মূল্যায়ন নিতান্তই কম। একজন শিক্ষক যেন দিন শেষে ঝরে পড়া এক ড্যাফোডিল। একজন আদর্শ শিক্ষক একজন ক্লান্ত সৈনিক, যে জীবন খুব কষ্টের, বেদনার। অথচ একজন আদর্শ শিক্ষক শিক্ষার্থীদের ভিতরকার নিভু-নিভু বাতিকে জ্বালিয়ে দেন। স্বপ্ন দেখাতে শেখান, স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথ বাতলে দেন। দিবা-নিশির পার্থক্য করতে শেখান, হার স্বীকার করতে শেখান, জিততে শেখান, জিতিয়ে দিতে শেখান। একজন আদর্শ শিক্ষক জ্ঞান সাধনায় মশগুল সাধক। এই কথাগুলো লেখক সুনিপুণ দক্ষতায় শব্দের সৌন্দর্য দিয়ে বইয়ের প্রতিটি পৃষ্ঠায় সাজিয়েছেন।
১২৬ পৃষ্ঠার এই বইটিতে একটি লাইন আমার অসম্ভব ভালো লেগেছে- "শিক্ষকতা পেশা নয়, শিক্ষকতা বহু সাধনায় অর্জিত ভালোবাসার এক শিল্প। '' আসলেই তো! বর্তমান সময়ে কতজন শিক্ষকতাকে শিল্প হিসেবে গ্রহণ করেছে? হাতে গোনা কয়েকজন বাদে খুঁজে পাওয়া মুশকিল!
এই বইটিতে লেখক তার প্রাথমিক, মাধ্যমিক, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের মোট ১৩ জন শিক্ষকদের নিয়ে লিখেছেন। লেখকের চোখে তাঁরা হলেন আদর্শ শিক্ষক। তাদের ক্লাসের পড়ানোর স্টাইল, ব্যক্তিত্ব, ছাত্রদের সত্যিকারের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে গড়ে তোলার যে চেষ্টা, শিক্ষকরা যে মহান তা তুলে ধরেছেন। এই লেখাগুলো পড়লে সহজে অনুমান করা সম্ভব আদর্শ শিক্ষকরা কেমন হয়ে থাকে!
এছাড়াও ড.মুহম্মদ শহিদুল্লাহ, অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক, আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ, মুজাফফর আহমদ চৌধুরীদের মতো দেশের সেরা শিক্ষদের নিয়েও লিখেছেন লেখক।
একজন বিশ্বখ্যাত শিক্ষক এপিজে আবদুল কালামের- এপিজি হয়ে উঠার গল্পও লেখক অল্প কথায় পাঠকের সামনে উপস্থাপন করেছেন।
প্রকাশক:প্রগ্রেসিভ পাবলিশার্স মলাট মূল্য: ২০০ টাকা অনলাইন পরিবেশক: রকমারি. কম
পৃথিবীর সকল শিক্ষদের প্রতি শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা রইল। ~সাইফুল ইসলাম
Read More
Was this review helpful to you?
By Mahbubur rahman,
09 Apr 2019
Verified Purchase
বুক রিভিউ:
বই: আদর্শ শিক্ষক লেখক: মেহেদী আরিফ ধরন: গবেষণাধর্মী, দিকনির্দেশনামূলক গায়ের মূল্য: ২০০ হ্রাসকৃত মূল্য: ১৫০ প্রকাশনী: প্রগ্রেসিভ পাবলিশার্স পরিবেশক: সূচীপত্র
একজন আদর্শ শিক্ষক কর্তৃক লিখিত "আদর্শ শিক্ষক" বইটি। বইটির কলেবর ছোট কিন্তু তাৎপর্যে কিংবা গুরুত্বের বিবেচনায় ছোট বলা যাবে না। একটি বই আমাকে দেশের সেরা সব শিক্ষকদের সাথে একত্রে বৈঠকের সুযোগ করে দিয়েছে। আমরা জানি শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। এ মেরুদন্ড বিনির্মানের শিল্পী হচ্ছেন শিক্ষক। শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ না করে নেশা হিসেবে কি করে গ্রহণ করা যায় তার মোক্ষম মন্ত্র বইটিতে উপস্থিত। অসাধারণ বর্ণনা ও বিনীত উপস্থাপনা আমাকে বিমোহিত করেছে। শিক্ষকতা পেশা নিয়ে সমাজের ভাবনা, লেখকের ভাবনা, শিক্ষার গুরুত্ব, শিক্ষকের গুরুত্ব, শিক্ষকদের করণীয় কি, শিক্ষকদের দায়বদ্ধতা ইত্যাদি সকল কিছু অনুধাবন করার জন্য একটি আকরগ্রন্থ হলো "আর্দশ শিক্ষক।" বইটিতে খুব সুচারুভাবে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকের মেলবন্ধন ফুটিয়ে তোলা হয়েছে যা অসাধারণ। শিক্ষা সমাজ ও বাস্তবতার নিরিখে শিক্ষকের মর্যাদা কতটুকু এটি বুঝতে বইটি পড়তে হবে বলে মনে করি। যে শিক্ষার্থী প্রকৃত, নির্মোহ শিক্ষকদের সান্নিধ্য পাননি তিনি বড় হয়ে কী করে সেরা শিক্ষক হবেন? আমাদের বর্তমান প্রেক্ষাপট খুবই করুণ। শিক্ষা, শিক্ষকতা এখন অনেকের কাছে ধনবান, বিত্তবান হওয়ার ব্যবসায়িক মাধ্যম। কেউ বা উপায়ান্তর না পেয়ে এই পেশা গ্রহণ করেছে। বড় মানুষ হতে হলে বড় মানুষের সান্নিধ্যে যেতে হয়। অন্তহীন আকাশ দেখতে হলে খোলা জায়গায় যেতে হবে। আবদ্ধ ঘর থেকে ছোট জানালার ফাঁক গলে সুবিশাল অন্তরীক্ষের স্বাদ আস্বাদন করা যাবে না। তাই খোলা ময়দানে এসে উদার দৃষ্টিভঙ্গীসম্পন্ন, পুষ্পসজ্জিত অন্তরধারক সকল শিক্ষকদের সাথে মোলাকাত করতে হলে "আর্দশ শিক্ষক" বইটি পড়তেই হবে।
শিক্ষক সম্পর্কে উইলিয়াম আর্থার ওয়ার্ডের বিশ্লেষণ সত্যিই যথার্থ। তিনি বলেন, "একজন সাধারণ শিক্ষক বক্তৃতা করেন, একজন ভাল শিক্ষক বিশ্লেষণ করেন, একজন উত্তম শিক্ষক প্রদর্শন করেন, একজন শ্রেষ্ঠ শিক্ষক অনুপ্রাণিত করেন।"
উপসংহারে এটুকুই বলবো "আদর্শ শিক্ষক" বইটি সকলকে অনুপ্রাণিত করবে। দেশ সেরা সব শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের মিছিলের স্লোগান আমি শুনেছি এই বই থেকেই।
রিভিউ লেখক: মাহবুবুর রাহমান
Read More
Was this review helpful to you?
By Sayma Bhuiyan Shikha,
02 Jun 2021
Verified Purchase
লেখক মেহেদী আরিফের 'আদর্শ শিক্ষক' বইটি সকল শিক্ষার্থী,শিক্ষক ও অভিভাবকদের পড়া প্রয়োজন বলে মনে হলো।শিক্ষা,শিক্ষার্থী,শিক্ষক, অভিভাবক এই বিষয়গুলোর সাথে একটি দেশের কল্যাণ ওতপ্রোতভাবে জড়িত সেটা সবারই জানা। জাতি ও সভ্যতার সেরা কারিগর হলেন শিক্ষক। একজন আদর্শ শিক্ষক একজন ক্লান্ত সৈনিক ও মহৎ হৃদয়ের অধিকারী যিনি সমাজের সবচেয়ে বড় নির্মাতা। অনেক শিক্ষকেরা হাজার কষ্টের মধ্যেও হাসিমুখে ক্লাস নেয় শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন দেখাতে কিংবা স্বপ্ন পূরণে অনুপ্রেরণা জোগাতে। একজন আদর্শ শিক্ষক শিক্ষার্থীদের ভিতরকার নিভু নিভু বাতিকে জ্বালিয়ে দেন,স্বপ্ন দেখতে শেখান,স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথ বাতলে দেন,সত্যকে সত্য ও মিথ্যাকে মিথ্যা বলতে শিখান,দিবা নিশির প্রার্থক্য, জিততে ও জিতিয়ে দিতে শেখান। একজন আদর্শ শিক্ষক জ্ঞান সাধনায় মশগুল একজন সাধক,যিনি অর্থ সম্পদ ও প্রাচুর্যতার যুপকাষ্ঠে বলি নন,যিনি ঔদার্যে ও ভাবগাম্ভীর্যের প্রাবল্যে অতুলনীয়,যিনি নীতি ও বোধের ধারক ও বাহক,যিনি সূর্য হয়ে আলো দেন,বটবৃক্ষ হয়ে ছায়া দেন,আশীর্বাদ হয়ে পুষ্পবৃষ্টির মতো বর্ষিত হন; যার এক চোখ শাসন ও অপর চোখ স্নেহের ছবি আঁকে। বইটির শেষ অংশে ৩০ টি বিখ্যাত অসাধারণ বইয়ের নাম দেয়া আছে।আরও আছে পৃথিবীর বিখ্যাত ও কালজয়ী কয়েকজন শিক্ষকের বিষয়ে শিক্ষণীয় সারাংশ। বইটি অমর একুশে বইমেলা ২০১৯ এ প্রথম প্রকাশিত হয় প্রগ্রেসিভ পাবলিশার্সে।