বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ থেকে নেওয়া পরীবানু দেখতে ঠিক পরীর মতো নয়। গরিবের মেয়ে। গায়ের রঙ শ্যামলা। সারল্যভরা মুখ। মিষ্টি কিশোরী। লেখাপড়ায় খুব আগ্রহ। কিন্তু লেখাপড়া তার হয় না বাবার দারিদ্র্য এবং খামখেয়ালির কারণে। স্কুল ছেড়ে কৈশোরেই পরীবানুকে হতে হয় কাজের মেয়ে। তার মায়েরও সেই একই পরিচয় - কাজের বুয়া। কিন্তু ঠিক এমনটি হবার কথা ছিল না। পরীবানুর জীবনের সব সম্ভাবনার দুয়ার এভাবে বন্ধ হয়ে যাবার কথা ছিল না। কথা ছিল না তার দুচোখের স্বপ্ন এভাবে ঝরে যাবারও। মোহিনী মিলের শ্রমিক জুব্বার মিস্ত্রির সংসারে একদিন এতটা অভাব ছিল না। মিলের চাকা বন্ধ হবার কারণে প্রায় সব শ্রমিকপরিবার অচল হয়ে পড়ে, ছেলেমেয়ের স্বপ্ন ভেঙে যায়, পায়ের তলে শক্ত মাটি পায় না দাঁড়াবার। মিলের শ্রমিক, পেশা বদলে হয়ে যায় রেলের মুটে কিংবা রিক্সাঅলা। শ্রমিকপরিবারের শিশুকিশোর সন্তানদের চোখ থেকে সরে যায় স্বপ্ন এবং সম্ভাবনার ছায়া। তাদেরই কেউ কেউ ধীরে ধীরে হয়ে যায় বিপথগামী। পরীবানু বেরিয়ে আসতে চায় এমনই এক বৃত্ত থেকে। বস্তিবাসী ছিন্নমূল স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা আবার তাকে স্বপ্ন দেখায়। বাল্যবিয়ের অভিশপ্ত থাবা থেকে তারা সবাই উদ্ধার করে পরীবানুকে। পরীবানুর চারিপাশের বৈরী বৃত্ত বেয়ে বেরিয়ে আসার গল্প নিয়েই রচিত হয়েছে রফিকুর রশীদের কিশোর উপন্যাস 'স্কুলে যাবার গল্প'।
রফিকুর রশীদ। জন্ম ১৯৫৭ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর, মেহেরপুর। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষাজীবন শেষে ১৯৮৩ সালে সিলেটের এক চা-বাগানে অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার হিসেবে শুরু হয় তাঁর কর্মজীবন। মন টেকে না সেখানে। যােগ দেন কলেজ। শিক্ষকতায়। দীর্ঘ ৩৩ বছর শিক্ষকতা শেষে মেহেরপুরের গাংনী কলেজ থেকে তিনি সম্প্রতি অবসর গ্রহণ করেন। নিভৃতে কাব্যচর্চা দিয়ে শুরু হলেও সত্তর দশকের শেষভাগে পত্র-পত্রিকায় গল্প লিখেই তাঁর আত্মপ্রকাশ সাহিত্যজগতে। দেশের উল্লেখযােগ্য প্রায় সব কাগজে বিরামহীন লিখে চলেছেন গল্প আর গল্প, সঙ্গে উপন্যাসও। ছােট-বড় সকলের জন্যে। নির্মোহ চরিত্র চিত্রণ এবং বর্ণনার বিশ্বস্ততাই কথাশিল্পী হিসেবে তাকে এনে দিয়েছে বিশিষ্টতা। ছােটদের জন্য লেখা গল্প এবং উপন্যাসে রফিকুর রশীদ এনেছেন বিপুল বিষয় বৈচিত্র্য। প্রিয় প্রসঙ্গ মুক্তিযুদ্ধ তাে আছেই, বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ও কৌতূহলে ভরা বিচিত্র বর্ণে বর্ণিল ছােটদের নিজস্ব ভুবনের আলােকিত উপস্থাপন ঘটে চলেছে তার লেখা শিশু ও কিশাের সাহিত্যে। স্বপ্নজয়ের কথাশিল্পী রফিকুর রশীদ এরই মাঝে অর্জন করেছেন এম. নূরুল কাদের শিশুসাহিত্য পুরস্কার, অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার, অধ্যাপক মােহাম্মদ খালেদ শিশু সাহিত্য পুরস্কার, চন্দ্রাবতী একাডেমি শিশু ও সাহিত্য সম্মাননা, কাজী কাদের নওয়াজ জন্মশতবর্ষ সম্মাননা, আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, অরণি সাহিত্য পুরস্কার, কাঙাল হরিনাথ পদক ও পুরস্কার, বগুড়া লেখকচক্র স্বীকৃতি ও সম্মাননা, সাতক্ষীরা সাহিত্য একাডেমি সম্মাননা, সিকান্দার আবু জাফর সাহিত্য পুরস্কার, দ্বিজেন্দ্র পুরস্কার (ভরত) প্রভৃতি।