প্রেক্ষিত ইতিহাসের এক যুগসন্ধিকালে জন্ম বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের। ব্রিটিশ শাসিত পূর্ব বাংলায় দ্রুত জনসংখ্যাবৃদ্ধির বিপরীতে কৃষির অতি নিম্ন উৎপাদনশীলতার কারণে সারা বছর খাদ্যঘাটতি লেগেই থাকতাে। তার ওপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধাক্কা, কুইট ইন্ডিয়া' আন্দোলনের উত্তাপ, উইনস্টন চার্চিলের ভারত বিমুখ যুদ্ধবাদী কূটচাল, জাপানের কাছে বার্মার পতন এবং সেদেশ থেকে চাল আমদানি বন্ধ, যুদ্ধকালীন নিয়ন্ত্রিত খাদ্য চলাচল, খাদ্য মজুতদারি ও উপর্যুপরি খরা বন্যার কারণে ফসলহানি। সব মিলে ১৯৪৩ সালে বাংলার মহাদুর্ভিক্ষে প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষ না খেয়ে প্রাণ হারায়। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, ভঙ্গুর অর্থনীতি ও পূর্ব বাংলার প্রতি পাকিস্তানি বৈষম্যমূলক আচরণ খাদ্য পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তােলে। ব্রিটিশ শাসনমুক্ত পূর্ব বাংলাকে দুর্ভিক্ষের দুষ্টচক্র থেকে মুক্ত করা ছিল তৎকালীন রাজনীতির প্রধান চ্যালেঞ্জ। পাকিস্তান সরকারও এ অঞ্চলের অনাহার দারিদ্র্য দূর করার পদক্ষেপ নেয়ার পরিবর্তে বরং নিপীড়নমূলক কর্ডন’ প্রথা চালু করেছিল। যার ফলে, এক জেলার ধান অন্য জেলায় চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরােপ করা হলাে। যেমন- খুলনা ও বরিশাল থেকে ঢাকা ও ফরিদপুরে এবং সিলেট থেকে কুমিল্লায় ধান আসতে বাধা দেওয়া হতাে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও এ অপব্যবস্থার বিরুদ্ধে ফরিদপুর, ঢাকা ও কুমিল্লা জেলার ধানকাটা শ্রমিক, যাদেরকে দাওয়াল’ বলা হতাে, তাদের পক্ষে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। পাকিস্তান শাসিত পূর্ব বাংলায় প্রাকৃতিক দুর্যোগে কোন না কোন জেলায় বন্যা খরায় ফসলের ক্ষয়ক্ষতি ও দুর্ভিক্ষাবস্থা লেগেই থাকতাে।