এ বইয়ে চারটি ভিন্ন স্বাদের সায়েন্স ফিকশান গল্প রয়েছে। শুধু সায়েন্স ফিকশান প্রেমীরাই নন, যে কেউ গল্পগুলি পড়ে মজা পাবেন। পরিযায়ী গল্পটিতে ভার্সিটির মেধাবী কিন্তু সাদাসিধা একজন ছাত্র হাকালুকি হাওরে যায়। এক বিশেষ প্রজাতির অতিথি পাখির উপরে শাহীন তার উদ্ভাবিত সস্তা প্রযুক্তি দিয়ে পরীক্ষা চালায়। এর ফলে সে যা দেখে এবং জানতে পারে, তা কল্পনারও অতীত। ওদিকে পরাশক্তিরা এই। ব্যাপারটি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছিলাে । তাদের অনুরােধে শাহীনকে হেলিকপ্টারে তুলে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়, জেরা করা হয়। গল্পের শুরু এবং শেষ শাহীনকে দিয়ে হলেও গল্পটি মঙ্গোলিয়া, চীন, তিব্বত, হিমালয় এবং ক্যালিফোর্নিয়ার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে খুব চিত্তাকর্ষক ভাবে বিচরণ করে। এতে গভীর রহস্যের সৃষ্টি হয়, তারপর ক্রমান্বয়ে সমাধানও বেরিয়ে আসে। ‘অপর স্মৃতি’ গল্পে গ্রামের পাগল তৈয়ব আলী হঠাৎ বিশুদ্ধ ইংরেজিতে কথা বলা শুরু করে। বৃষ্টি হবে। কী না, খুব নিখুঁত ভাবে বলতে পারে। দূর থেকে। না দেখে মানুষ চিনতে পারে। মনে হতে পারে এমন পাগল কতই আছে। সব কিছু যে ঠিক বলছে। তাও হয় তাে নয়। কিন্তু সেখান থেকেই গল্পের মােড় ঘুরে দারুণ একটা সায়েন্স ফিকশান হয়ে যায়। ‘ক্রেমার’ এবং ‘নিষিদ্ধ সীমানা প্রথম থেকেই সায়েন্স ফিকশান বলে বুঝতে পারা যায়। এ দুই গল্পে শ্বাসরুদ্ধকর ঘটনাবলী ঘটতে থাকে এবং পরিশেষে সবকিছুর সমাধান বা ব্যাখ্যা মেলে। এক নিঃশ্বাসে পড়ার মতাে চার গল্পের একটি চমৎকার বই ‘পরিযায়ী।
মোস্তফা তানিম লেখালেখি করছেন দুই দশক ধরে। বাংলাদেশের যে স্বল্প সংখ্যক লেখক সায়েন্স ফিকশন লিখে পাঠকের মনোযোগ কেড়েছেন, মোস্তফা তানিম তাদেরই একজন। লেখক-তীর্থভূমি হিসেবে খ্যাত ''কচি কাঁচার আসর'' দিয়ে তার লেখক জীবনের সূচনা। নব্বই দশকে পত্রিকার জন্য দুই হাতে লিখেছেন। লেখালেখির মতো তার পেশাও ভীষণভাবেই বিজ্ঞানকেন্দ্রিক। বুয়েটে লেখাপড়ার পাট চুকিয়ে তিনি পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। এরপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস এ এন্ড এম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি একটি মার্কিন আই,টি, কোম্পানির ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কর্মরত আছেন। বিজ্ঞান তার একটা প্রিয় বিষয়, তার লেখায় সেটার স্পষ্ট ছাপ পড়েছে। বিজ্ঞানের সাথে কলার বিরোধ আছে। মোস্তফা তানিম অসামান্য দক্ষতায় সেই বিরোধ সামলান তো বটেই, মাঝে মাঝে দু'টোকে বেশ দারুনভাবে সমন্বয় করেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ন'টি।