যে-মুখ অন্ধকারের মতাে শীতল, চোখদুটি রিক্ত হ্রদের মতাে কৃপণ-করুণ, তাকে তাের মায়ের হাতে ছুঁয়ে ফিরিয়ে নিতে বলি। এ-মাঠ আর নয়, ধানের নাড়ায় বিধে কাতর হলাে পা। সেবনে শাকের শরীর মাড়িয়ে মাড়িয়ে মাড়িয়ে আমাকে তুই আনলি কেন, ফিরিয়ে নে। পচা ধানের গন্ধ, শ্যাওলার গন্ধ, ডুবাে জলে তেচোকো মাছের আঁশগন্ধ সব আমার অন্ধকার অনুভবের ঘরে সারি-সারি তাের ভাঁড়ারের নুনমশলার পাত্র হলাে, মা। আমি যখন অনঙ্গ অন্ধকারের হাত দেখি না, দেখি না, তখন তাের জরায় ভর করে এ আমায় কোথায় নিয়ে এলি। আমি কখনাে অনঙ্গ অন্ধকারের হাত দেখি না, দেখি না। কোমল বাতাস এলে ভাবি, কাছেই সমুদ্র। তুই তাের জরার হাতে কঠিন বাঁধন দিস। অর্থ হয়, আমার যা-কিছু আছে তার অন্ধকার নিয়ে নাইতে নামলে সমুদ্র সরে যাবে শীতল সরে যাবে মৃত্যু সরে যাবে। তবে হয়তাে মৃত্যু প্রসব করেছিস জীবনের ভুলে। অন্ধকার আছি, অন্ধকার থাকবাে, বা অন্ধকার হবাে। আমাকে তুই আনলি কেন, ফিরিয়ে নে। কারনেশন প্রভেদ জটিল, অবগুষ্ঠিত সড়কে চাঁদের আলাে। তাকে দিয়ে অই ফুলটি কারনেশন। কতদিন তার মুখও দেখিনি, চেনা পদপাত পিছল অলক কালাে -ফুলের কথা বােলাে না কাউকে বুড়া মালঞ্চ। বী সকাল ফিরে এনেছে কে,কে মঞ্জরীর অস্বচ্ছ আলােছায়ে বনে ঘুরছে স্থলিত দ্রিা, কেউ-বা দুপুরে । উষ্ণ বায়ুর বিলাসে ঝাঁ ঝাঁ গায়ে গায়ে বর দুপুর ফুরােয় সন্ধ্যা শুধু জলরেখা শুধু জলরেখা।
জন্ম: নভেম্বর ২৫, ১৯৩৪ সালে জীবনানন্দ-উত্তর যুগের বাংলা সাহিত্যের একজন প্রধান আধুনিক কবি। বাঙালি-ভারতীয় এই কবি বিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে বিশেষভাবে পরিচিত এবং আলোচিত ছিলেন। শক্তি চট্টোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গ এর জয়নগর - মজিলপুরের দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম বামানাথ চট্টোপাধ্যায়। কলকাতার কাশিমবাজার স্কুলে পড়তেন। দারিদ্রের কারণে তিনি স্নাতক পাঠ অর্ধসমাপ্ত রেখে প্রেসিডেন্সি কলেজ ছাড়েন এবং সাহিত্যকে জীবিকা করার উদ্দেশ্যে উপন্যাস লেখা আরম্ভ করেন। কলেজজীবনে রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি। প্রথম উপন্যাস লেখেন কুয়োতলা। কিন্তু কলেজ - জীবনের বন্ধু সমীর রায়চৌধুরীর সঙ্গে তাঁর বনাঞ্চল - কুটির চাইবাসায় আড়াই বছর থাকার সময়ে শক্তি চট্টোপাধ্যায় একজন সফল লিরিকাল কবিতে পরিণত হন। একই দিনে বেশ কয়েকটি কবিতা লিখে ফেলার অভ্যাস গড়ে ফেলেন তিনি। শক্তি নিজের কবিতাকে বলতেন পদ্য। ভারবি প্রকাশনায় কাজ করার সূত্রে তার শ্রেষ্ঠ কবিতার সিরিজ বের হয়। পঞ্চাশের দশকে কবিদের মুখপত্র কৃত্তিবাস পত্রিকার অন্যতম কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন। তার উপন্যাস অবনী বাড়ি আছো? দাঁড়াবার জায়গা ইত্যাদি প্রকাশিত হয়। রূপচাঁদ পক্ষী ছদ্মনামে অনেক ফিচার লিখেছেন। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'হে প্রেম, হে নৈশব্দ' ১৯৬১ সালে প্রকাশিত হয় দেবকুমার বসুর চেষ্টায়। ১৯৭০ - ১৯৯৪ আনন্দবাজার পত্রিকায় চাকরি করেছেন। ১৯৬১ সালের নভেম্বরে ইশতাহার প্রকাশের মাধ্যমে যে চারজন কবিকে হাংরি আন্দোলন - এর জনক মনে করা হয় তাঁদের মধ্যে শক্তি চট্টোপাধ্যায় অন্যতম । সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার সহ তিনি একাধিক পুরস্কারে সন্মানিত । তিনি মার্চ ২৩, ১৯৯৫ সালে মৃত্যুবরণ করেন।