গ্রামীণ মানুষের প্রতি তীব্র মমত্ববোধ,স্মৃতিকাতরতা এবং সূক্ষ্ণ রাজনৈতিক অনুসঙ্গের পটে রচিত কামরুল ইসলামের কবিতা আমাদের পৌছে দেয় সেই বোধে,যেখানে মানবিক শব্দটিই পেয়ে যায় নতুন অভিজ্ঞান।তাঁর ভাষা মনোজাগতিক,অবচেতনের গূঢ় গহন থেকে উঠে আসে,কিন্তু তা শুধুই বিমূর্ত প্রতিভাস হয়ে থাকে না।নিজের বলা বিষয়কে তিনি চমৎকারভাবে আভাসিত করে দেন।তাঁর কবিতাপাঠের অভিজ্ঞতাই অন্যরকম। কামরুল ইসলামের কবিতার স্বাদ ও সৌগন্ধ,শব্দ ও চিত্রকল্পানুষঙ্গের স্বতন্ত্র বৈশিষ্টের জন্য তাঁকে কোনো নির্দিষ্ট দশকের তকমায় বন্দি করা যায় না,যদিও তিনি নব্বুইয়ের দশকে পাকাপোক্তভাবে কবিতার জগতে প্রবেশ করেন।তাঁর কাব্যভাষা ও বিন্যাসের প্রকৌশলে যেমন সমকালীন,অর্থাৎ তাঁর তাঁর সময়ের চিহ্নবাহি,আবার একইসঙ্গে দশক ও কালের বৃত্ত ভেঙ্গে তিনি যাত্রা করেছেন সামনের দিকে।কেননা,নির্মম ধংস্বযজ্ঞের পরেও প্রকৃতি যেমন অনিঃশেষ,তেমনই মানুষ ও মানবিকতার আকাঙ্খাও চিরস্তন।কামরুল ইসলামের কবিতা প্রকৃতিলগ্ন মানুষ-এই দ্বৈতায়নের সমবায়ী স্বরতরঙ্গ।শব্দ নিয়ে খেলা,বাক্যের ভাঙচুর,উপমা-উৎপ্রেক্ষা-চিত্রেকল্পের অভূতপূর্ব আহরণ তাঁকে নিঃসন্দেহে আধুনিক বাংলা কবিতায় বিশিষ্ট করেছে।সহজ কথায় বলা যেতে পারে,কবি কামরুল ইসলাম সহজ কিংবা সহজাত বা জনপ্রিয় ধারার কবি নন।এমন একজন কবিকে পাঠের জন্য পাঠকেরও থাকতে হয় পর্যাপ্ত প্রস্ততি।কবি কামরুল ইসলামের ‘নির্বাচিত কবিতা’র কবিতাগুলো অগ্রসর ও প্রস্তুত পাঠকের নিত্যপাঠ্য হয়ে উঠুক-এমনটাই প্রত্যাশা।