আত্নপ্রচারবিমুখতার কারণে বিনয় মজুমদার একটু বেশিই আড়ালে ছিলেন।অথচ,এই কবিই এখন কিংবদন্তি;রবীন্দ্র-জীবনানন্দ পরবর্তী কবিদের কাছে প্রভাব বিস্তারকারীও বটে,মতান্তরে বলা যায় একচ্ছত্র।বাংলা ভাষাভাষীদের গহীনে তিনি এমন এক পরিসর অধিকার করেছেন যে,তাঁকে নিয়ে বাঙালি কবিতাপাঠকের মুগ্ধতা এবং আগ্রহও অশেষ। ভারতের সেরা প্রকৌশল ছাত্রদের একজন হয়েও, বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও;হাতছানি দেওয়া দামি চাকরি,বিলাসবহুল জীবন সবকিছুকে অগ্রাহ্য করে,চারপাশের হট্টগোল,প্রতিযোগিতার ঘোড়দৌড় থেকে গুটিয়ে নিয়ে যিনি নিজেকে নিযোগ করেছিলেন একনিষ্ঠ আরাধনায়;প্রকৃত প্রস্তাবে এ কারণেই তিনি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন কাব্যের পলল মহাজগৎ। বিনয় কেবল কবি নন,শুধু গণিতবিদও নন-বহুমাত্রিকতায় প্রসারণশীল তাঁর চিন্তার শাখা-প্রশাখা।তিনি উঁচুস্তরের কবিতা-তাত্ত্বিক বা ব্যাপক অর্থে সাহিত্যের একনিষ্ঠ শিল্প-মতালোচক।লিখেছেন দিনপুঞ্জি ,গল্প,কাব্যতত্ত্ব,ছন্দতত্ত্ব ও গান;করেছেন অনুবাদ।যা থেকে আমারা পেয়েছি গণিত,কবিতা,দর্শন ও বিজ্ঞানের এক উদ্ভাসিত সহাবস্থান।এই আয়োজনটি বিনয়ের পূর্ব প্রজন্ম,সমকালীন ও উত্তর প্রজন্মের কবি-লেখকদেরই একনিষ্ঠ কবিতাপাঠ ও তার অনুধাবন।এসবেরই আকর পরিচায়ক এই ‘একটি উজ্জ্বল মাছ:বিনয় মজুমদার’।দৃঢ় আস্থা,কবি বিনয় মজুমদার আর ব্যক্তি বিনয়কে বুঝতে প্রবেশন হয়ে কাজ করবে এ গ্রন্থ ।
বিনয় মজুমদার বা মংটু (জন্ম : ১৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৩৪- মৃত্যু : ১১ ডিসেম্বর, ২০০৬) একজন বিশিষ্ট ভারতীয় বাঙালি কবি ও ইঞ্জিনিয়ার। কবি বিনয় মজুমদার মায়ানমারের মিকটিলা জেলার টোডো নামক শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম বিপিনবিহারী মজুমদার, মায়ের নাম বিনোদিনী। তারা ছিলেন ছয় ভাই-বোন এবং তিনি ছিলেন সবার ছোট। তার ডাক নাম মংটু। "ফিরে এসো চাকা" ছিল তার অতি জনপ্রিয় কাব্যগ্রন্থ। ১৯৪২ সালে তাকে বাংলাদেশের একটি স্কুলে ভর্তি করা হয়। ১৯৪৪ সালে তিনি প্রথম বিভাগে ছাত্রবৃত্তি পরীক্ষায় পাশ করেন। ১৯৪৬ সালে তাকে বৌলতলী উচ্চবিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণীতে ভর্তি করা হয়। ১৯৪৮ সালে দেশভাগের সময় তারা সপরিবারে ভারতের কলকাতায় চলে আসেন। এখানে, ১৯৪৯ সালের জানুয়ারি মাসে তাকে কক্রিক রো-রতে অবস্থিত মেট্রপলিটন ইনস্টিটিউট (বউবাজার ব্রাঞ্চ)-এ নবম শ্রেণিতে ভর্তি করা হয়। প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হবার পরে, ১৯৫১ সালে আইএসসি (গণিত) পড়ার জন্য প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। ১৯৫৭ সালে তিনি ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়ে পাশ করেন। শোনা যায়, তার পাওয়া নম্বর আজও কেউ নাকি ভাঙতে পারেন নি। ১৯৫৮ সালের জানুয়ারি মাসে, অর্থাৎ ছাত্রজীবন সমাপ্ত হবার কয়েকমাস পরেই এনবিএ থেকে প্রকাশিত হয় "অতীতের পৃথিবী" নামক একটি অনুবাদ গ্রন্থ। এই বছরেই গ্রন্থজগৎ থেকে বের হয় তার প্রথম কাব্য গ্রন্থ 'নক্ষত্রের আলোয়'। তার মৃত্যুর কয়েক বছর আগে তাকে দুটি বড় পুরস্কার দেওয়া হয়, রবীন্দ্র পুরস্কার এবং একাডেমি পুরস্কার। তিনি দীর্ঘ রোগভোগের পরে ২০০৬ সালে মৃত্যুবরণ করেন।