সক্রেটিস কীভাবে আলােচনা-সমালােচনার স্বাধীনতার সামাজিক মূল্যের প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। মিল্টন কীভাবে উপলব্ধি করেছিলেন জ্ঞানের অগ্রগতির জন্য এরকম স্বাধীনতার অপরিহার্যতা। মানুষ যুক্তিবাদী প্রাণি। কিন্তু যদি তার যুক্তি প্রকাশ করার স্বাধীনতা হরণ করা হয়, তাহলে সে প্রাকৃতিক যুক্তির কোনাে মূল্য নেই। সভ্যতার শুরু থেকেই যুক্তিবাদ ও আলােচনা-সমালােচনার স্বাধীনতার সঙ্গে শাসকশ্রেণির বৈরী সম্পর্ক ইতিহাসকে দীর্ঘকাল অন্ধকারাচ্ছন্ন করে রেখেছে। এই বইতে সেই সংঘর্ষের যে সংক্ষিপ্ত রূপরেখা তুলে ধরা হয়েছে। তা আলাে আর অন্ধকারের মধ্যে একটা যুদ্ধ ছাড়া। আর কিছু নয়। যুক্তিবাদ প্রতিষ্ঠায় যারা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তারা কর্তৃত্বের অন্ধ ও বিদ্বেষপূর্ণ বাহকদের হাতে যেভাবে নির্যাতিত হয়েছিলেন, আমরা যদি সেদিকে পিছন ফিরে তাকাই তাহলে ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। সভ্যতার ইতিহাসের কাছে যদি শিক্ষণীয় কিছু থেকে থাকে, তা হলাে মানবিক ও নৈতিক অগ্রযাত্রার একটাই সর্বোচ্চ শর্ত রয়েছে, সেটা হচ্ছে চিন্তা ও আলােচনা-সমালােচনার পূর্ণ স্বাধীনতা। এই স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠাকে আধুনিক সভ্যতার সবচেয়ে মূল্যবান অর্জন বলে বিবেচনা করা যেতে পারে। আর সামাজিক প্রগতির প্রধান শর্ত হিসেবে একে অপরিহার্য গণ্য করা উচিত। বাংলাদেশের তথাকথিত গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রার সাথে চিন্তা ও আলােচনা-সমালােচনার ধারাটি ক্রমশ সংকুচিত হয়ে আসছে। কিন্তু বিউরি তার এ বইটিতে খুব নিবিড়ভাবে তুলে ধরেছেন, কোনাে | দেশের সার্বিক অগ্রগতির জন্য চিন্তার স্বাধীনতা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। বাংলা ভাষায় এটির সহজ ভাষ্য রচনা করেছেন চিন্তাবিদ শহিদুল ইসলাম।
বাংলাদেশের যে মুষ্টিমেয় বুদ্ধিজীবী জীবননিষ্ঠ মননের সদনুশীলনে আত্মনিয়োজিত : শহিদুল ইসলাম নিরলস চর্চার মধ্য দিয়ে নিজেকে সেই গোষ্টীর অন্যতম কর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে নিতে পেরেছেন। গত দুই দশক ধরে তিনি লিখছেন। সমাজনীতি, রাষ্ট্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, বিজ্ঞানমনস্কতা, শিক্ষা, শিক্ষাব্যবস্থা ইত্যাদি নানা বিষয় নিয়ে অনবরত লিখে চলেছেন বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়। সমাজের অনাচার, কুসংস্কার, অন্যায়, অবক্ষয় লেখককে পীড়া দেয়। তিনি স্বপ্ন দেখেন বৈষম্যহীন এক সমাজব্যবস্থার, অভিন্ন শিক্ষাব্যবস্থারÑ যেখানে মানুষ পাবে মানুষের অধিকার। সাম্প্রদায়িকতা যে মানবতার শত্র“, রাজনীতিতে যে ধর্মের স্থান থাকা উচিত নয়Ñ এ বিষয়গুলো নিয়ে তাঁর গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ ছাপা হয়েছে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়। তিনি বিজ্ঞানের দর্শন নিয়েও গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করেন। মানুষ নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের চর্চা করে চলেছে। তারই ফলে কোনো স্থান কখনো বিজ্ঞনের আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে, আবার কোথাও অজ্ঞতার গভীর অরণ্য বিরাজ করছে। কেন এই উত্থান-পতন? শহিদুল ইসলাম এই বইতে এর অন্তর্নিহিত কারণ খোঁজ করেছেন। শহিদুল ইসলামের জন্ম ১৯৪০ সালে ১০ ফেব্রুয়ারি। তিনি ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফলিত রসায়ন বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষকদের একজন ছিলেন। ২০০০-২০০৩ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নবপ্রতিষ্ঠিত শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে প্রতিষ্টাতা পরিচালক ছিলেন।