মাঝরাত। স্কুলে যাওয়ার পথে নতুন লম্বা বিল্ডিংটার কাছে আসতেই চিৎকার শুনতে পেল রাফাত। থমকে দাঁড়াল সে। বড় পাকুড়গাছটার গা ঘেঁষে একটা লোক দাঁড়িয়ে আছেন। হাত উঁচু করে কী যেন বলছেন তিনি একা একা। মাঝরাতে লোকটা কী বলছেন? সম্মোহিতের মতো লোকটার কাছে গিয়ে দাঁড়াল রাফাত। হাত উঁচু করা লোকটা কথা থামিয়ে তার দিকে তাকালেন। শব্দ করে হেসে উঠে বললেন, ‘আমার নাম নবাব সিরাজউদ্দৌলা। তুমি আমাকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেও ডাকতে পারো। এটাও যদি পছন্দ না হয় তাহলে অমিতাভ বচ্চন বলতে পারো আমাকে।’ লোকটা আরও একটু হেসে বললেন, ‘তা তোমার নাম কী ফ্রেন্ড?’ ‘রাফাত।’ ভয় ভয় গলায় নাম বলল রাফাত। ‘খুব সুন্দর নাম। রাফাত ফতেহ আলী খান নামে একজন ভালো গায়ক আছেন। ভালো গান গায় পাগলা।’ লোকটা মাথা একটু নিচু করলেন রাফাতের দিকে, ‘তা তুমি কি গান গাইতে পারো, রাফাত?’ ‘না।’ ‘কিন্তু আমি পারি।’ সোজা দাঁড়ালেন লোকটা আবার, ‘দাঁড়াও তোমাকে একটা শোনাই-একটা সময় তোরে আমার সবই ভাবিতাম, তোরে মন পিঞ্জরে যতন করে আগলাইয়া রাখতাম। ও মাইয়ারে, মাইয়ারে তুই, অপরাধী রে...।’ এটুকু গেয়েই লোকটা বেশ আনন্দ নিয়ে বললেন, ‘কী, কেমন গাইলাম? সুন্দর না?’
বর্তমান সময়ের তরুণ বাংলাদেশী লেখকদের তালিকা তৈরি করতে গেলে অনায়েসেই প্রথম সারিতে জায়গা করে নেবেন কথাসাহিত্যিক সুমন্ত আসলাম। তাঁর জন্ম সিরাজগঞ্জ জেলায়, মা রওশনারা পারুল ও বাবা মরহুম সোহরাব আলী তালুকদার। স্ত্রী ফারজানা ঊর্মি আর মেয়ে সুমর্মীকে নিয়ে গড়ে উঠেছে এই লেখকের সংসার। সিরাজগঞ্জে বাড়ির পারিবারিক লাইব্রেরিতেই বই পড়ার হাতেখড়ি তার। সেই সূত্রে ছোটবেলা থেকেই বই পড়ার অভ্যাস গড়ে উঠলেও লেখালেখির শুরু ঢাকায় আসার পরে। ছোটগল্পের বই ‘স্বপ্নবেড়ি’ তাঁর প্রকাশিত প্রথম বই, যা প্রকাশনায় ছিল ‘সময় প্রকাশন’। লেখালেখির পাশাপাশি বর্তমানে তিনি কাজ করছেন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষিত করে তুলতে, চাইল্ড ড্রিম সোসাইটি নামের একটি সংগঠনে। এছাড়াও জড়িয়ে আছেন সাংবাদিকতা পেশার সাথে। পাঠক জনপ্রিয়তার দিক থেকে বিবেচনা করতে গেলে সুমন্ত আসলামের সেরা বই হিসেবে নাম উঠে আসবে ‘হয়তো কেউ এসেছিল’, ‘জানি না কখন’ বা ‘কে তুমি’ অথবা ‘যদি কখনো’ এর মতো জনপ্রিয় সব বই এর নাম । এছাড়াও ‘নীল এই যে আমি!’, ‘আমি আছি কাছাকাছি’, ‘অ্যালিয়ান’, ‘জানালার ওপাশে’, ‘রোল নাম্বার শূন্য’, ‘বীভৎস’, ‘কেউ একজন আসবে বলে’, ‘জিনিয়াস জিনিয়ান’, ‘কোনো কোনো একলা রাত এমন’, ‘তবুও তোমায় আমি’, ‘অনুভব’, ‘মিস্টার ৪২০’, ‘স্পর্শের বাইরে’, ‘ভালো থেকো ভালোবেসে’, ‘ডাঁটি ভাঙা চশমা রাফিদ’, ‘অযান্ত্রিক’, ‘জ্যোৎস্না নিমন্ত্রণ’, ‘প্রিয়ব্রতর ব্যক্তিগত পাপ’, ‘জ্যোৎস্না বিলাস’, ‘মহাকিপ্পন’, ‘তপুর চালাকি’, ‘আশ্চর্য তুমিও!’, ‘হাফ সার্কেল’, ‘কঞ্জুস’, ‘মাঝরাতে সে যখন একা’, ‘আই এম গুড ডু’, ‘আই সে দ্য সান’, ‘তুমি ছুঁয়ে যাও বৃষ্টি তবু’সহ আরো অনেক বই রয়েছে লেখক সুমন্ত আসলাম এর বই সমগ্র এর তালিকায়। এছাড়াও সিরিজ আকারে লিখেছেন ‘বাউন্ডুলে’ ও ‘পাঁচ গোয়েন্দা’র মতো জনপ্রিয় কিছু বই। বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের কাছে, এমনকি একুশে বই মেলাতেও সুমন্ত আসলাম এর বই সমূহ এর ব্যাপক চাহিদা লক্ষ্য করা যায়। ভাষাগত সারল্য ও সাবলীলতা তাঁর জনপ্রিয়তার অন্যতম বড় কারণ। মানুষকে কেন্দ্র করে তাকে আবর্তিত করে যা যা আছে তা-ই মূলত তার লেখার বিষয়বস্তু।