"নির্বাচিত কিশোর রহস্য" বইয়ের পেছনের কভারে লেখা:তাঁরা লিখেছেন ছড়া, কবিতা, রূপকথা, ঐতিহাসিক, সামাজিক-গল্প, হাসি-মজার গল্প: কিন্তু অভাব ছিল রহস্যরােমাঞ্চসিক্ত কিশােরসাহিত্যের, যাকে বলা যেতে পারে অ্যাডভেঞ্চার কাহিনির। এই অভাব বােধ করেছিলেন অনেকেই। সেই স্থান পূর্ণ করলেন হেমেন্দ্রকুমার রায়। আর তিনি তা এমন ভাবে করলেন, তা হয়ে রইল বাংলাসাহিত্যের চিরকালীন সম্পদ। লেখক শিবরাম চক্রবর্তী একেবারে নির্দ্বিধায় জানাচ্ছেন, “বাংলা শিশু-কিশােরদের সাহিত্যকে সেই আদ্যিকালের বেঙ্গমা-বেঙ্গমীর জগত থেকে আধুনিক পর্যায়ে নিয়ে এসেছিলেন হেমেন্দ্রকুমারই। তারপরে আমরা সবাই তাঁরই অনুবর্তী।” হেমেন্দ্রকুমার তার রহস্যউপন্যাসে যেভাবে বিজ্ঞানের অবতারণা করেছেন তা একেবারে বিস্ময়কর। হেমেন্দ্রকুমারের দুটি জিনিসের ওপর আত্মবিশ্বাস ছিল প্রবল, নিজের লিখনশৈলী আর পাঠকদের গ্রহণক্ষমতা। নিজের লেখনীশক্তির ওপর এবং পাঠকমণ্ডলীর ওপর কতটা আত্মবিশ্বাস থাকলে এত বড় কাজ করা যেতে পারে? আর কোনরকম আজগুবি কল্পনা নয়, বাস্তবিক ভিত্তির ওপরে রচিত এক একটি কল্পকাহিনি। কী পরিমাণ নিষ্ঠা আর চর্চা থাকলে সেই সময়ে; অর্থাৎ সেই চল্লিশের দশকে, যখন ইন্টারনেট, কেবল টিভি, অন্যান্য মাধ্যম একেবারেই সুলভ নয়, তখন শুধু গ্রন্থ ও পত্রিকা পাঠ করে, এর তাৎপর্য অনুধাবন করে তার মােক্ষম প্রয়ােগ করে কীভাবে তা সাহিত্যে দেখানাে যায় তিনি তা করে দেখিয়েছেন। অবাক হতে হয় যে, তিনি প্রথাগত ভাবে বিজ্ঞান পড়েননি, অথচ কী আশ্চর্য রকমের কৌতূহল ছিল তার অপরাধ বিজ্ঞানে। যে কোন অগ্রপথিকই তাঁর পরবর্তী পথযাত্রীদের যাত্রা সুগম করে দিয়ে যান। হেমেন্দ্রকুমারও ব্যতিক্রম নন। তবে কিশােরকাহিনিতে তার সত্যিকার প্রভাব যদি কারাে ওপর পড়ে থাকে, তিনি সত্যজিৎ রায়। বিভিন্ন বিষয়ে কৌতূহল তার, প্যারাসাইকোলজি, নিউমারােলজি, সঙ্গীত, বাদ্যযন্ত্র, ইতিহাস, ভূগােল, বাংলা সাহিত্য! তার রসবােধও সাংঘাতিক। তার কয়েকটি গল্প ও উপন্যাস চলচ্চিত্রায়িত হয়েছে। তিনি বড়দের জন্যও লিখেছেন। তিনি ভাল ছবি আঁকতে পারতেন। হেমেন্দ্রকুমার। রায়ের প্রতিটি কিশাের রচনাই বাংলা সাহিত্যের ধ্রুপদী রচনা। হিসেবে আজ স্বীকৃত। তার কিশােরসাহিত্যের অসাধারণ এই সংকলনটি নিঃসন্দেহে বর্তমান প্রজন্মকে নতুনভাবে বাংলারহস্য আর অ্যাডভেঞ্চার-সাহিত্য পাঠের প্রতি উদ্বুদ্ধ করবে।
জন্ম ১৮৮৮, কলকাতা। সাহিত্যচর্চার শুরু মাত্র ১৪ বছর বয়সে। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। খেয়ালি জীবন, ঘুরে বেড়িয়েছেন সাহিত্য সংস্কৃতির নানান স্রোতে। ‘ভারতী’ গােষ্ঠীর সাহিত্যিক হিসেবেই প্রথম পরিচয়। ‘বসুধা’ পত্রিকায় প্রথম গল্প প্রকাশিত হয়। বহু গান লিখেছেন, নাচ শেখাতেন, নাটকও লিখেছেন। সম্পাদনা করেছেন নাটক বিষয়ক সাময়িকপত্র ‘নাচঘর’। পরবর্তী সময়ে সম্পাদক ছিলেন ছােটদের বিখ্যাত পত্রিকা রংমশাল-এরও। কিশাের সাহিত্যের এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক। লিখেছেন অজস্র বই। বয়স্ক পাঠকদের জন্য কাব্য-অনুবাদে ‘ওমর খৈয়ামের রুবায়ত’ বা ছােটদের জন্য ‘যকের ধন, ‘দেড়শাে খােকার কাণ্ড’, ‘ঝড়ের যাত্রী’, ‘কিং কং’ সমান আদৃত। বিখ্যাত প্রবন্ধের বই ‘বাংলা রঙ্গালয় ও শিশিরকুমার। জীবনাবসান ১৮ এপ্রিল ১৯৬৩।